প্রসপেক্টাসের একেক জায়গায় একেক ধরনের তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে এই পরিমাণ টাকা তুলে নিতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। আগামী রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে আইপিওতে আবেদন শুরু হবে।
অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ব্যাংকঋণের বিষয়ে দু’জায়গায় দু’রকম তথ্য দিয়েছে। দেখাতে পারেনি নগদ অর্থের সত্যতা রিপোর্ট। জমি না থাকার পরও ২৭ লাখ টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও শ্রমআইন বিষয়ে দিয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য।
এসব সমস্যা থাকার পরও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি)কোম্পানিটিকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিরোধী।
এসব বিষয়ে কোম্পানির বক্তব্য হলো ‘প্রিন্টিং মিসটেক’ ‘নিয়মের মধ্য থেকে’ এবং‘পুরানো আইন পালন করছি’ ইত্যাদি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির হাতে ছিল ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। অথচ অডিটরদের দ্বারা সত্যতার প্রমাণ নেই। নিরীক্ষক কোম্পানির ইনভেন্টরির সত্যতা যাছাই করলেও নগদ এই টাকার ক্ষেত্রে তা করেনি।
এবিষয়ে কোম্পানির প্রধান অর্থকর্মকর্তা (সিএফও) জুলহাস বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, অডিটিংকালে সময়ের অভাবে অডিটর নগদ টাকা গণনা করতে পারেননি। তবে পরবর্তী সময়ে ঠিকই করেছেন। আমাদের দেয়া তথ্য নিরীক্ষক মেনে নিয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে সচেতন হবো।
সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ঋণ নিয়েছে নাহি অ্যালুমিনিয়াম। অথচ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রসপেক্টাসের নোট ১১, ১৪ ও ২৩-এ বনানী শাখার কথা উল্লেখ করেছে। তাই কোম্পানির দেওয়া তথ্যের সত্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এসব অসঙ্গতির ব্যাপারে কোম্পানির সিএফও’র বক্তব্য হলো ‘এটা নিছকই প্রিন্টিং মিসটেক’।
প্রসপেক্টাসের নোট ২.১৩.২-এ সিস্টার কনসার্ন আছে। অথচ ৭১ পৃষ্ঠায় নাই বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সিএফও বলেন, ‘আমাদের কোনো সিস্টার কনসার্ন নেই। তবে পরিকল্পনায় রয়েছে। ’
৭৭ পৃষ্ঠার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৯ মাসে বা ৩ প্রান্তিকে ১.৮৪ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে ২০১৬-১৭ পুরো অর্থবছরে ইপিএস আরও বেশি হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ১৫৮ পৃষ্ঠায় প্রজেকশনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্ভাব্য ১.৫৯ টাকা ইপিএস হতে পারে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৯ মাসের তুলনায় ১২ মাসে ইপিএস কমে আসবে। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ খামখেয়ালির প্রজেকশন-তথ্য দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সিএফও বলেন, আইপিও’র জন্য খরচ এবং শেয়ার বৃদ্ধির কারণে ইপিএস কম দেখানো হয়েছে। তবে এখন ইপিএস বেড়েছে।
৯৭ পৃষ্ঠায় ২০১৬ সালের ৩১ মার্চে কোম্পানির থাকা স্থায়ী সম্পদের হিসাব দিয়ে তা ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের বলে দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রসপেক্টাসে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৫ পৃষ্ঠায় শ্রমফান্ড প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও এ তথ্যের সত্যতা মেলেনি।
অন্যদিকে ১৮৮ পৃষ্ঠায়, নোট ২.১৪ এর ‘বি’ তে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের শ্রমআইন অনুযায়ী, ফান্ড গঠন ও বিতরণ করা হয়। কিন্তু ২২৭ পৃষ্ঠায় ২ নং-এ ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রমআইন অনুযায়ী ফান্ড ট্রান্সফার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রমফান্ড নিয়ে নাহি কর্তৃপক্ষের এই দাবি বিভ্রান্তিকর।
সিএফও বলেন, কোম্পানির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ২০০৬ সালের নিয়মে শ্রমিকদের সব পাওনা দাওনা পরিশোধ করেছি এবং অধিকার রক্ষা করেছি। কিন্তু আইপিওতে আসার সময় কমিশন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে কোন আইন অনুসারে চলছি। আমরা বলছি, ‘নতুন আইন অনুসারে। আইন তো আইনই, সবই এক’।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমএফআই/জেএম