বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডাররা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটি জানিয়েছেন।
তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ (তিন) বছরের লক-ইন প্রত্যাহার ও কর হার ১০% এর পরিবর্তে ৫% করার সুপারিশ করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে পুঁজিবাজারের ব্রোকারদের শীর্ষ সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ৩ (তিন) বছরের লক-ইন প্রত্যাহার চেয়ে এই কর হার ১০% এর পরিবর্তে ৫% করার সুপারিশ করেছি। এর ফলে বাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বাজার সক্রিয় ও শক্তিশালী হবে।
কালো টাকা সাদা করতে শর্তের অধীনে কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে না বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান।
তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করতে শর্তের অধীনে কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে না। যেখানে অন্যান্য সেক্টরগুলোতে কালো টাকা সাদা করা অত্যন্ত সহজ। যেমন- ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে টাকা থাকলে মাত্র ১০% ট্যাক্স দিয়ে পুরো টাকাটা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজেটে প্রস্তাবিত শর্ত তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শর্তের বেড়াজালে কালো টাকা বিনিয়োগে বাধা দেওয়া যাবে না। বর্তমান সংকটে বাজারে তারল্য প্রয়োজন। তাই সরকারের উচিত সব শর্ত তুলে দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া।
সকলের মতো একই প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। তিনি শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজেটে ৩ বছরের লক-ইনের প্রস্তাবিত শর্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
অন্যান্য খাতের মতো শেয়ারবাজারের অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন শর্ত না রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। সংগঠনটির সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. রিয়াদ মতিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অন্যান্য খাতের মতো শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো শর্ত না রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
তারা বলেন, অপ্রদর্শিত আয় ১০ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে নিয়মিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে ফ্ল্যাট ক্রয়, নগদ জমা, ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারে ৩ বছরের লক-ইন শর্তে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে অন্যান্য খাতের মতো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্যও কোনো শর্ত থাকা উচিত না। অন্যথায় শেয়ারবাজারের চেয়ে ব্যাংকে আমানত রাখা বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার বিষয়ে মানুষ আগ্রহী বেশি হবে। এতে করে শেয়ারবাজার উপকৃত হবে না।
এর আগে ১৯৯৭-৯৮ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দুই বছর বিনিয়োগে থাকতে হবে এই ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিলো। সেটাও তেমন সফল হয়নি এবং কেউ সেই বিনিয়োগে আসেনি। কোথাও কোনো শর্ত দিয়ে কাউকে বিনিয়োগে আনা যাবে না। আমাদেরকে বাস্তবতার সাথে থাকতে হবে। তাই শেয়ারবাজারে যে তারল্য সংকট চলছে, তার একমাত্র সমাধান হলো অপ্রদর্শিত কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া। এই অবস্থায় কোনো শর্ত ছাড়া শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করেছেন তারা।
এতে করে যারা অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করবেন, তারা পরিকল্পনা মতো বিনিয়োগ করবেন। এই সুযোগ যখন থাকবে, তখন এই অপ্রদর্শিত কালো টাকা সহজভাবে সাদা হবে। তা শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট দূর করে শক্তিশালী করতে একটি ভালো ভূমিকা রাখবে, যা প্রত্যক্ষভাবে পুঁজিবাজারের জন্যে, বিনিয়োগকারীর জন্যে তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুফল বয়ে আনবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
এসএমএকে/এজে