তথ্য গোপন করে পুজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন চাওয়ায় তাতে আপত্তি জানিয়েছে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক। শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন স্থগিত রাখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) একটি চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাংকটি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাতিল করতে পারে বিএসইসি।
১৯৫৪ সালে বরিশালের কলেজ রোডে ইন্দো পাক ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস নামে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮২ সালে স্থানীয় ব্যবসায়ী সামসুদ্দিন তালুকদারের কাছে বিক্রি করে দেয় সরকার। পরবর্তীতে নামকরণ হয় ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস।
ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ২০১৪ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনকারী সংস্থা জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নেয়। শেয়ার ইস্যু করার জন্য ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করে।
চলতি বছরের ৩ অক্টোবর কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৬১৩তম সভায় ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০ টাকা নির্ধারণ করে ২ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদন করে বিএসইসি।
প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানিটি ২০ কোটি টাকা পুঁজি উত্তোলন করে কারখানা, প্রশাসনিক ভবন, গুদাম, গ্যারেজ ভবন নির্মাণ, মেশিনারিজ ক্রয় ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খাতে ব্যয় করবে বলে জানানো হয়।
২০১৬ সালের ৩০ জুন শেষে কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে নেট অ্যাসেট ভ্যালু ১১ টাকা ৬৩ পয়সা এবং শেয়ার প্রতি আয় ২ টাকা ৬২ পয়সা। শেয়ার ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও সিএডিএম অ্যাডভাইসরি লিমিটেডকে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেস অনুষদ বিভাগের ডিন মোহাম্মদ মূসা বলেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস এমনটি করে থাকলে তা বড় ধরনের জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। না করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
জানা গেছে, উত্তরাধিকার সূত্রে এই কোম্পানির মালিক হন এএফএম সানোয়ারুল হক সগীর। তিনি বেসরকারিখাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বরিশাল শাখা থেকে একটি ঋণ নেন। তাতে জামিনদার করা হয় সানোয়ারুলের ছোট ভাই এএফএম আনোয়ারুল হক। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণ নেওয়ার সময় ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানাসহ চারতলা ভবন ও ৯৬ দশমিক ৮০ শতাংশ জমি রেজিস্টার্ড বন্ধক দেওয়া হয়েছে। টাকা আদায়ের লক্ষ্যে এএফএম সানোয়ারুল হক সগীরের বিরুদ্ধে বরিশাল সিএমএম আদালতে তিনটি চেক ডিজঅনার মামলা করে। তার একটিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি আদালত সগীরের এক বছরের কারাদণ্ড ও চেকে উল্লেখিত ১১ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৬ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন। এছাড়াও বিচারাধীন রয়েছে বরিশাল অর্থঋণ আদালতে ২০১৬ সালে দায়ের করা মামলা।
ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার খবর পেয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে তা স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনে ব্যাংক বলেছে, তথ্য গোপন করে প্রোপ্রাইটরশিপ কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করে শেয়ার বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন নিয়েছে। বিষয়টি আইনসম্মত না হওয়ায় তা স্থগিত রাখা হোক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে। দু-একদিনের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক শেয়ার ইস্যু স্থগিত রাখার আবেদন প্রত্যাহার করে নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এসই/এমজেএফ