ঢাকা: দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) গঠনের বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ফান্ডটি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারের প্রাণ হলো মিউচ্যুয়াল ফান্ড। পুঁজিবাজার যখন বিপদে পড়ে, বিনিয়োগকারীরা যখন বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে, তখন মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজাকে সাপোর্ট দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেই ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ কারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ডটির বিকল্প হিসেবে ইটিএফ মার্কেটে চালু করা হচ্ছে। আশা করছি নতুন এ ফান্ডটি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় একটি বড় ধরনের রোল প্লে করবে- বললেন সাইফুর রহমান।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইটিএফ বাজার স্থিতিশীলতায় পজেটিভ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ পুঁজিবাজারে এ ফান্ড চালু রয়েছে। আমাদের দেশের আরো আগে থেকে ফান্ডটি চালু করার দরকার ছিলো।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই তার বিকল্প হিসেবে এ ফান্ডটি আরো আগে বাজারে আনা দরকার ছিলো। ফান্ডটি যথাযথ প্রয়োগ করলে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়ে বাজারে আসবে। এতে বাজারে লেনদেন বাড়বে। লেনদেন বাড়লে বাকি অন্যান্য ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়বে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির ৫৭৭তম কমিশন সভায় ফান্ডটির চূড়ান্ত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার প্রধান উদ্দেশ্য পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়ানো। ইটিএফকে কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম হিসেবে চালুর উদ্দেশে কমিশন ইটিএফ রুলস ২০১৬ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত ৫৭৪তম সভায় এ ফান্ডের খসড়া অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি।
জানা গেছে, ইটিএফ বে-মেয়াদী হিসেবে গঠিত হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে এটি তালিকাভুক্ত হবে। তহবিলের ন্যূনতম আকার হবে ৫০ কোটি টাকা। তবে অনুমোদিত অংশগ্রহণকারীর মাধ্যমে ক্রিয়েশন ও রিডেম্পশন দ্বারা ফান্ডের আকার পরিবর্তন করা যাবে। যেহেতু ফান্ডটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হবে তাই ফান্ডের এনএভি (ইউনিট প্রতি সম্পদ) ও বাজার মূল্যের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হলে অনুমোদিত অংশগ্রহণকারীরা এ বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করবে।
এছাড়া এ তহবিলের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকার-স্টক ডিলারদের যারা অনুমোদিত অংশগ্রহণকারী হিসেবে কাজ করবেন তারা মার্কেট মেকারের ভূমিকাও পালন করবেন। ইটিএফ মূলত ইনডেক্স ভিত্তিক ফান্ড যা সাধারণ সূচক বা শরীয়াহ সূচক ভিত্তিক হতে পারে। যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইউনিট বিক্রি করে মূলত এ তহবিল গঠন করা হবে। তবে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ তহবিল গঠিত না হলে কমিশনের অনুমোদনক্রমে পাবলিক অফারের মাধ্যমেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে অংগ্রহণ করতে পারবেন।
জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্টক এক্সচেঞ্জের নির্দিষ্ট সূচক, সূচকভুক্ত কোম্পানি কিংবা নির্দিষ্ট খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে ইটিএফ চালু করতে প্রায় দেড় বছর ধরে যৌথভাবে কাজ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালার আওতায় বিশেষ ধরনের এ সামষ্টিক তহবিল চালু বা পরিচালনা সম্ভব না হওয়াতেই আলাদা বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৬
এমএফআই/এসএইচ