ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

বিনিয়োগকারীদের নামে চাঁদাবাজিতে ‘ভূঁইফোড়’ সংগঠন

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪
বিনিয়োগকারীদের নামে চাঁদাবাজিতে ‘ভূঁইফোড়’ সংগঠন

ঢাকা: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের নাম ভাঙিয়ে গড়ে উঠেছে কতগুলো ‘ভূঁইফোড়’ সংগঠন। এসব সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ার বাজারের আসার পথে থাকা বেশ কয়েকটি কোম্পানি।


 
অন্যদিকে, সংগঠনের কার্যক্রম তেমন চোখে না পড়লেও সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৩০/৪০টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। মূলত সংগঠনের কোনো আয় না থাকলেও চাঁদাবাজির টাকায় তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে দেদারছে।
 
শেয়ারবাজারে বর্তমান সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস, ইনভেস্টরস ফোরাম, আইসিবি ইনভেস্টরস ফোরাম ইত্যাদি।
 
অভিযোগ আছে, এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিনিয়োগকারীদের নাম ভাঙিয়েই বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। এমনকি আইপিওতে আসার প্রক্রিয়াধীন বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যার বড় অংশ নিজেদের পকেটে ভরে বাকিটা দিয়ে সংগঠন ব্যয় বহন করা হয়।
 
আবার নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বা নিজেদের স্বার্থে আঘাত আসলে বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা না করে সংগঠনে মতৈক্য সৃষ্টি হয়। তারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে একে অপরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করে।
 
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি রুহুল আমিন অ্যাপোলো ইস্পাত কোম্পানির কাছে চাঁদা দাবি করেন। যদিও সংগঠনের অন্য নেতারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না।

চাঁদা না দিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার জন্য স্মারকলিপি দেওয়া হবে, মানববন্ধন করা হবে এবং হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়।
 
এ বিষয়ে অ্যাপোলো ইস্পাত কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক শেখ আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যখন বাজারে আসার প্রক্রিয়াধীন ছিলাম তখন বিভিন্ন সংগঠনের নামে মোবাইলে আমাদের হুমকি দেওয়া হতো।

রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি কয়েকবার ফোনে আমাদের আইপিও আটকে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, তাদের সাথে না বসলে বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দিয়ে আইপিও আটকে দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা তাদের প্রশ্রয় দেয়নি।
 
জানা যায়, চাঁদা দাবি করে জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন কোম্পানি কর্তৃপক্ষকেও বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংগঠনের নামে হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়া আইপিওতে আসার প্রক্রিয়াধীন অন্য একটি জাহাজ নির্মাণকারী কোম্পানির কাছেও এ ধরনের চাঁদা দাবি করেছে এসব সংগঠনের কিছু নেতা।
 
জানা যায়, এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে চাঁদা দাবি করে। না দিলে আইপিও অনুমোদন আটকে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আর চাঁদা দিলে দ্রুত আইপিও অনুমোদন করে দেওয়ারও প্রস্তাব দেন তারা।
 
এ বিষয়ে রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই একটি চক্র আমার নামে বিভিন্ন দুর্নাম রটাচ্ছে। আমি কখনও কোনো কোম্পানির কাছে চাঁদা দাবি করিনি। কেউ এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না।
 

জানা যায়, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে টানা পতনের পর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকটি সংগঠন গড়ে ওঠে। তবে সেগুলোর সাংগঠনিক কোনো ভিত্তি ছিল না। পরে ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন দাঁড় করান মিজান-উর-রশিদ।

তিনি সংগঠনের সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে সংগঠনের বিভিন্ন যোগদেন অনেক নতুন মুখ। প্রথমদিকে সংগঠনের সভাপতি মিজান-উর-রশিদের নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় মিছিল মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হতো।
 
কিন্তু পরবর্তীতে নিজেদের স্বার্থের কারণে ও মতের অমিল থাকায় আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম ও রুহুল আমিনের নেতৃত্বে সংগঠনের কযেকজন নেতা আলাদা হয়ে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য’ নামের নতুন সংগঠন দাঁড় করান। পরবর্তীতে এখানেও দুই নেতার স্বার্থ ও মতের অমিল হওয়ায় একে অপরকে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন।

 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ বলেন, আমিই প্রথমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সংগঠন দাঁড় করায়। পরে অনেকে মিডিয়ায় পরিচিতি পাওয়ার জন্য যুক্ত হয়।

তারা সংগঠনের ছায়ায় থেকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাই। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। পরে তারা সংগঠনের ঐক্যকে নষ্ট করার জন্য আলাদা সংগঠন করেছে।
 

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে সংগঠনের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছিল। বিষয়টি জানতে পেরে বিরোধীতা করি। পরে তাদের সাথে মতের মিল না হওয়ায় তারা সংগঠন থেকে বেরিয়ে আরেকটি সংগঠন করে। কিন্তু সেখানেও তারা এক হয়ে থাকতে পারেনি।
 
সংগঠনের ব্যয় বিষয়ে জানতে চাইলে মিজান-উর-রশিদ বলেন, প্রথম দিকে আমরা চাঁদা দিয়ে চলতাম। কিন্তু এখন কেউ চাঁদা না দেওয়ায় অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাজার ভাল হলে আবারও সংগঠনের জন্য অফিস নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।