অথচ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিলো নির্বাচন ঘিরে বাজার ভালো থাকবে, যার মাধ্যমে দীর্ঘ আট বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন সবাই। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় কোটি মানুষ জড়িত। এই মানুষগুলোর ভোটের স্বার্থে হলেও বাজার ভালো করা জরুরি। কারণ নির্বাচন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদিও শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে বাজেটের পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
তারা বলছেন, চলতি বছরের শুরুতেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বৃদ্ধি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাজারে দরপতন শুরু হয়। এরপর ব্যাংকের বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে আনা, ব্যাংক ঋণ আমানতের রেশিও (এডিআর) সুদের হার সমন্বয়ের সময় বৃদ্ধি, ব্যাংক-ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ও মার্চেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার বিক্রির ইস্যুতে পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়।
তারপর ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফের দরপতন শুরু হয়। যার গ্রাস থেকে এখনো বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার। এতে দুই (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) বাজারের ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৭ জন বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হোল্ডার পুঁজি হারিয়েছেন ৪১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
ডিএসই ও সিএসইর তথ্য মতে, চলতি মাসের শুরু থেকে মোট ১২ কার্যদিবসই দরপতন হয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান সূচক কমেছে ৪২৩ পয়েন্ট। পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। ফলে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছে ২০ হাজার ৯৬৫ কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। একই সময় দেশের অপর বাজার সিএসই’র প্রধান সূচক কমেছে ৭৭৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট। আর বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ২০ হাজার ১৯১ কোটি ২ লাখ টাকা।
সার্বিক বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এখন পুঁজিবাজারে বড় সমস্যা তারল্য সংকট। এর ফলে শেয়ার কেনা-বেচা কম হচ্ছে। শেয়ারের দামও কমছে। এই তারল্য সংকট দূর করতে মনিটরিং পলিসির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের খারাপ অবস্থার কারণে পুঁজিবাজারেও আস্থার অভাব পড়েছে। পাশাপাশি বাজারে কারসাজি, সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে অসুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোলনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা বেশি। তারা দায়িত্ব পালন না করায় বিনিয়োগকারীরাই অনৈতিক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন।
তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন ডিএসই’র এক পরিচালক। নাম না প্রকাশ শর্তে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে কোনো জবাবদিহিতা নেই, বিচার নেই। যে যার মতো কারসাজি করে চলছেন। পৃথিবীর কোনো দেশের বাজারেই ম্যানুপোলেশন করে পার পাওয়া যায় না। আর আমাদের বাজারে যারা সিরিয়াল ট্রেডিংয়ে সঙ্গে জড়িত নিয়ন্ত্রক সংস্থার তাদের উল্টো পুরস্কৃত করে। এটা কোনো সুস্থ বাজারে হতে পারে না।
২৭ বছর ধরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আসা বিআরবি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণরূপে ‘অসুস্থ’। তা না হলে ভালো কোম্পানি শেয়ারে দাম কেন কমে? আর উৎপাদনহীন ও জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দাম বাড়ে।
তিনি বলেন, নতুন করে যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছি, সেই কোম্পানির শেয়ারের দামই কমছে। এটা কি বাজার, প্রশ্ন এই বিনিয়োগকারীর?
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
এমএফআই/জেডএস