ঢাকা: বাজেট ঘোষণার পর টানা দুই সপ্তাহ পুঁজিবাজারে সূচকের পতন হয়েছে। আগের সপ্তাহের মতো বিদায়ী সপ্তাহেও (১৯-২৩ জুন) সূচকের পতন হয় পুঁজিবাজারে।
শনিবার (২৫ জুন) ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের তেমন অংশগ্রহণ না থাকায় বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দৈনিক তিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে লেনদেন তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক রয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে প্রোফিট গেইন করেছেন। এখন তাদের উচিত হবে বাজারে বিনিয়োগ করা। আগামীতে বাজার অনেক ভালো হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে তিন হাজার ৮২২ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৩ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৩০০ কোটি ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৪৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৪০ টাকা বা ১১.১১ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৮.০৮ পয়েন্ট বা ১.৫৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩২৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২০.৩৩ পয়েন্ট বা ১.৪৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৯.৩৪ পয়েন্ট বা ১.২৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৮২.৯৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৯৮.৫০ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৯ হাজার ৩১১ কোটি টাকার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে চার হাজার ৯৯৫ টাকার মূলধন কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৪.৪৭ পয়েন্টে, যা সপ্তাহ শেষে ১৪.৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ০.১৭ পয়েন্ট বা ১.১৭ শতাংশ কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৪টির, কমেছে ২৯৭টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর এবং ৫টি কোম্পানির শেয়ারের কোনো লেনদেন হয়নি।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানি হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, শাইনপুকুর সিরামিক, জেএমআই হসপিটাল, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ফু-ওয়াং ফুড, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আরএকে সিরামিকস, মুন্নু ফেব্রিক্স এবং সাইফ পাওয়ারটেক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৯৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৪৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার লেনদেন কমেছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৮০ পয়েন্ট বা ১.৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৪টির দর বেড়েছে, ২৫২টির কমেছে এবং ১৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
এসএমএকে/এনএসআর