থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বেসরকারি নেটওয়ার্ক হসপিটাল ব্যাংকক হসপিটালের পাশেই থাকেন স্বপ্না ভাবি। স্বামী রাসেল মাহমুদ খান ব্যাংকক হসপিটালের পিআর এবং মার্কেটিং ম্যানেজার।
স্বপ্না ভাবির রেস্টুরেন্টে বসে খেতে খেতেই কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। স্বামীর চাকরিসূত্রে ব্যাংকক এসে জটিল অসুখে পড়েন। সেরে ওঠার পর কিছুতেই ঘুম আসতো না। তখন ডাক্তার বেশি বেশি পরিশ্রমের কাজ করতে বলেন। তখন বাসায় বিভিন্ন রকম রান্নার পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতেন। তার হাতের সবজি পাকোড়া বেশ নাম করা। বন্ধুমহলের লোকজন জনপ্রিয় করে তোলেন এ খাবার।
এরই মধ্যে হসপিটালের মার্কেটিংয়ের টিটু তাকে ঘরে বসে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি রোগীদের খাবার সাপ্লাই করার প্রস্তাব দেন। বসে না থেকে শুরু করলেন সেই ২০০৮ সালে। ১২টি বেডে রোগীদের চাহিদামতো খাবার তৈরি করতে থাকলেন। ক্রমে রোগীর স্বজনরাও আগ্রহী হয়ে উঠলেন স্বপ্না ভাবির রান্না খেতে। বড় হতে থাকলো পরিসর। ছয় মাসের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো খ্যাতি। ২০১২ সালের দিকে খুলে বসলেন রেস্টুরেন্ট। এখন তিনি সফল নারী উদ্যোক্তা।
ব্যাংকক হসপিটালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও তার স্বজনরাই নাকি তাকে শেষতক রাঁধুনি ও রেস্টুরেন্ট মালিক বানিয়েছে। রোগীর অবস্থা বুঝে খাবার তৈরি করতে করতে প্রায় নিউট্রিশনিস্ট হয়ে গেছেন তিনি। এখন কি ধরনের রোগী তা জানতে পারলেই বুঝে যান কি খাবার লাগবে। অধিকাংশ সময় নিজেই রোগীর সঙ্গে কথা বলে আপন করে নেন। বলছিলেন, কেউ যখন ভাবি বলে ডাকেন তখন কেমন করে যেন আপন হয়ে যাই। পরিবারে মতোই তাদের রান্না করে খাওয়াই।
থাইল্যান্ডে গিয়ে বাঙালি মুসলমানের হালাল খাবার খোঁজার যে ঝক্কি, তা থেকেও মুক্তি স্বপ্না ভাবির রেস্টুরেন্টে। ব্যাংকক হসপিটালের পাশে সই ২, সোনভিজাই ৬, হুয়াই কুয়াং ব্যাংকাপিতে খুলে বসেছেন রেস্টুরেন্ট ‘স্বপ্ন কুঠির’। সন্ধ্যায় আড্ডার সঙ্গে খাবার খেতে আসেন অনেকে। পার্টি অর্ডারও পান নিয়মিত। বাংলালিদের প্রিয় জায়গা সুকুমভিত থেকে তাকে নিয়মিত অর্ডার। কোনো গ্রুপ এলে আগে থেকে ফোন করে দেন। হসপিটালের আশপাশে হলে বাসা বা রুমে পৌঁছে দেওয়া হয়। দূরে হলে শুধু ট্রান্সপোর্ট খরচটা দিতে হয়।
‘প্রথম সপ্তাহে ও শেষ সপ্তাহে অর্ডার থাকে খুব কম। কারণ এসময় রোগী থাকে কম। আমরা সব সময় টাটকা খাবার রাখি। সবকিছুই টাটকা রাখার চেষ্টা করি। এখানে রুই, রূপচাঁদা, কাচকি, মলা, শোল, কই প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। রোগীদের জন্য ছোট মুরগি কিনি। ক্যানসার রোগীরা টাটকা খাবার ছাড়া খেতে পারেন না। আর খাবার তৈরি করি সব সময় অন্যের চাহিদা অনুযায়ী। যে যেভাবে খেতে চায় সেভাবে। ’
রোজার সময় ১২টি রুমে বিনা পয়সায় ইফতারি করান খুলনার মেয়ে স্বপ্না ভাবি। সব বাংলা ইফতার পাওয়া যায়। প্রতি ঈদে দেড়শো থেকে ২শ মানুষের রান্না করতে হয় তাকে।
স্বপ্ন কুঠিরে পাওয়া যায়, ভাত, ডাল, সবজি, ছোট মাছ দিয়ে সবজি, শুঁটকি, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, চিকেন ও ভেজিটেবল স্যুপ, দেশি মুরগি, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, খিচুড়ি, ডিম, পরোটা, আলু পরোটা, চিকেন বিরিয়ানি, বিফ বিরিয়ানি, ফিশ ফ্রাই, হাঁসের মাংস প্রভৃতি। একবেলা খাবারে জন্য ব্যয় করতে হবে আইটেম ভেদে দেড় থেকে ৪শ বাথ (বাংলাদেশি টাকায় ৩ থেকে ৫শ টাকা)।
স্বপ্না ভাবির রেস্টুরেন্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য ঘরোয়া খাবারের ঘরোয়া রান্না। রেস্টুরেন্টের পরিবেশও বেশ ঘরোয়া। বাংলাদেশি ছাড়াও ভারতীয় কিংবা অন্য দেশের লোকজনও শখ করে খেতে আসেন এ রেস্টুরেন্টে।
ভাবির হাসিমুখে আপ্যায়ন আর রান্নার দারুণ স্বাদ বিদেশের মাটিতে বাঙালিকে বারবার টানবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এএ