প্রতিভা এমন একটি ব্যাপার যাকে কখনও দমিয়ে রাখা যায় না। শুধু একে সুযোগ, সহযোগিতা ও পরিচর্যা করতে হয়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাবায় ৬ টি স্বর্ণজয়ী খুদে দাবাড়ুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাকর এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার মতো সবরকম যোগ্যতা থাকার পরও খুশবু শুধু অর্থের অভাবে নভেম্বর মাসে ইতালি উড়াল দিতে পারছে না, যাওয়া হয়নি মিশরেও। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশার।
খুশবু নিজেও ভীষণরকমের হতাশ। সেই সঙ্গে তাকে সাহায্য করার জন্য সমাজের বিত্তবান ও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে আবেদনও জানিয়েছে খুব ছোট্ট করে, ‘কেউ কি আমাকে দুটি টিকিট দিতে পারেন না!’ একটি সংগঠন থেকে আন্তর্জাতিক দাবায় যাবার টিকিট দেওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ করে শেষ মুহূর্তে না বলায় চোখে অন্ধকার দেখেছেন খুশবুর বাবা। এয়ার টিকিট ছাড়াও অংশগ্রহণ ফি ও খাবার আবাসন খরচ, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন থেকে অংশগ্রহণ ফি পাবে খুশবু। দাবা ফেডারেশন এর সহায়তায় ২০২২ এ মালদ্বীপে ওয়েস্টার্ন এশিয়ান দাবায় স্বর্ণজয়ী এই খুদে দাবাড়ু ও নিজ খরচে উজবেকিস্তানে এশিয়ান স্কুল ২০২৩ দাবায় ১ টি স্বর্ণ ১ টি রৌপ্য পদক পেয়েছেন ।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবায় এই অল্প বয়সেই চোখ ধাঁধানো সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে খুশবু। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবায় ১৬ টি পদক জয়ী খুশবু।
২০১৮ সাল থেকে জাতীয় বয়সভিত্তিকে অনূর্ধ্ব-৮, অনূর্ধ্ব-১০ বিভাগে বয়সভিত্তিক চ্যাম্পিয়ন, বর্তমান অনূর্ধ্ব-১২ বালিকা চ্যাম্পিয়ন, ২০২১ ও ২০২২ সালে শেখ রাসেল স্মৃতি স্কুল দাবা প্রতিযোগিতায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পদক লাভ করে। আন্তর্জাতিক দাবায়ও কিস্তিমাত করেছে খুশবু। ২০১৮ সালে উজবেকিস্তানে ওয়েস্টার্ন ইয়ুথ এশিয়া চেস টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-৬ বিভাগে এবং থাইল্যান্ডে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-৬ বিভাগে স্বর্ণপদক, ভারতের কলকাতায় দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল দাবায় পদক জেতে। থাইল্যান্ডের শেষের টুর্নামেন্টে অন্য দুটি ক্যাটাগরিতে দুটি রৌপ্যপদকও লাভ করে।
২০২২ সালে বেগম লায়লা আলম মহিলা দাবা টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ন্যাশনাল বি মহিলা দাবায় ২ য় স্থান অর্জন করেন।
২০১৯ সালে এলিগেন্ট জাতীয় যুব দাবায় অনূর্ধ্ব-৮ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৯ জাতীয় জুনিয়র দাবায় (অনূর্ধ্ব-২০ বালিকা) ৩য় স্থান তাম্রপদক লাভ করে খুশবু। এ বছরই অনূর্ধ্ব-১৩ স্ট্যান্ডার্ড দাবা টুর্নামেন্টে এবং ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত মুম্বাই আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব-৮ বিভাগে রানারআপ হয়েছে। ২০২৩ উজবেকিস্তানে এশিয়ান স্কুল দাবায় অনূর্ধ্ব-১১ বালিকা বিভাগে ১ টি স্বর্ণ ও ১ টি রৌপ্য পদক অর্জন করে, ২০১৯ উজবেকিস্তানে এশিয়ান স্কুল দাবায় অনূর্ধ্ব-৭ বালিকা বিভাগে ২ টি স্বর্ণ ও ১ টি রৌপ্য পদক অর্জন করে। ২০২১ এশিয়ান স্কুল দাবা অনলাইন টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-০৯ বালিকা বিভাগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, এশিয়ান ন্যাশনস কাপ অনলাইন দাবা অনূর্ধ্ব-১৪ এ বোর্ড চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালে জাতীয় যুব দাবায় অনূর্ধ্ব-১০ বালিকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন, মালদ্বীপ এ ওয়েস্টার্ন এশিয়ান দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ এ অনূর্ধ্ব-১০ বালিকা বিভাগে স্বর্ণ পদক জয়ী। শেখ রাসেল এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্কুল দাবায় (১-৫ শ্রেণি বালিকা) অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
দেশি-বিদেশি সব ধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে খুশবু ১২ টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৮টিতে রানারআপ এবং ১টিতে তাম্রপদক পেয়েছে। কোন সন্দেহ নেই, মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো সাফল্য।
মাত্র পাঁচ বছরেই দাবার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। বাবার কাছে দাবার হাতেখড়ি খুশবুর। ২০১৭ সালে প্রতিযোগিতামূলক আসরে খেলতে নেমেই ফিদে আন্তর্জাতিক রেটিং লাভ করে। দেশকে পাঁচবার আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দিয়েছে মাত্র এগারো বছরের ছোট্ট মেয়ে খুশবু। সংখ্যাটাকে ছয়-এ উন্নীত করার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে তাকে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবই তার এই সুনীল স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই আসরে যদি খুশবু অংশ নিতে পারে তাহলে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনার পাশাপাশি খেতাব বা নর্ম অর্জনের সুযোগ রয়েছে তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
এআর/এএইচএস