আপিলের পর গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারিক আদালত পুঁজিবাজারের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মামলার নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছেন উচ্চ আদালত।
প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ এখন পুঁজিবাজারে ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট নামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য হিসেবে কাজ করছে।
গত ২৩ এপ্রিল মামলার রায়ে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজসহ তৎকালীন চেয়ারম্যান ৠাংস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী ও তৎকালীন পরিচালক এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ এইচ চৌধুরীকে বেকসুর খালাস দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী।
গত ৩১ মে উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিএসইসি। এ সংক্রান্ত আদেশ পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আসে গত ০৭ সেপ্টেম্বর। একই সঙ্গে আসামিদেরকে অবহিত ও জামিন নেওয়ার কথা বলা হয়। এর আলোকে আসামিদেরকে নোটিশ পাঠান ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের এ নোটিশ পেয়ে আসামি এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী জামিনও নিয়েছেন। তারা বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে স্বশরীরে হাজির হয়ে জামিন নেন। তাদের পক্ষে জামিনের আবেদন জানান আইনজীবী পান্নু খান ও আব্দুস সালাম খান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার কারসাজির মামলার রায়ের কপি পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করেছে বিএসইসি। এখন আপিল মামলাটির বিচারকাজ উচ্চ আদালতে শুরু হবে। নিয়ম-নীতি অনুসারে আসামিরা ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন নিয়েছেন।
এ মামলার অন্য দুই আসামি প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান ও পরিচালক আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ উচ্চ আদালতের নির্দেশে আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ বন্ধ ছিল। ফলে শুধুমাত্র এম এ রউফ চৌধুরী, সাঈদ এইচ চৌধুরী ও প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের অংশের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।
তবে আনু জায়গীরদার ও মশিউর রহমানের বিচারের স্থগিতাদেশও গত ০২ মে শেষ হয়ে যায়। ট্রাইব্যুনালে এখন ওই দু’জনের বিচারকাজ চলছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন।
প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করা হয়।
এক নম্বর আসামি এম এ রউফ চৌধুরী প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের মাধ্যমে ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করেন, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড অনুসারে আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংকের রেকর্ড অনুসারে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপি’র মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
একইভাবে আসামিরা ডিভিপি’র মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপি’র মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি।
এসব ফরেন ডিভিপি’র মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংককে ব্যবহার করতো। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিএসইসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে আসামিরা অধ্যাদেশের ১৭ ধারার ই (২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদেরকে শাস্তি দেওয়ারও সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিএসইসি’র প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান। আসামি এম এ রউফ চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম খান এবং আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলহাজ মো. বোরহান উদ্দিন।
এ মামলায় ৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন- ডিএসই’র মহাব্যবস্থাপক রুহুল খালেক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন এবং বিএসইসি’র সহকারী পরিচালক এনামুল হক ও মনিরউদ্দিন আহমেদ।
এরপর আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামি এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর