ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি, বাংলাদেশ) পাশে থেকে সব ধরনের টেকনিক্যাল ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার অঙ্গীকার করেছে এশিয়ান প্যারালিম্পিক কমিটি (এপিসি)। বাংলাদেশের বিশেষ ক্রীড়াবিদদের (প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়) উন্নতি-উন্নয়নে যে সমস্ত অন্তরায় রয়েছে সেসব দূরীকরণে পাশে থেকে কাজ করারও দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এপিসি’র প্রেসিডেন্ট মজিদ রাশেদ এবং সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক সোই।
চীন থেকে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি বাংলাদেশের (এনপিসি) মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান। এ ব্যাপারে মাকসুদুর রহমান জানান, ‘চীনে শুধু আমরা এশিয়ান প্যারা গেমসেই অংশ নেইনি। কূটনৈতিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সভাও করেছি। সেসব সভা ছিল দারুণ ফলপ্রসূ। বাংলাদেশের বিশেষ ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে আরো কি কি কাজ করা যায়। এ ব্যাপারে এপিসি আমাদের কতটা কি করতে পারবে সেসব বিষয় ছিল আমাদের সভার মূল এজেন্ডা। এপিসির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশের পাশে ওনারা আছেন এবং আমাদের খেলোয়াড়দের উন্নয়ন-উন্নতিতে সব সময় সহযোগতিা করবেন তারা। সভা শেষে আমার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন এপিসির প্রেসিডেন্ট ও সিইও। একইভাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এপিসির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও’কে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ’
এশিয়ান প্যারালিম্পিক কমিটির অধীনে থাকা ৪৫ দেশের অংশগ্রহণে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হ্যাংজু শহরে গেল ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় এশিয়ান প্যারা গেমসের চতুর্থ আসর। শেষ হয় ২৮ অক্টোবর। সদ্য শেষ হওয়া ‘এশিয়ান প্যারা গেমস-২০২৩’ সমাপ্ত করে দেশের পথে এখন বাংলাদেশের বিশেষ ক্রীড়াবিদ, কোচ, কর্মকর্তারা। প্রথমবারের মতো এত বড় একটি আসরে অংশ নিল লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
আসর থেকে বড় কোনো সাফল্য না এলেও প্যারা ব্যাডমিন্টন এবং প্যারা আরচাররা খারাপ করেননি। এ ব্যাপারে প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক এক সময়ের কোর্ট কাঁপানো শাটলার-কোচ এনায়েত উল্যা খান বলেন, ‘এশিয়ান প্যারা গেমসে এবার দুজন প্যারা শাটলার অংশ নিয়েছেন। প্রথমবার অংশ হিসেবে তাদের পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। শাহরিয়ার এবং ইয়ামিন যেমন জয় পেয়েছেন; শক্ত প্রতিপক্ষের কাছে আবার লড়াই করে হেরেছেও। আমি তাদের নিয়ে আশাবাদী ভবিষ্যতে তারা বড় আসরগুলোতে আরো ভালো খেলবে। আসরে অংশ নেয়ার আগে আমার খেলোয়াড়রা দু’বেলার কঠোর অনুশীলন করেছে নিয়মিত। সামনে আরো বড় আকারে জাতীয় পর্যায়ে প্যারা ব্যাডমিন্টনের আসর হবে। নতুন নতুন মেধাবী খেলোয়াড় তুলে আনার কাজ নিয়মিত হচ্ছে; সেটা চলমান থাকবে। আমাদের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয় জাহিদ আহসান রাসেল স্যার সব সময় আমাদের উৎসাহ যুগিয়ে আসছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা, চেষ্টাতেই আমরা এশিয়ান প্যারা গেমসের মতো আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের এনপিসিও দারুণ কাজ করছে। বিশেষ করে মাকসুদ স্যার, আমিনুল স্যার, সালাম স্যার, বিগ্রেডিয়ার স্যারসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সবাই প্যারা খেলোয়াড়দের উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এবং ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি, বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনায় এবার এশিয়ান প্যারা গেমসের মতো বড় আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশে শারীরিক প্রতিবন্ধীতার শিকার বিশেষ ক্রীড়াবিদরা।
চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত এশিয়ান প্যারা আসরে এবার ৬টি ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের মোট ১৪ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নেন। এর মধ্যে প্যারা অ্যাথলেটিকসে ৩ জন, প্যারা আর্চারিতে ৫ জন, প্যারা ব্যাডমিন্টনে ২ জন, প্যারা দাবায় ১ জন, প্যারা টেবিল টেনিসে ২ জন এবং প্যারা সুইমিংয়ে অংশ নেন ১ জন খেলোয়াড়। ২৪ সদস্যের দলটি গেল ১৬ অক্টোবর চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
এর তিনদিন পর দলের সঙ্গে যোগ দেন এনপিসির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ। কারণ ১৮ অক্টোবর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রীতি প্যারা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট আয়োজন করে এনপিসি। এনায়েত উল্যা খানের পরিকল্পনায় এবং নারী তারকা শাটলার-কোচ এলিনা খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শেখ রাসেল প্যারা ব্যাডমিন্টন খেলা শেষ করে পরদিন চীনের ফ্লাইট ধরেন এনপিসির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ। গেমসে খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাসহ ২৫ জনের দলটির নেতৃত্ব ছিলেন এনপিসির মহাসচিব। আর আসরে বাংলাদেশের চিফ দ্য মিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন এনপিসির কোষাধ্যক্ষ ড. আমিনুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩
এআর/এএইচএস