ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

আইপিও- রাইট ইস্যু

উত্তোলিত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪
উত্তোলিত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ

ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতে পারবে কোম্পানিগুলো। আর এ বিষয়ে শিগগির নির্দেশনা জারি করবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।


 
সম্প্রতি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। ফলে এখন থেকে শুধু ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উদ্দেশে কোনো কোম্পানিকে আইপিও বা রাইট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনে অনুমতি দেওয়া হবে না।
 
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের জুন মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৮টি কোম্পানিকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে মোট ৩ হাজার ৪১ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করেছে। যার ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছে কোম্পানিগুলো।

জানা যায়, আইপিও ও রাইট শেয়ারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের প্রবণতা ঠেকাতে প্রয়োজনে বিদ্যমান পাবলিক ইস্যু বিধিমালা ও রাইট ইস্যু বিধিমালা সংশোধণ করা হতে পারে। কারণ এসব বিধিমালায় উত্তোলিত মূলধন ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ নেই। ফলে কোম্পানিগুলো ঋণের বোঝা খুব সহজেই বিনিয়োগকারীদের ঘারে চাপিয়ে দিতে পারে।

বিএসইসি’র গত কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন উত্তোলনের পর ২ বছরের মধ্যে বা আইপিও প্রক্রিয়ায় উত্তোলিত মূলধনের পুরোটা ব্যবহার শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কোম্পানি রাইট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

একইসঙ্গে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত বা ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) লেনদেন হওয়া কোম্পানি ফের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ওই কোম্পানি অন্তত তিন আর্থিক বছর রাইট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বাড়াতে রাইট শেয়ার বিক্রির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কোম্পানির উদ্যোক্তারা আইনের দুর্বলতাকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন। আর এ প্রবণতা রোধ করতেই আমরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
 
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে যেসব কোম্পানির আইপিও আবেদন জমা রয়েছে সেগুলোর প্রতিটিই উত্তোলিত অর্থে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে। কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ।
 
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বর্তমানে কোম্পানি আইপিওতে আসে মূলত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে। কোম্পানিগুলো ব্যবসা থেকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে সাধারণ মানুষের টাকায় ঋণ শোধ করে নিজেরা দায়মুক্ত হচ্ছে। এ কারণে গত তিন বছর আগেই ডিএসইর পক্ষ থেকে এ ধরনের কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইপিও’র টাকায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা ঠিক না। আইপিও’র মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করার উদ্দেশ্য হলো কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো। যাতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) বাড়ে। কিন্তু ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করলে বিনিয়োগকারীরা চূড়ান্তভাবে কোনও লাভবান হয় না। ’
 
তিনি আরও বলেন, আইপিও’র টাকায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করলে হয়তো বা কোম্পানির মূলধন কাঠামোতে সামান্য পরিবর্তন হয় কিন্তু কোম্পানির উৎপাদনে কোনও পরিবর্তন আসে না। ফলে যারা নতুন করে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করবে তারা তেমন লাভবান হবে না।
 
কোম্পানিগুলোর এ ধরনের প্রবণতা বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ আগের সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে এ ধরনের উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের কোনও কাজে আসে না।

বরং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যায় বলেও মনে করেন মিজানুর রহমান।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।