ঠিক এমনিভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকা ‘জেড’ ক্যাটাগরির রহিমা ফুডের শেয়ারও কেনা-বেচা হচ্ছে ১৭৮ টাকায়। এই দুই কোম্পানি ছাড়াও নতুন-পুরাতন তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোম্পানির বেশির ভাগেরই শেয়ারের দাম দ্বিগুণ থেকে ১৬ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
কিন্তু ১০ টাকা দামে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে মাত্র ৫ দশমিক ৯০ টাকায়। ২০১০ সালে ভ্রমণ খাতে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়।
অর্থাৎ বিবিএস ক্যাবলসহ অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার যেখানে কেনা-বেচা হয়েছে ১৬ গুণ বেশি দামে, তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ারের দামে। এই কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা হচ্ছে ফেস ভ্যালুরও অর্ধেক দামে।
ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ টাকায়। গত ৩ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে এই শেয়ারের দাম কমছে। ওই দিন অথাৎ ৩ আগস্ট শেয়ারটির দাম ছিলো ৭ দশমিক ১০ টাকা।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বন্ধ উড়োজাহাজ চালু করা হবে বলে একের পর এক মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। বরং প্রতিনিয়তই কোম্পানির অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।
অপরদিকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বিনিয়োগকারীরা বারবার ধোঁকায় ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে বিনিয়োগকারীরা এই কোম্পানির শেয়ার কেনা থেকে দূরে চলে আসছে।
বিনিয়োগাকারী আতাউল্লাহ নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেছিলেন, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করবেন। গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই তার এই টাকা তোলার কথা ছিলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত ২২৪ কোটি টাকা উত্তোলন করতে পরেননি।
শাকিল রিজভী স্টকের বিনিয়োগকারী এনায়েত জসিম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪০০ কোটি টাকা প্লেসমেন্ট শেয়ার ছেড়েছে বিদেশ থেকে টাকা এনে নতুন করে ৭টি উড়োজাহাজ চালু করবে বলে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে গ্রাউন্ডেড থাকা ইউনাইটেড এয়ারের উড়োজাহাজ গুলো চালু করবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চালুর কোনো নাম নেই। তাই বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর বর্তমান এক পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানির অবস্থা ভাল নয়। তাই শেযারের দামও কমছে।
তিনি বলেন, অল্প টাকায় কখনো এয়ারলাইন্স ব্যবসা হয় না। এই ব্যবসার জন্য অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা দরকার ছিলো। তাই কোম্পানিটি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কোম্পানি সূত্র মতে, তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ছিলো প্রায় ৭০ শতাংশ। এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৫ দশমকি ২৬ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির ৩১ জন উদ্যোক্তা-পরিচালকের মধ্যে ২৮ জন ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল ও বোনাস শেয়ার বিক্রি করে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।
এ ছাড়াও ২০ জন উদ্যোক্তাও তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। আর এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এই শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৭
এমএফআই/জেডএম