ঢাকা: মাঝে আর মাত্র দু’টি মাস। তারপরেই ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে ৫ থেকে ২১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট অন দ্য আর্থ’ খ্যাত বিশ্ব ক্রীড়ার সব চাইতে বড় আসর ‘রিও অলিম্পিক’।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় অলিম্পিকের এই আসরেও অংশ নেবে বাংলাদেশ।
ক্রীড়ার মেগা এই আসরকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে শেষ সময়ের বাছাই ও প্রস্তুতি পর্ব। সেই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে থাকার কথা নয় বাংলাদেশের প্রস্তুতিও।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, শেষ সময়ের প্রস্তুতি পর্বটি ঠিকমতো সম্পন্ন করছেন না লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা! অবহেলা আর অধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের শেষ সময়ের অনুশীলন।
এমনিতেই এদেশের অ্যাথলেটরা পারেননি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (আইওসি) বেধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী নিজেদের যোগ্যতার শতভাগ প্রমান দিয়ে অলিম্পিকে যেতে। যেতে হচ্ছে ওয়াইল্ড কার্ড বা অনেকটা বিশেষ বিবেচনায় অপেক্ষমান তালিকায় থেকে। এরপর আবার ঠিকমতো অনুশীলন করছেন না।
ফলে, একদিকে তাদের নিয়ে যেমন নির্ভার থাকা যাচ্ছে না, তেমনি বাড়ছে হতাশাও। তাদের নিয়ে একরকম দুশ্চিন্তায় আছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য সচিব গ্রুপ ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম।
অলিম্পক গেমসকে সামনে রেখে অ্যাথলেটদের প্রশিক্ষণে আগ্রহের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে তিনি জানান, ‘ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে আমি খুবই হতাশ কারণ এর কোন ধারাবাহিকতা নেই। মাঝে মাঝে তারা ট্রেনিং করে আবার করে না। তবে যে ব্যাপারটা আরও হতাশার সেটি হলো অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করুক আর না করুক আমাদের স্ট্যান্ডার্ডে ওরা এগিয়ে নিচ্ছে না। আমি তাদের মধ্যে কোন প্রতিশ্রুতিই দেখছি না। ’
অ্যাথলেটদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে তিনি আরও জানান, ‘সুইমিং, আর্চারি ও বক্সিং এই তিনটি ডিসিপ্লিনে প্রশিক্ষণের জন্য আইওসি এই মুহূর্তে আমাদের আর্থিক অনুদান দিচ্ছে। সুইমিংয়ের প্রশিক্ষণ দুই জায়গায় চলছে। একটি ঢাকায় আরেকটি ব্যাংককে। আর্চারি চলছে আর্চারি ফেডারেশনে। বক্সিং চলছে ঢাকার বাইরে। আর অ্যাথলেটিক্স চলছে বিকেএসপিতে। ’
মূলত, আওসি থেকে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া সাপেক্ষেই বাংলাদেশ এবার রিও অলিম্পিকে আর্চারি, বক্সিং, সুইমিং, শুটিং, ভারোত্তলন ও অ্যাথলেটিক্স এই ৬টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে।
ওয়াইল্ড কার্ড শব্দটি শুনে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে এটি আবার কী? অলিম্পিকে একজন অ্যাথলেট দুই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকেন। একটি হলো অলিম্পিক কোয়ালিটি টাইমিং (অএলটি), আরেকটি হলো অলিম্পিক কোয়ালিটি স্কোর (অএলএস)। অর্থাৎ, যোগ্যতার প্রমান দিয়ে যাওয়া। এই দু’টি বিষয় যে দেশের অ্যাথলেটদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকবে তাদের জন্যই এই ওয়াইল্ড কার্ড। এটি অনেকটা অপেক্ষমান তালিকা বা বিশেষ বিবেচনায় থাকার মতো। মজার ব্যাপার হলো, এই বিশেষ বিচেনায়ও ভাগ্যদেবীর প্রসন্ন দৃষ্টি থাকা আবশ্যক।
