এর আগেও সুযোগ হয়েছিল মালয়েশিয়ার কিছু ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঘোরার। তবে সেটা শুধুই ঘোরা।
এনইউএসে রয়েছে মোট পাঁচটি লাইব্রেরি। অন্যগুলো মেডিকেল বা কলার শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে রয়েছে সবকিছুর সমন্বয়। এখানে অনলাইন বা ই-বুক ছাড়াই রয়েছে ৩০ লাখ বইয়ের সমাহার। যার কারণে দুনিয়ার সমৃদ্ধ লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। ৬ তলার এ লাইব্রেরি ব্যবহারের যে নিয়ম রয়েছে, তার জন্যই একটি ওরিয়েন্টেশন ক্লাস করতে হয়। বই খুঁজে পাওয়া, বই ধার নেওয়া, দেরি হয়ে গেলে করণীয়, ই-বুক খুঁজে পাওয়া, এখানকার প্রিন্টার এবং ফটোকপি মেশিন ব্যবহার করা, সবকিছুই দেখিয়ে দেওয়া হয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের দিকে দেখেছিলাম, দু’টি ফটোকপি মেশিনে ফটোকপি করা হতো। শিক্ষার্থীরা বইয়ের পাতার নাম্বার লিখে টাকা জমা দিলে এক বা দু’দিন পর সেই ফটোকপি পাওয়া যেতো।
এনইউএসের কার্ডধারী ছাড়া অন্য কেউ এখানে প্রবেশ করতে হলে বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। কারণ কার্ড ছুঁইয়ে এখানে প্রবেশ করতে হয়। তাই লাইব্রেরিতে বসে বিসিএসের পড়া এখানে সম্ভব নয়।
এখানকার পরিবেশটাই এমন যে, সারাদিন-রাত বসে থাকতে পারবেন যে কেউ। চাইলে সোফায় আরামে শরীর হেলিয়ে দিতে পারবেন। সারি সারি বইয়ের তাক আর পড়ার টেবিল। একসঙ্গে ২০টি বই নিয়ে পড়া যায়। আর ই-বুক হলে তো কথাই নেই।
এনইউএসে জ্ঞানের প্রধান ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই লাইব্রেরিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো প্রয়োজনে তথ্য সরবরাহ করে লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞানের দরজা খুলে দিয়ে বিশ্বকে আরও কাছে নিয়ে আসাই এ লাইব্রেরির লক্ষ্য।
এখানকার লাইব্রেরিয়ান আয়েশা আমাদের ঘুরে দেখান ফ্লোরগুলো। ষষ্ঠ তলায় রয়েছে সাধারণ পড়ার রুম, আলোচনা করার জন্য কাঁচ ঘেরা আরেকটি রুম, যেন অন্যদের সমস্যা না হয়। রয়েছে মোবাইলে কথা বলার জন্য রুম, ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার জন্য রুম, প্রশিক্ষণ রুম এবং পরিচালকের কক্ষ।
পঞ্চম তলায় রেফারেন্স ও তথ্য সেবা রয়েছে। রয়েছে ডকুমেন্ট কালেকশন। আন্তর্জাতিক সব পত্রিকাই এখানে সকালে পাওয়া যায়। এছাড়া বিষয় বলে দিলেই লাইব্রেরিয়ান খুঁজে দেবেন প্রয়োজনীয় রেফারেন্স। সিঙ্গাপুরিয়ান-মালয়েশিয়ান সংগ্রহশালা রয়েছে এখানে। মালয়েশিয়া থেকে প্রকাশিত বইগুলোও সংগ্রহে, রয়েছে সাম্প্রতিককালের জার্নালগুলোও। এখানে সহকারীদের অফিস ছাড়াও প্রতি ফ্লোরের মতোই রয়েছে বই পড়ার জায়গাও।
চতুর্থ তলা দিয়েই মূলত অভ্যর্থনা কক্ষ। এখানেও রয়েছে বই দেওয়া এবং নেওয়ার ডেস্ক। সাধারণ তথ্যগুলো সরবরাহ করার জন্য কর্মকর্তা, সেমিনার রুম, প্রেজেন্টেশন রেডি করার জন্য মাল্টিমিডিয়া রুম ও ফটোকপি সার্ভিস রুম।
তৃতীয় তলায় রয়েছে নিরিবিলি পড়ার রুম, ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার রুম, বইয়ের তাক, আলোচনা করার রুম। আর প্রথম এবং দ্বিতীয় তলা পুরোটাই বইয়ের গুদাম। এখানে পড়ার জন্য বই তুলতে হলে কম্পিউটারে বইয়ের অর্ডার দিলেই হবে। তাৎক্ষণিকভাবে কম্পিউটার জানিয়ে দেবে বইটি আছে কিনা? যদি কারও কাছে থেকে থাকে, তাহলে কতদিনে ফেরত পাওয়া যাবে সেটিও জানিয়ে দেবে।
যদি ই-বুক হিসেবে এমন কোনো বইয়ের দরকার হয়, যেটা এই লাইব্রেরিতে নেই, তবে আমেরিকা বা ব্রিটেনের লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে, তখন সেখান থেকে অর্ডার দিয়ে আনিয়ে দেবে এখানকার কর্তৃপক্ষ। এর জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো ব্যয় বহন করতে হয় না।
এমন লাইব্রেরি পেলে পড়তে কার না মন চাইবে? যেখানে পানির পাশাপাশি চা ও কফিও রয়েছে ফ্রিতে!
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এমএন/এইচএ/