আর ব্যাংক থেকে পাওয়া সুদের প্রায় দেড় কোটি টাকা কোম্পানির রিজার্ভেই জমা করে রেখে দিয়েছে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) অনুমোদন পাওয়া বিবিধ খাতের কোম্পানি আমান ফিড। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করার পরও ঋণগ্রস্তই রয়ে গেছে এই কোম্পানি।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা ও দক্ষতার অভাবের কারণেই কোম্পানিক এমন নাজুক দশা –এমনটাই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অনেকেই বলছেন, কোম্পানির ভবিষৎ নির্ভর করে কোম্পানির সুদক্ষ পরিচালনার ওপর। কিন্তু সেটা করতে তারা অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসার আগেই বলেছিলো ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে। কিন্তু সঠিক সময়ে সেই কাজটি তারা করতে পারেনি।
অন্যদিকে আইপিও’র টাকায় ব্যাংক লোনের একাংশ পরিশোধ করার পরও এখনো তাদের শত কোটি টাকার বেশি ব্যাংক লোন অপরিশোধিত রয়ে গেছে।
কোম্পানির দেয়া তথ্যমতে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ২ কোটি শেয়ারের বিপরীতে পুঁজিবাজার থেকে ৭২ কোটি টাকা উত্তোলন করে আমান ফিড। আর এই টাকা চলতি বছরের ৩০ জুন সময়ের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আইপিওসহ মোট চার খাতে ব্যয় করা হবে বলে অঙ্গীকারও করেও তার একটি অংশ ব্যাংকে জমা করে সুদ নিচ্ছেন তারা।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ গত ২৭ জুলাই ডিএসইর কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে আইপিওর অর্থ ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজে ব্যয় করতে না পারার কথা স্বীকার করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আইপিওর টাকা কোম্পানি কিভাবে ব্যয় করেছে তা খতিয়ে দেখতে অডিট কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে তা জানানো হয়েছে।
আইপিও’র অর্থ নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব মনিরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা গেছে, আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার সময়ও কোম্পানিটি ব্যাপক অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস)-১২ অনুযায়ী, হিসাবভিত্তিক ও করভিত্তিক (অ্যাকাউন্টিং বেসিস ও টেক্স বেসিস) হিসাবে স্বল্প মেয়াদি পার্থক্যের ক্ষেত্রে বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) গণনা করতে হয়। এক্ষেত্রে জমি অবচয়যোগ্য না হওয়ায় ও দীর্ঘ মেয়াদি পার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় বিলম্বিত কর(ডেফার্ড ট্যাক্স) গণনা করা হয় না। কিন্তু আমান ফিড কর্তৃপক্ষ পুনর্মূল্যায়নের কারণে বৃদ্ধি পাওয়া জমির উপরে ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করেছে।
প্রসপেক্টাসের ৭১ পৃষ্ঠায় নোট ২.০৭-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট(অবনতির বা ক্ষতির পরীক্ষা) করার মতো কোনো ইন্ডিকেশন (লক্ষণ) নাই। কোম্পানিটি প্রায় ৮২ কোটি টাকার ফিক্সড অ্যাসেট ব্যবহার করে। এমন অবস্থায় ইমপেয়ারমেন্ট করার মতো কোনো ইন্ডিকেশন থাকাটা স্বাভাবিক।
বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে আমান ফিডের প্রায় ১২৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু তারা তা আড়াল করেছে এবং ব্যয় কম দেখিয়ে মুনাফা বেশি দেখিয়েছে। কোম্পানিটি দেনাদারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেনাদারদের কাছে টাকা পাওনা থাকলে অবশ্যই অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি গঠন করতে হবে। তবে ১০০ ভাগ রফতানিমুখি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে পাওনা এলসির মাধ্যমে আদায় গ্যারান্টি থাকায় এক্ষেত্রে প্রভিশনিং করতে হয় না।
আমান ফিড কর্তৃপক্ষ আসবাবপত্রের উপর ১০ শতাংশ হারে রিডিউসিং ব্যালেন্স মেথডে অবচয় চার্জ করেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানি মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রম আইন অনুযায়ী, ২০০৬ সাল থেকে নিট আয়ের ৫ শতাংশ দিয়ে শ্রমিক ফান্ড গঠন করা বাধ্যতামূলক হলেও তারা এটি গঠন করেছে ২০১১ সালে। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিটি কর্মচারিদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এমএফআই/জেএম