ঢাকা: নিজের পরিধিটা এবার আরেকটু বাড়াতে চান জলকন্যা। দেশের জন্য আরও ঘাম মেশাবেন জলে।
তাই নিজেকে আরও কঠোর অনুশীলনে ঢেলে সাজাতে চান, দেশের হয়ে এবার তিনটি স্বর্ণপদক গলায় পাওয়ার স্বপ্ন তার চোখে।
দ্বাদশ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে বাংলাদেশকে স্বর্ণ-সম্মান এনে দেওয়া মাহফুজা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে জানান নিজের এসব স্বপ্ন-পরিকল্পনার কথা।
মাহফুজা বলেন, আগামী এসএ গেমস পর্যন্ত নিজের এ পারফর্মেন্স ধরে রাখতে চাই। তিনটি বছর নৌ-বাহিনীর প্রশিক্ষণে নিজেকে আরও ঝালাই করার সুযোগ পেয়েছি। প্রশিক্ষকদের উৎসাহে নিজের গণ্ডিটা তাই বাড়াতে চাই। আরেকটি ইভেন্টে নিজেকে পাকা করতে চাই, ২০০ মিটারের বুক সাঁতারেরও অনুশীলন করবো এবার।
সামনে আসছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সাঁতার প্রতিযোগিতা। অপেক্ষায় আছেন মাহফুজা। ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে টেক্কা দেবেন সেই আসরেও।
দেশের মানুষের কাছে নতুন করে পরিচয় করাতে আর হয় না তাকে। বাংলাদেশের স্বর্ণকন্যা তিনি। শুধু যশোরের মেয়ে নন, তিনি এখন সমগ্র বাংলাদেশের, আমজনতার আপন। কাবাডি খেলোয়াড় বাবার মেয়ে, মায়ের উৎসাহে নিজেকে সাজান তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী মাহফুজা নৌ-বাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছিলেন। সেটি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া চলছে। নৌ-প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বিষয়টির খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
শুধু মাহফুজা নন, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিজেদের আরও মেলে ধরার সুযোগ দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এদিকে মাহফুজার সাফল্যের বিষয়ে আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন বলে জানান তার প্রশিক্ষকরা। সাঁতারের প্রশিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান (চুক্তিভিত্তিক) ও সিপিও(এস) এম জুয়েল আহমেদ জানতেন, ৫০ মিটারে স্বর্ণপদকটি পাবেন মাহফুজা।
কিন্তু তাদের আনন্দের সীমা রইলো না, যখন ১০০ মিটারের স্বর্ণপদকও গলায় ঝোলে জলকন্যার। পরে ৫০ মিটারের স্বর্ণপদকটি যেহেতু প্রত্যাশিতই ছিলো, তাতে কেউ আর অবাক হননি।
মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, এবার তিনি ২০০ মিটারের জন্যও চেষ্টা করবেন। মাহফুজাকে নিয়ে আমরা আশাবাদী। তার যা বয়স, তাতে এখনো সময় আছে এমন টার্গেট জয়ের।
তিনি বলেন, ভারতে যাওয়ার আগে গোপালগঞ্জে তিনি এতোটাই ভালো টাইমিং দেখিয়েছিলেন যে, আমরা তাকে নিয়ে আশা বাড়াই। তিনি আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করছিলেন। যে বয়স তার, আরেকটা এসএ গেমস পাবেন, সেখানে নিশ্চয়ই আরও ভালো করবেন।
কোরিয়ার কোচ পার্ক তে গুণ আরও ২ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলেও জানান তারা।
মাহবুব ও মাহফুজা আশা করছেন, আগের চেয়েও বেশি সহযোগিতা করতে পারবেন পার্ক তে গুণ। কারণ, টিম মেম্বারদের কে কেমন ও কীসে ভালো- সেটি এখন আরও ভালো বুঝবেন পার্ক তে গুণ। তিনি তদারকি করবেন মাহফুজার নৈপুণ্যের।
সেনাবাহিনী ও নৌ-বাহিনী একসঙ্গে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে বলেও সিদ্ধান্ত রয়েছে, যাতে কয়েকটি স্বর্ণপদক পাওয়া যায় সামনের আসরগুলোতে।
মাহবুব বলেন, মাহফুজা যেমন নতুন করে ২০০ মিটারের জন্য প্রস্তুতি নেবেন, তেমনি আগের নৈপুণ্যও ধরে রাখতে অনুশীলন করবেন। অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই। সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। দেশে নিজেদের ও বিদেশি প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান শুধু নয়, প্রয়োজনে তাদের দেশের বাইরেও পাঠানো হতে পারে।
এ প্রশিক্ষক বলছেন, সামনে আরও কয়েকটি স্বর্ণপদক আনার মতো খেলোয়াড় রয়েছে বাহিনীতে। আসিফ ও মাহমুদ সামনে ভালো করবেন। মাহফুজুর রহমান এখনো ভালো। সামনেও তার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেএসপি’র আরিফুর রহমান আগামী এসএ গেমসে খেলবেন। এবার এসএসসি পরীক্ষা থাকায় তিনি এসএ গেমসে অংশ নিতে পারেননি।
মাহফুজা সবার দোয়া চেয়ে বলেন, ‘সেই ছোট্টবেলা থেকে নিজের আগ্রহের ভিত্তিতেই শুধু নয়, অন্যদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় আজকের আমি। তাই বাকি পথটুকুতেও সবার এ সহযোগিতা ও আশীর্বাদ চাইবো। আসলে দেশের জন্য কিছু করতে পারার সুযোগ খুব সৌভাগ্যবানরা পান। নিজেকে তেমনই একজন ভাবি আমি। দেশ ও মানুষ অামাকে এতো দিয়েছে, আমিও নিজের সবটুকু তাই দিতে চাই’।
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এসকেএস/এএসআর