ঢাকা: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মবিল যমুনা লুব্রিক্যান্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের (এমজেএলবিডি) শেয়ার দর সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার পেছনে মার্চেন্ট ব্যাংক ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকরীরা। গত একমাসে ১০ টাকার এ শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৪৯ টাকা।
এজন্য গত ছয়মাসে মার্চেন্ট ব্যাংক ইসি সিকিউরিটিজ হাউজে মবিল যমুনার শেয়ার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আহবান জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ মবিল যমুনার অর্ধেকের বেশি শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজের কাছে। আর এ শেয়ারের দর যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে তখনই ইসি সিকিউরিটিজ হাউজ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়।
এদিকে, গত দুই মাসে অস্বাভাবিক দর বাড়ায় কোম্পানিটিকে দুইবার নোটিশ দিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) মবিল যমুনাকে নোটিশ দেয়। এর জবাবে প্রতিবারই কোম্পানিটি বলেছে শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্যসংবেদশীল তথ্য নেই।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে লেনদেন হওয়া ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ১৩ কার্যদিবসেই মবিল যমুনার শেয়ার দর বাড়ে। এ সময়ে শেয়ারটির দর ১১১ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৯ টাকা ৬০ পয়সায় উঠে যায়। অথচ গত এপ্রিল মাসে এ শেয়ারের দর ছিল মাত্র ৬৯ টাকা।
গত জুলাইয়ের শেষের দিক থেকে এ শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। এরপর গত ১০ অগস্ট কোম্পানিটিকে অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় সিএসই। এরপরও ক্রমেই বাড়তে থাকে দর। পরবর্তীতে একই কারণে ১৮ আগস্ট নোটিশ দেয় ডিএসই। তবুও থামেনি এর দৌড়। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর ফের নোটিশ দেয় ডিএসই। প্রতিবারই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায় দর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে, বাজারে মবিল যমুনা কোম্পানির মোট ২৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ২০০টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার, সরকারের হাতে রয়েছে ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার।
এদিকে গত আগস্ট মাসে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজের কাছে মবিল যমুনার ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০টি শেয়ার ছিল।
আর গত জুলাই মাসের শেষের দিকে যখন শেয়ারটির দর বেড়ে যায়, ঠিক সেই সময়েই মবিল যমুনার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজ হাউজ ৫০ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। এরপর আবার বাড়তে দেখা যায় কোম্পানিটির শেয়ার দর। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ২৮ তারিখ শেয়ারটির দর যখন ১৬গুণ বাড়ে তখন ফের আরো ৫০ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয় ইসি সিকিউরিটিজ হাউজ। দ্বিতীয় বারের ঘোষণার আগে ইসি সিকিউরিটিজের কাছে ১২ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০টি শেয়ার ছিল।
বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, মবিল যমুনার শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার ঠিক ১৫/২০ দিন পরই ইসি সিকিউরিটিজ হাউজ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ ইসি সিকিউরিটিজ হাউজ কোনো না কোনোভাবে শেয়ারটির দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ এ কোম্পানির অর্ধেকের বেশি শেয়ার রয়েছে তাদের কাছে।
এর আগে একইরকমভাবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালকরাও বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে তাদের শেয়ারের ৭৫ ভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ শেয়ারের দর হঠাৎ করেই এতটা বাড়তে পারে না। গত ৬ মাসে এ শেয়ারের দর প্রায় ১৬গুণ বেড়েছে। অন্যদিকে ইসি সিকিউরিটিজ হাউজ যখনই এ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিচ্ছে তার ১৫/২০ দিন আগে থেকেই এর দর বাড়তে থাকে। তাই গত ছয় মাসে এই মার্চেন্ট ব্যাংকটিতে মবিল যমুনার শেয়ারের লেনদেনের বিষয়টি বিএসইসিকে খতিয়ে দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে ইসি সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি তানজিল চৌধুরী বলেন, মবিল যমুনার সাম্প্রতিক পারফরমেন্স সন্তোষজনক হওয়ার কারণেই এর শেয়ার দর বাড়ছে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে এর ভবিষ্যৎ আরো ভালো। তাই বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে আগ্রহী হওয়ার কারণেও এ শেয়ারের দর বাড়তে পারে।
তানজিল চৌধুরী বলেন, এ শেয়ারের দর বাড়ায় যদি ইসি সিকিউরিটিজ হাউজের কোনো প্রভাব থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি রয়েছে। তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে মবিল যমুনা কোম্পানির প্রধান কর্মকর্তা (সিএফও) টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, শেয়ারের দর কী কারণে বাড়ছে তা আমরা বলতে পারছি না। শেয়ারটির দর বাড়ার পেছনে আমাদের কাছে কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৪