ঢাকা: ঋণের দায় বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চলেছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড (ডব্লিউএমএসএল)। এরই মধ্যে কোম্পানিটি বাজার থেকে ১৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে।
জানা যায়, পাহাড়সম ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোম্পানিটি। তবে এখনও তা পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই ঋণের বোঝা বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপাতে নানা ফন্দিফিকির করে অবশেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে কোম্পানিটি।
তবে পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করার পরও কোম্পানির দায় থাকবে আরও প্রায় চারশ’ কোটি টাকার। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে থাকবে। এ বিপুল পরিমাণ দায়ের সুদও টানতে হবে বিনিয়োগকারীদেরই।
ফলে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কোনো ভাবেই লাভবান হবেন না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) অর্থ ব্যয়ের নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রসপেক্টাসের ওপর নির্ভর করেই আইপিও’র অনুমোদন দিচ্ছে। আর এ সুযোগে কোম্পানিগুলো আইপিও’র অর্থ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িক পরিধি না বাড়িয়ে শুধুমাত্র ঋণ পরিশোধ করছে। এতে কোম্পানির সাময়িক সুবিধা হলেও কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিধি ও মুনাফা বাড়ছে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন লভ্যাংশ থেকে।
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক আবু আহমদ বলেন, বিএসইসি আইপিও’র অর্থ ব্যয় নিয়ে আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেনি। বিএসইসি প্রসপেক্টাস অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে আইপিও’র অনুমোদন দেয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো আদৌ প্রসপেক্টাস অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা হয় না।
আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য বিএসইসি’র একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করেন এ বাজার বিশ্লেষক।
এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন ফিশার্স শিপইয়ার্ড কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এইচএম আশরাফউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিয়েছি। যার মধ্যে স্বল্প মেয়াদী ঋণ পরিশোধের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ পরিশোধ হবে যখন জাহাজ হস্তান্তর করা হবে। কারণ যে সময়ের জন্য ঋণ নেওয়া আমরা সে সময়ের মধ্যে জাহাজ হস্তান্তর করতে পারবো। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের বোঝা বিনিয়োগকারীদের বহন করতে হচ্ছে না।
এছাড়া কোম্পানির সুফলও বিনিয়োগকারীরা ভোগ করতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির সিএফও।
জানা যায়, পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি ১৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করবে। সংগৃহীত অর্থ থেকে ১৩০ কোটি টাকা দায় পরিশোধ করবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। বাকি ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে কোম্পানির সম্প্রসারণ ও আইপিও’র ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
তবে মাত্র ২৭ কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানিটির কী ধরনের সম্প্রসারণ করা হবে তা স্পষ্ট নয় বিনিয়োগকারীদের কাছে। তাদের দাবি যে কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় পাঁচশ’ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে সেখানে মাত্র ২৭ কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানির তেমন কোনো সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের ঋণের দায় বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই এ ধরনের ফন্দিফিকির করছে। তাছাড়া গত দুই বছরে কোম্পানির মুনাফাও অনেক কমেছে।
এ বিষয়ে এইচএম আশরাফউজ্জামানের দাবি, আমাদের কোম্পানি বিদ্যমান রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত পণ্য তৈরি করে বিশ্ববাজারে বিক্রি করছি। এমন তো না যে আমরা নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান কোম্পানির সম্প্রসারণ করবো। অধিকাংশ কাজই আমাদের করা আছে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেগুলোর চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে মাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