সিঙ্গাপুরের ভারতীয় কমিউনিটিকে নিয়ে এভাবেই হাস্যরস করলেন কুমার। অনেক ভারতীয়রই তাতে ক্ষেপে যাওয়ার কথা।
ক্লার্কিতে ক্যানভাস রুমে শো দেখান ‘ড্রাগ কুইন’ কুমার। ‘ড্রাগ কুইন’ হচ্ছে পুরুষ কৌতুকশিল্পীদের নারী সেজে করা অভিনয় ও হাস্যরসিকতা। আর সিঙ্গাপুরের সেরা ড্রাগ কুইন কুমার সার চিন্নাদুরাই। তবে এখন তাকে লোকে ‘কুমার’ নামেই চেনে।
সিঙ্গাপুরের রাজনীতি, বর্ণবাদ এবং লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে কৌতুক করেন কুমার। তাই এখানে রাজনীতি বা ধর্মবিদ্বেষী, বর্ণবাদী বা নারীবাদী অথবা পুরুষবাদী না হলে শো দেখতে মানা করেন কুমার।
বুধবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর নদীর ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা ক্লাবের সামনে দীর্ঘ লাইন। ড্রাগ কুইনের শো দেখতে এতো মানুষের ভিড় দেখে অবাকই হলাম। অনেকেই অনলাইনেও বুকিং দিয়ে এসেছেন, কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে তাদের দাঁড়িয়ে দেখতে হবে।
এখানকার মানুষ ধৈর্য্যশীল। চুপচাপ মেনে নয় সব। শো শুরু হলো নয়টায়। মঞ্চে এলেন ‘ড্রাগ কুইন’ কুমার। ক্লাবে সব মিলিয়ে ১২০টির মতো চেয়ার পাতা। বাকিরা সবাই দাঁড়িয়ে। এই ক্লাবে প্রবেশ করলে ১০০ ডলারের(৬ হাজার টাকা) টিকেটে এক গ্লাস ড্রিংকসও পাওয়া যায়।
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল মানুষ অল্পতেই হাসছে। তবে এটাই হয়তো কমেডি শো'র নিয়ম। ঝকমকে চকমকে লাল প্যান্টের সঙ্গে কুমার কালো গেঞ্জি গায়ে দিয়েছেন। মুখে ভারি মেক-আপ। ঠোঁটে লাল অধররঞ্জনী বা লিপস্টিক।
বুধবারই সিঙ্গাপুরের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন হালিমা খাতুন। দেশটির প্রথম মালয় এবং নারী-রাষ্ট্রপতি তিনি। নির্বাচন ছাড়া রাষ্ট্রপতি মনোনীত হলেও তা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই মিডিয়ায়। তবে জনগণ একে সহজভাবে মেনে নেয়নি। কেউ কোথাও প্রতিবাদ না করলেও কুমার শুরুতেই বলে বসলেন, 'দরজা টেনে দাও, হালিমা শুনতে পাবে!' তাতেই সমস্বরে হেসে ওঠেন সবাই।
ড্রাগ কুইনের শোতে ভিডিও করতে মানা। সিঙ্গাপুরের ইন্ডিয়ান, মালয়, চায়নিজদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে হাস্যরসে ভরিয়ে তোলেন তিনি। তিন জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে যেসব গল্প তিনি করতে থাকলেন, তা আসলেই বর্ণবাদীদের পক্ষে হজম করা সম্ভব নয়।
বাদ গেলো না থাই, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন বা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ!
কুমারের কৌতুক, 'এবার সি-গেমস হয়েছে মালয়েশিয়ায়। প্রথম হয়েছে মালয়েশিয়া, দ্বিতীয় ভিয়েতনাম, তৃতীয় সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরে যখন সি গেমস হয়েছিল, সিঙ্গাপুরও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, যদিও চায়না থেকে কিছু খেলোয়াড় কিনে এনেছিলাম আমরা। তারা চায়নিজ ছাড়া কথা বলতে পারে না। এই যে সি গেমস উপলক্ষে এতো বড় স্টেডিয়াম বানালো এখন সেটি পড়ে আছে। আমি বলি স্টেডিয়ামটি সরিয়ে ফেলা হোক। তারা জিগ্যেস করেন, কে সরাবে? আরে বাংলা, বাংলারা সরাবেন। দৌড়াতে দৌড়াতে সরিয়ে ফেলবে। নিয়ে যাবে বাংলাদেশে। '
সকলে হো হো করে হেসে উঠলো। প্রথমে ব্যঙ্গাত্মক কৌতুকে একটু খারাপ লাগলেও মনে হলো, এতোক্ষণ সবাইকে নিয়ে, সবার দেশ, সংস্কৃতি নিয়ে আমি হাসতে পেরেছি, তারা এখন আমার দেশ নিয়ে হাসবে, এটাই সহিষ্ণুতা।
সমকামী কুমারের অনেক কৌতুক রয়েছে তার নিজের বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে। যেগুলো হাসিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
এমএন/জেএম