সংশ্লিষ্টদের মতে, পাল্লাদিয়ে বাড়ছে দেশি ক্ষুদ্র ও প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে লোকসানে থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোতেও প্রাণের সঞ্চার হতে শুরু করছে।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদে হার ব্যাপক হারে কমানো, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গোপন তথ্য পাচার করে শেয়ারে বিনিয়োগ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নতুন করে ফান্ড বিনিয়োগ করাই পুঁজিবাজারে উত্থানের অন্যতম কারণ।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) চলতি বছর মোট ১৭ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ কার্যদিবসই সূচকের উত্থান হয়েছে। আর সূচকের বেড়েছে ৫৮৬ পয়েন্ট। লেনেদেন বেড়ে ২২’শ কোটিতে অবস্থান করছে। আলোচিত এ সময়ে বাজারে মূলধনে যোগ হয়েছে ৩৪ হাজার ২৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও ১৪ কার্যদিবস উত্থান হয়েছে।
কারণ ছয়টি থাকলেও সরকার পক্ষ থেকে আগামী তিন বছর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকবে। সরকারের এমন আশ্বাসের ফলে বিনিয়োগকারীরা আবারো হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ফলে সর্বশেষ তিন মাসে নতুন করে ২৯ হাজার বিনিয়োগকারী বেড়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আমাদের পুঁজিবাজার শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড়াবে। যেখান থেকে আমরা বিভিন্ন বিনিয়োগে আগ্রহ নিতে পারবো। মাত্র ৩ বছর বাকি, এর মধ্যেই পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে বলে আমার বিশ্বাস।
তার কথার সূত্র ধরে এর আগের হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারের সূচক ১০ হাজার পয়েন্টে দাঁড়ালেও কোনো সমস্যা নেই। আমরা আর বাধা দেবো না।
তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্কারের কারণে বর্তমানে সেই অবস্থায় অবস্থান করছে বাজার।
এদিকে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেছেন, সূচক বাড়ায় ভয়ের কিছু নেই। তবে ধার-দেনা কিংবা স্ত্রী’র গহনা বিক্রি না করে, সারপ্লাস মানি (উদ্বৃত্ত টাকা) থাকলে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তার কারণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
বাজারের সার্বিক বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মানি মার্কেটে বিনিয়োগের চেয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ লাভ বেশি থাকায় বিনিয়েগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকের সেভিংসের ইন্টারেস্টের পরিমাণ ৭ শতাংশ হওয়ায় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা আরেকটু লাভের আশায় পুঁজিবাজারে ঝুঁকছেন। অপরদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে এখন যথেষ্ট পরিমাণ তারল্য রয়েছে। তারাও এ টাকা এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মানি মার্কেটের সুদের হার অনেক নিচে রয়েছে। সুদের হারসহ সবগুলো সিন্ডিকেটের অনেক কম আছে। ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকে আমানতের সুদ হার কম হওয়ার কারণে কিছু মানুষ বাড়তি মুনাফার আশায় পুঁজিবাজারে ঝুঁকছেন। আর পুরোনো খেলোয়াড়রা সেটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতো খেলাধুলা চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমএফআই/এসএইচ