বেঙ্গালুরু (কর্ণাটক) থেকে: সকাল বেলার চার্চ স্ট্রিটের বেঙ্গালুরুকে ভীষণ সৌম্য মনে হলো। রাস্তায় মানুষের যত্রতত্র ছোটাছুটি নেই, পার্টির ব্যস্ততা নেই, বারগুলোও বন্ধ।
জাঁকজমকপূর্ণ শহরটিতে দিনের অন্য ভাগেও যে ব্যস্ততা থাকে সকালে তার চাইতে অবিশ্বাস্য কম মানুষের আনাগোনা দেখে ভালো লাগার একটি অনুভূতি আপনা আপনিই কাজ করতে শুরু করলো।
কিন্তু যে দৃশ্যটি দেখে সেই ভালো লাগা পরক্ষণেই উবে গেলো, তা হচ্ছে আকাশের কালো মেঘের আনাগোনা। কেননা, আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই এই শহরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ।
অনেকটা বৃষ্টির শঙ্কা নিয়েই সকালটা শুরু হলো বেঙ্গালুরুর মানুষের।
সে যাই হোক, সোমবার (২১ মার্চ) সকালের বর্ণনা শুনে কেউ ভাববেন না; বেঙ্গালুরু সিটি সব সময়ই এতোটা জনমানবহীন, বিশেষ করে চার্চ স্ট্রিটে।
রোববার (২০ মার্চ) এই চার্চ স্ট্রিটেই মানুষের ঢল নেমেছিল। একে তো সাপ্তাহিক ছুটি তার ওপর আবার বেঙ্গালুরুর তাবত নাইট ক্লাব, বার, বড় শপিং মল, উন্নতমানের রেস্তোরাঁগুলো সবই এ এলাকায়।
তাই রোববার বিকেল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত স্থানীয় ও বিদেশি তরুণ-তরুণীদের পশ্চিমা ধাঁচের পদচারণায় মুখরিত ছিল চার্চ স্ট্রিট।
বেঙ্গালুরু আসার পর থেকেই শহরটির পরিবেশ ও সৌন্দর্য এবং আধুনিকতা আমাদের বেশ নাড়া দিয়েছে। টানা চারদিন হুগলি তীরের শহর কলকাতার ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকার পর এখানে মনে হলো, কী শান্তি আহ! শান্তির বেঙ্গালুরু!
সত্যিকার অর্থেই বেঙ্গালুরু ভীষণ শান্তির শহর। সঙ্গে আরও দু’টি বিশেষণ না দিলেই নয়-তা হলো আধুনিক ও গোছালো পরিবেশ।
এখানকার প্রতিটি বাড়ি, অফিস, হাসপাতাল ও রাস্তাঘাট সব কিছুর মধ্যেই আভিজ্যতার ছোঁয়া রয়েছে। সব চাইতে বড় যে বিষয়টি এখানে চোখে পড়ছে তা হলো, বেঙ্গালুরুতে সব সময়ই কেমন যেন পার্টি পার্টি ভাব। ভীষণ জাঁকজমকপূর্ণ দক্ষিণ ভারতের এই শহরটি।
শহরটি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও। বিশাল বিশাল একেকটি রাস্তা, ফুটপাত, মানুষের বেশভূষা ও হালচাল দেখে মনে হয় যেন ইউরোপের কোনো শহর!
আর এই বিশাল রাস্তাগুলোর মধ্যে সব চাইতে প্রসিদ্ধ ‘এমজি’ বা মহাত্না গান্ধি রোডটি। রাস্তাটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যেমন তেমনি সৌন্দর্যেও এখানকার সব রাস্তার চাইতে বেশি দৃষ্টি নন্দন।
এখানকার মানুষের জীবন ব্যবস্থাও দারুণ উন্নত। যা এনে দিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি ও শিল্প। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ বুনিয়াদ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এখানেই গড়ে উঠেছে ভারতের সবচাইতে বড় আইটি শিল্প।
প্রায় ৩৫ শতাংশ ভারতীয় এই আইটি শিল্পের সঙ্গ জড়িত থেকে বেঙ্গালুরুকে গড়ে তুলেছেন ভারত বর্ষের সব চাইতে বড় ও উচ্চ প্রযুক্তির আইটি শহর হিসেবে।
আর আইটি শিল্পে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বেঙ্গালুরুকে ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে বেঙ্গালুরুর এই আইটি শিল্পই ভারতকে এনে দিয়েছিল ৪৩৩. ৮ বিলিয়নের মতো সমৃদ্ধ রাজস্ব।
রয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। উনিশ শতকের শুরু থেকে শুরু হওয়া পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থা তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে বেঙ্গালুরুকে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। এরমধ্যে বেঙ্গালুরু ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, ন্যশনাল সেন্টার অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সাইন্টিফিক রিসার্চ ও ভিভেসভারায়া টেকনলোজিক্যাল ইনস্টিটিউটসহ আরও অনেক নামি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
আভিজাত্যের শহরেই সোমবার রাতে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। ২৩ মার্চে হবে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ভারত।
তবে ভারতের অন্যান্য শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে যতটা উন্মাদনা রয়েছে বেঙ্গালুরুতে সেটা সেভাবে চোখে পড়েনি। এখানকার স্থানীয়দের বেশি আগ্রহ বার-রেস্তোরাঁ কেন্দ্রিক আড্ডাতেই।
শুধু চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম চত্বরে গেলেই মনে হবে যে এখানে বিশ্বকাপের খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
এমএ