ঢাকা: প্রস্তাবিত ফিন্যান্স কোম্পানি আইন (এফসিএ)-২০১৪ আইনের কয়েকটি ধারার বিরোধীতা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূলত ফিন্যান্স কোম্পানিগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে আইনটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় তার বিরোধীতা করেছে বিএসইসি।
সম্প্রতি প্রস্তাবিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের যেসব ধারা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে তা চিহ্নিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে নিজস্ব মতামত দিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি প্রধানত আর্থিক কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন প্রক্রিয়া, শেয়ারধারণ এবং তদারকির ধারার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাবিত ‘ফিন্যান্স কোম্পানি আইন-২০১৪’-এর একটি ধারা বলে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানেরও নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে সিকিউরিটিজ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে মত দিয়েছে বিএসইসি।
প্রস্তাবিত এই আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিকিউরিটিজ হাউসগুলোর পরিদর্শনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আওতায় আনতে চায়। পাশাপাশি এসব কোম্পানির কার্যক্রমের ওপর নির্দেশনা জারি করার ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে এমন কয়েকটি ধারার বিরোধিতা করেছে বিএসইসি। বর্তমানে সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ হাউসগুলোর নিবন্ধন, পরিদর্শন এবং নিয়ন্ত্রণ বিএসইসির অধীনে রয়েছে। এমনকি মার্চেন্ট ব্যাংকারের প্রধান নির্বাহী নিয়োগ ও তার যোগ্যতা, শাস্তি বিএসইসি নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রস্তাবিত আইনের ২০-এর ২(৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বা অন্য যে কোনো আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত হইয়া থাকুক না কেন, ধারা ৪৮ এর অধীনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেভাবে পরিদর্শন করা হয় এবং ধারা ৫১ এর অধীনে উহাকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী কোম্পানি পরিদর্শন করতে এবং এ সকল কোম্পানিকে নির্দেশ দিতে পারবে। ’
এ ধারাকে অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় মনে করছে বিএসইসি। এতে করে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সহাযোগী কোম্পানি বিএইসির অধীনে নিবন্ধিত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা কার্যপরিধির আওতাবহির্ভূত। সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬-এর অধীনে মার্চেন্ট ব্যাংক বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসা করে থাকে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিনিয়োগ ব্যাংককে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় বলে মত দিয়েছে বিএসইসি।
খসড়া আইনে অর্থায়ন ব্যবসার সংজ্ঞায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতিতে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসা, উদ্যোগ/প্রচেষ্টা মূলধন সরবরাহ করা, সিকিউরিটাইজেশন ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আইনের মতামতে বিএসইসি উল্লেখ করেছে যে, এসব কার্যক্রম বিএসইসির আইন ও বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ৩২ ধারা আলোকে বিনিয়োগ ব্যাংক ব্যবসা ও উদ্যোগ/প্রচেষ্টা মূলধন সরবরাহ কার্যক্রম মূলত মার্চেন্ট ব্যাংকারের, যা সিকিউরিটিজ আইনের মাধ্যমে বিএসইসির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এছাড়া বিএসইসি তাদের মতামতে উল্লেখ করেছে, ফিন্যান্স কোম্পানি উদ্যোক্তা/প্রচেষ্টা মূলধন (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল) ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে কখনো সম্পৃক্ত হতে পারে না।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোয় ঋণসীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করে বিএসইসি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার সহযোগী কোম্পানিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ উদ্দেশ্য ছাড়াও কোম্পানির পরিচালন ব্যয়, মূলধনী ব্যয়কে সহায়তা করতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে আইন দ্বারা সহযোগী কোম্পানি ঋণকে সামগ্রিক অর্থে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা যৌক্তিক নয় বলে মনে করে বিএসইসি।
আইনে বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- করপোরেট ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, কোনো ব্যক্তির পক্ষে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং সরকার বা অন্য যে কোনো করপোরেশন কর্তৃক ইস্যুকৃত শেয়ার, স্টক, বন্ড ডিবেঞ্চার বা ডিবেঞ্চার স্টক কিংবা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ অথবা পুনর্বিনিয়োগ এবং অন্যান্য বাজারজাতকরণযোগ্য সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়।
এদিকে বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রমে বর্ণিত সব কার্যক্রমই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর বর্ণিত কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং বিষয়টি ভিন্নভাবে বিবেচনার সুপারিশ করেছে বিএসইসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৪