ধসের পর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকায় অভিহিত মূল্যের নিচে অর্থাৎ ১০ টাকার কমে ব্যাংক খাতের শেয়ার কেনা-বেচা হয়েছে। ব্যাংকের এই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিলো না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টুকটাক করে এই খাতের শেয়ারে দাম বাড়ছে মাস দু‘য়েক ধরে। এর ফলে কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখতে বড় ধরনের অবদান রাখছে এখাতের তালিকাভুক্ত ত্রিশ কোম্পানি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, ডিএসই’র দৈনিক লেনদেনের অর্ধেকই হচ্ছে ব্যাংকিং খাত থেকে।
তারা বলছেন, অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে ব্যাংক খাতের শেয়ারে দাম কম থাকার পাশাপাশি ভাল লভ্যাংশ দেওয়ায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী খাতের শেয়ার কিনছেন।
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ারের দাম অনেক কম ছিলো, তাই এখন বাড়ছে। তবে এখনো যৌক্তিক মূল্যের মধ্যে আসেনি। বিদেশি-প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার বেশি কিনছেন। অন্যদিকে দাম কম থাকায় প্যানিক হয়ে শেয়ার সেল করে চলে যাওয়া বিনিয়োগকারীরাও আবার শেয়ার কিনছেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকের আমানতের সুদ হার কম থাকার পাশাপাশি সর্বশেষ বছরের ভাল মুনাফা হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারে ঝুঁকছেন।
ডিএসইর তথ্য মতে, গত এক বছর আগেও সিটি ব্যাংকের শেয়ারে দাম ছিলো ২৩ দশমিক ৫০ টাকায়। গত ২ বছর আগেও শেয়ারটির দাম ছিলো ১৯ দশমিক ৩০ টাকা। অথচ গত একমাসে (২০ আগস্ট ৪০ দশমিক ৯০ টাকা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ৪৮ দশমিক ৯০ টাকা) দাম বেড়েছে ৮ টাকা।
এরপর (গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার) টানা তিন কার্যদিবস মূল্য সংশোধনের কারণে দাম কমে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৯০ টাকায়। কিন্ত সেই অবস্থা কাটিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারো শেয়ারটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সেই শেয়ার ২০ পয়সা বেড়ে ৪৬ দশমিক ১০ টাকায় কেনা-বেচা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি সর্বশেষ বছরের বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ, উদ্যাক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং ৩৯ শতাংশ শেয়ার।
ঠিক এইভাবে ৯ টাকা দাম বেড়েছে সোসাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে। এই কোম্পানিটিও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। সর্বশেষ বছরে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১:১(অনুপাত) রাইট শেয়ার ঘোষণা করেছে। একমাসে ৬ টাকা দাম বেড়েছে ব্রাক ব্যাংকের শেয়ারের, ৫ টাকা করে বেড়েছে আল আরাফা, ইবিএল, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের। ৪ টাকা করে বেড়েছে প্রাইম, প্রিমিয়াম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারের এবং ৩ টাকা করে বেড়েছে ঢাকা, এক্সজিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইসলামী এবং যমুনা ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের।
এর মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় কারণ জানতে চেয়ে শাহজালাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি এবং ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। জবাবে কোম্পানিগুলো ডিএসইকে জানিয়েছে, শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির পেছনে তাদের কাছে কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ২৩টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৫টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টির। ব্যাংক খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম বাড়ায় বড় ধরনের দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে পুঁজিবাজার। এদিন ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪৫ দশমিক ২১ শতাংশ লেনদেন হয়েছে এ খাত থেকে। টাকার অংকে যা দাঁড়িয়েছে ৪’শ ৬৪কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিলো ৭‘শ ৪২ কোটি ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
এদিকে গত আগস্ট মাসেও ব্যাংক খাতের অবদান ছিলো ২৬ শতাংশ। যা ২০১০ সাল পরবর্তী ব্যাংক খাতের সর্বোচ্চ লেনদেন। আলোচিত এমাসে এ খাতে লেনদেন হয়েছিলো ৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যা মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর আগের মাসে লেনদেন হয়েছিলো তিন হাজার ৩’শ ২৪ কোটি টাকা। যা মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
২০১০ সালে ডিএসই‘র মোট লেনদেনের ২৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছিলো ব্যাংকিং খাতে। তারপর ২০১১ সালে লেনদেন হয়েছিলো ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
এমএফআই/এসআই