সংগত কারণেই এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ এই কাঙ্খিত ওয়াইল্ড কার্ডটি পাবে কী না। বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ও মিডিয়া কমিটির সদস্য সচিব কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের কাছে। উত্তরে তিনি যা জানালেন, ‘আমাদের অলিম্পিক নির্ভর করে ওয়াইল্ড কার্ডের উপর। আর এই ওয়াইল্ড কার্ড আমরা কোন কোন ডিসিপ্লিনে পাব তা এখনও ঠিক হয় নি। এটা ঠিক হবে জুনে। আমাদের কয়েকটি ডিসিপ্লিনকে তারা স্কলারশিপ দিয়েছে। তার মধ্যে আর্চারি, বক্সিং, সুইমিং, শুটিং, ভারোত্তলন ও অ্যাথলেটিক্স। তবে আমি আশা করছি, আমরা ওয়াইল্ডকার্ড পাব যেহেতু আমরা স্কলারশিপ সদস্য। যদি পাই তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের ভাগ্য ভালো। ’
রিও অলিম্পকে অংশ নিতে ৬টি ডিসিপ্লিনে অংশ নিতে এরই মধ্যে ছয়জনের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। সব কিছু ঠিক থাকলে ছয়জনই অলিম্পিকে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলেও জানালেন চপল। ‘আমরা ছয়জনের জন্য আবেদন করেছি। তবে চাওয়া মানে পাওয়া নয়। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে। আন্তর্জাতিক ৠাংকিং দেখবে, ৠাংকিং অব পারফরম্যান্স দেখবে তারপরে দিবে। আমি বিশ্বাস করি ওয়াইল্ড কার্ড পেতে যতটুকু যোগ্যতা থাকা দরকার তা আমাদের কমবেশি আছে। অ্যাথলেটিকসে আমাদের রেটিং কম আছে। সুইমিং, শুটিং, আর্চারি ও ওয়েট লিফটিংয়ে পেতে পারি। তবে এর সবই সিদ্ধান্ত নেবে তিপারটাইট কমিটি। ’
এই তিপারটাইট কমিটির সিদ্ধান্তে শুটিংয়ে বাংলাদেশ থেকে আব্দুল্লাহেল বাকি এরই মধ্যে ওয়াইল্ড কার্ড নিশ্চিত করেছেন জানিয়ে চপলের সঙ্গে অনেকটা সুর মিলিয়েই ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রফিকুল ইসলাম বললেন ‘আমরা শ্যুটিং ছাড়াও বাকি আরও ৫টিতে পাব বলে আশা করছি। ইতোমধ্যেই আব্দুল্লাহেল বাকির ওয়াইল্ড কার্ড নিশ্চিত হয়েছে। ’
শুটিংয়ের বাইরে সাঁতারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে এই ওয়াইল্ড কার্ড পাবে বলেও দাবী করছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। রিও অলিস্পিকে অংশ নিতে আর্চারি থেকে শ্যামলী রায় ও ইমদাদুল হক মিলনের নামে আবেদন করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। এর মধ্যে পাবেন একজন। শুটিংয়ে আব্দুল্লাহেল বাকি ও সুবর্ণার জন্য আবেদন করা হয়েছিল এর মধ্যে আব্দুল্লাহেল বাকি ইতোমধ্যেই কার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
ভারোত্তলনে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার, বক্সিংয়ে আলামিন, সাঁতারে সাগর ও সোনিয়া আক্তার এই দুই জনের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে এবার গলফেও অলিম্পিকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী করেছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তবে গেমসে অংশ নিতে হলে তাকে এবছরের জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে হবে ৠাংকিংয়ের ৬০ জনের মধ্যে।
সব শেষে একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করে চপল বলেছেন, একটি বিষয় আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই ভুল করে থাকে। আর সেটি হলো, তারা মনে করে যে গেল এসএ গেমসে যারা স্বর্ণ জিতেছেন তারা অবশ্যই অলিম্পিকে যেতে পারবেন। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসএ গেমস একটি আঞ্চলিক আসর আর অলিম্পিক হচ্ছে বৈশ্বিক। অতএব একটার সাথে আরেকটা মিলিয়ে ফেলা যাবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ১৫ মে, ২০১৬
এইচএল/এমআরএম