ঢাকা: চলতি বছর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে এপ্রিল মাসে। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে পুরো মাসই দরপতনের বৃত্তে আটকা ছিলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজার।
এ দরপতনের মধ্যে পুঁজিবাজারের সেরা ত্রিশ কোম্পানির লেনদেনে অবদান ছিল ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত বাকি ৩শ’ কোম্পানির লেনদেন হয়েছে বাকি ৭০ শতাংশ। তবে অন্যান্য মাসে এ কোম্পানিগুলোর অবদান আরো বেশি বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও ভালো। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ সবেচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করা হয়। কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেয়। অর্থাৎ এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তাই এ ত্রিশ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের ভাষায় বলা হয় ‘ব্লু -চিপ স্টক’।
তবে এসব কোম্পানির লেনদেনে অবদান ৩০ শতাংশ হলেও বাজার মূলধন হিসেবে কোম্পানিগুলোর অবদান ৫৪ দশমকি ৭৫ শতাংশ। তাই ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানিগুলোর নামে ডিএসই ও সিএসইতে আলাদা করে ডিএস-৩০ এবং সিএসই-৩০ ইনডেক্স করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি উভয় বাজারে এ সূচক চালু করা হয়।
আলাদা ইনডেক্সের বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন করেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি কোনগুলো। তাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে এ ইনডেক্স করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন, পুঁজিবাজার ভালো বোঝেন না। তাদের সুবিধার্থে কম ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিকে দেখিয়ে দিতে সিএসইতে ২০১৩ সালে আলাদাভাবে এ সূচকটি চালু করা হয়েছে।
ডিএসইতে ডিএস-৩০ ইনডেক্সে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে-এসিআই লিমিটেড (এসিআই), আফতাব অটোমোবাইল (আফতাব অটো), বাটাসু, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো লিমিটেড (বেক্সিকো), ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল), বিএসআরএম স্টিল লিমিটেড (বিএসআরএম স্টিল), বেক্সিমকো ফার্মা, সিটি ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (ডেল্টা লাইফ), গ্রামীণফোন (জিপি), হাইডেলবার্গ সিমেন্ট (হাইডেলবিসিইম), আইডিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বিডি লিমিটেড (ইসলামী ব্যাংক), যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (যমুনা অয়েল), খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল), লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট (লাফার্জ সিইএমএল), মবিল-যমুনা বিডি (এমজেএল), অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ (অলিম্পিক), অরিয়ন ফার্মা, পূবালী ব্যাংক, আরকে সিরামিক লিমিটেড (আরকে সিরামিক), রেনেটা লিমিটেড (রেনেটা), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল (স্কয়ার ফার্মা), সামিট পাওয়ার, তিত্যাস গ্যাস, ইউসিবিএল, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড (ইউনিক হোটেল) এবং ইউনাইটেড এয়ার।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকের পাশাপাশি ডিএসই-৩০ ইনডেক্স চালু হয়। ওই সময় চালু ইনডেক্সে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড, স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড, পিপলস লিজিং ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, কেয়া কসমেটিক্স লিমিটেড, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনাইডেট কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড, সামিট পাওয়ার লিমিটেড এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড।
ওই সময় ডিএসই থেকে বলা হয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই পুঁজিবাজারে সেরা কোম্পানিগুলো নিয়ে আলাদা সূচক নির্ধারণ করা হয়। এ কোম্পানিগুলো নিয়ে আলাদা সূচক নির্ধারণের কারণ হচ্ছে যাতে বিনিয়োগকারীরা সহজেই এসব কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ধরনের আলাদা সূচক নির্ধারণের ফলে বিনিয়োগকারীরা সেরা কোম্পানিগুলোর প্রাইস মুভমেন্ট সহজেই জানতে পারেন।
দেশের অন্যতম পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও ২০০০ সালের ১ জানুয়ারিতে সেরা ২০টি কোম্পানি নিয়ে আলাদা সূচক তৈরি করা হয়। যা ডিএসই-২০ নামে পরিচিত। এর ১২ বছর পর ডিএসই-২০ তালিকা পরিবর্তন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়:১৪০০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৬
এমএফআই/জেডএস