ঢাকা: সমাপ্ত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বেশি দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অধিকাংশ ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত মোট ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে বাড়িয়েছে ১৪টি ব্যাংক, কমিয়েছে ৮টি ব্যাংক এবং লভ্যাংশের পরিবর্তন হয়নি ৮টি ব্যাংকের।
এক বছরের (২০১৩-২০১৪) ব্যবধানে লভ্যাংশ বেশি দিয়েছে- সিটি ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ২০ শতাংশ শেয়ার, আইএফসি ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ শেয়ার, ন্যাশনাল ব্যাংক ২০১৩ সালে ৬ শতাংশ নগদ এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার, পূবালী ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার, রূপালী ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ শেয়ার, ইউসিবিএল ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ২০ শতাংশ নগদ, সাউথইস্ট ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশ নগদ এবং ২০১৪ সালে ১৬ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ শেয়ার, ঢাকা ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৬ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ১৭ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ শেয়ার, এনসিসি ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ৬ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ শেয়ার।
এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২০১৩ সালে ৭ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ৮ শতাংশ নগদ ও ১২ শতাংশ শেয়ার, এক্সিম ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ১১ শতাংশ শেয়ার, যমুনা ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৪ শতাংশ নগদ এবং ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ শেয়ার, ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ শেয়ার, ট্রাস্ট ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ১২ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সমাপ্ত অর্থবছরে অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বেশি দিতে পেরেছে। তবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমার মধ্যে আনার বাধ্যবাধকতা থাকায় অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে। আর ব্যাংকের শেয়ার দাম কমায় বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।
লভ্যাংশ কম দিয়েছে- ইসলামী ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৭ শতাংশ শেয়ার ও ৮ শতাংশ নগদ এবং ২০১৪ সালে ৮ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ শেয়ার, আল-আরাফ ইসলামী ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে সাড়ে ১৩ শতাংশ শেয়ার, প্রাইম ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার ও ১০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৪ সালে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ, এসআইবিএল ব্যাংক ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ১২ শতাংশ নগদ, স্টান্ডার্ড ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৭ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ নগদ, ওয়ান ব্যাংক ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ৯ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ শেয়ার।
এছাড়া শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২০১৩ সালে ২০ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার, ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
লভ্যাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে- এবি ব্যাংক ২০১৩ সালে ১২ শতাংশ শেয়ার এবং ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ শেয়ার, উত্তরা ব্যাংক উভয় বছরে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শেয়ার, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ২০১৩ ও ২০১৪ সালে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি, ইস্টার্ন ব্যাংক ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ২০ শতাংশ করে নগদ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক উভয় বছরে ৪০ শতাংশ করে নগদ।
এছাড়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক উভয় বছরে ১০ শতাংশ করে শেয়ার, ব্যাংক এশিয়া উভয় বছরে ১০ শতাংশ করে শেয়ার, প্রিমিয়ার ব্যাংক ২০১৩ এবং ২০১৪ উভয় বছরে ১০ শতাংশ করে শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতে, প্রায় আড়াই বছরের অব্যাহত মন্দা বাজারের ধকল কাটিয়ে উঠতে তারা লভ্যাংশের দিকে তাকিয়ে আছেন। পুরোটা না হলেও কিছুটা লোকসান কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা তাদের। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে কোম্পানিগুলোতে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে না। এতে আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা করা। আর মুনাফার অন্যতম পথ হচ্ছে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড। ব্যাংকগুলোর শেয়ারে যে পরিমাণ লোকসান আছে, তাতে লভ্যাংশের মাধ্যমে মুনাফার চিন্তা না করে বিনিয়োগকারীরা লোকসান কাটিয়ে ওঠার চিন্তা করছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মাদ এ হাফিজ বলেন, তালিকাভূক্ত অধিকাংশ ব্যাংক সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও তারা লভ্যাংশ বাড়াবে বলে আশা করছি। এ মুহূর্তে বাজার স্থিতিশীল করতে ব্যাংকগুলোর এ ধরনের অগ্রগতি ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৪