ঢাকা: চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগের একদিনের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণায় কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ শেয়ার নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ কোম্পানির শেয়ার বিক্রির অর্ডার দিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ শেয়ারের কোনো ক্রয় আদেশ ছিল না। এ সময়ে শেয়ারটির বিক্রির আদেশও ক্রমেই বাড়ছিল। এরপর দর কমার সুযোগে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কেনার আদেশ দিতে দেখা যায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দিনের লেনদেনের শুরুতেই ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ার দর ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বা ১ টাকা ১০ পয়সা কমে সর্বনিম্ন ১০ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে আসে। যা শেয়ারটির দরের সর্বনিম্নসীমা। অর্থাৎ একদিনে এ শেয়ারের দর এর নিচে নামতে পারবে না।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেলা পৌনে ১১টায় ১০.৭০ টাকায় ১ কোটি ১০ লাখ ৮২ হাজার শেয়ার বিক্রির আদেশ দিয়েছেন কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া ১০.৮০ টাকায় ২ লাখ ৩ হাজার ৭০০ শেয়ার, ১০.৯০ টাকায় ১৪ হাজার ৭০০, ১১ টাকায় ৮৩ হাজার ৬০০, ১১.১০ টাকায় ৪৫ হাজার ৫০০, ১১.২০ টাকায় ৪৬ হাজার ৬০০, ১১.৩০ টাকায় ৩১ হাজার, ১১.৪০ টাকায় ৩৫ হাজার ৬০০, ১১.৫০ টাকায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ১০০ ও ১১.৬০ টাকায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭০০টি শেয়ার পৃথকভাবে বিক্রির আদেশ দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
পরবর্তীতে দুপুর ১২টায় ১০.৭০ টাকায় ১ কোটি ৩১ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ বিক্রির আদেশ দিয়েছেন কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া ১০.৮০ টাকায় ৪ হাজার শেয়ার, ১০.৯০ টাকায় ১৩ হাজার, ১১ টাকায় ৭১ হাজার, ১১.১০ টাকায় ৫ হাজার ৫০০, ১১.২০ টাকায় ৪১ হাজার ৬০০, ১১.৩০ টাকায় ৩৬ হাজার, ১১.৪০ টাকায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০০, ১১.৫০ টাকায় ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯০০ ও ১১.৬০ টাকায় ৯২ হাজার ৫০০টি শেয়ার পৃথকভাবে বিক্রির আদেশ দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ারটির বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, যে কোনো মূল্যে এ শেয়ার থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিনের শুরুতে যে দরে এই শেয়ার বিক্রির আশা করছিলেন বিনিয়োগকারীরা তা তো পাচ্ছেনই না বরং সর্বনিম্ন দরেও কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না তারা। উপায় না দেখে এখন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সর্বনিম্ন দরেই বিক্রির আদেশ দিচ্ছেন।
আরএন ট্রেডিং ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তিনি ইউনাইটেডের শেয়ার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণায় আমি উদ্বিগ্ন। এছাড়া কোম্পানিটি ঋণগ্রস্ত ও নানা সমস্যায় থাকায় যে কোনো সময় এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই যত টাকায় পারি এখন আমি এ শেয়ার বিক্রি করে দেব। মনিরের মতো অনেক বিনিয়োগকারীই এখন এরকম শঙ্কায় রয়েছেন।
নানা ঘটনায় বিতর্কিত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পরই এ শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ ওঠে। নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক বাড়িয়ে কোম্পানির পরিচালকরা ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেন।
কোম্পানিটির মোট ৫৬ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির পরিচালকদের কাছে আছে মাত্র ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার। অর্থাৎ কোম্পানিটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনাও তোয়াক্কা করছে না।
২০১০ সালে বাজার ধসের পর বিএসইসি কোম্পানির সব পরিচালকদের মোট ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে একই সঙ্গে কোম্পানির পরিচালকদের পৃথক ভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে বলা হয়। ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে পারবে না।
গত মঙ্গলবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পর্ষদ সদস্য ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ পদত্যাগ করেন। এরপর কোম্পানিটির পর্ষদ পুর্নগঠন করে নতুন চেয়ারম্যান করা হয় মোহাম্মদ মাহাতাবুর রহমানকে। আর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন শাহিনুর আলম এবং ভারপ্রাপ্ত চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার করা হয় উইং কমান্ডার (অব.) ফেরদৌস ইমামকে।
পরবর্তীতে বুধবার সন্ধ্যায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ সময় : ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৪/আপডেটেড : ১২৫৭ ঘণ্টা