জাপানের ইয়াওই কুসামা এ মুহূর্তে দুনিয়ার আলোচিত শিল্পীদের (পেইন্টারদের)একজন। গত ৯ জুন থেকে শুরু হওয়া তার শিল্পপ্রদর্শনী চলবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ঢাকায় শিল্প প্রদর্শনীগুলোতে উদ্বোধনের সময় ছাড়া পরে আর তেমন দর্শক হয় না। কিন্তু সিঙ্গাপুর ব্যতিক্রম। আমার নিজের ধারণা ছিল, সিঙ্গাপুরের মানুষগুলো বুঝিবা রোবট। যেখানে কোন প্রাণ নেই, যন্ত্রের চর্চা হয় কেবল। শিল্পের দিকে চোখ ফেরাবার, শিল্প উপভোগের কোনো ইচ্ছো বা ফুরসত এদের নেই।
কুসামার প্রদর্শনী দেখতে গত ২৯ জুলাই শনিবার পে'র সঙ্গী হলাম আমি। পে'র সবচেয়ে বড় গুণ তার সঙ্গে থাকলে সময় কেটে যাবে তরতর করে। সে এতোটাই বিনয়ী যে, দালাইলামাকেও হার মানাতে পারবে। আর শরীর বেঁকিয়ে ওর শিশুশুলভ হাসিটা মন কাড়বে যে কারোরই।
ন্যাশনাল গ্যালারির বেজমেন্টে টিকেট কাউন্টার। বলতেই হবে, এটা যেন বাংলাদেশে ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট কাউন্টার। এতো এতো মানুষ চিত্রকর্ম আর শিল্পকলার বহুমাত্রিক প্রদশর্নী দেখতে এসেছে নগদ ৩০ ডলারের (১৮০০ টাকা) টিকেট কেটে। অবাকই লাগল দেখে।
পুরো এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দুজনের জন্য টিকেট কাটলো পু পে। এ সময়টায় আমি রিপোর্ট লেখায় ব্যস্ত। টিকেট কেটে বিজয়ের হাসি মলিন হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। যখন দেখা গেলো প্রথম গ্যালারিতে ঢুকতেই দীর্ঘ লাইন।
প্রথমেই আয়না বসানো একটি গ্যালারি। গলি বানিয়ে সেখানে উত্তল দর্পণ বসিয়ে প্রতিফলন প্রতিসরণ আর নিক্ষেপণের ধাঁধায় পড়ে যাই আমরা। এটা লৌকিক জগতের মতো। কুসামা তৈলচিত্রের পাশাপাশি এ ধরনের পুরো একটি ঘরকে শিল্পকর্ম দিয়ে সাজিয়েছেন। যেখানে দর্শকমাত্র জড়িয়ে পড়বেন সৃজিত শিল্পকর্মের মনমোহন জালে।
১৯৫০ সালে প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর পরই বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন কুসামা। সে যুগে তার চিত্রকর্মগুলোতে কিশোরী মনের ভাবাবেগ আর মায়ার গাঁথুনি নাড়িয়ে দেয় বিশ্বের শিল্পরসিকদের। এরপর প্রতি দশকেই নিজেকে ভিন্ন মাত্রায় হাজির করে চলেছেন কুসামা।
সাদা ক্যানভাসের ওপর তার বিন্দু বিন্দু কালো ফোঁটা দিয়ে তৈরি ‘জাল’ নামের চিত্রকর্ম প্রথম প্রদর্শিত হয় ১৯৫৯ সালে, নিউইয়র্কে। সাদা ক্যানভাসে হাত ঘোরাতে ঘোরাতে বিন্দু তৈরি করতে থাকেন তিনি।
বিন্দু তৈরি করে কাঁচঘেরা ঘরে আলোর ঝলকানিতে স্বর্গের ফোঁটা তৈরি করেছেন তিনি। এই ঘরে ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় থাকতে দেয়া হয় না।
নীল কালো বিন্দু বিন্দু ভিন্ন রংয়ের কাচঘেরা ঘর নিয়ে যাবে এক অসীম মায়ার রাজ্যে। ১৯৬৫ সালে প্রথম এই শিল্পকর্ম তৈরি করেন তিনি। এটা যেন অসীমের পানে ছুটে চলা। এখানে ৫ সেকেন্ডের বেশি থাকতে দেয়া হয় না। কারণ এটা নেশা ধরিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
এমএন/জেএম