ঢাকা: আর মাত্র একমাস। তারপরই ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে মহাসমারোহে পর্দা উঠবে দ্য ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকের।
ক্রীড়ার এই মহাযজ্ঞকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মতো শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে, ভাবনার বিষয় হলো হাতে সময় কম থাকলেও এখন পর্যন্ত শুটিং ছাড়া আর কোনো ডিসিপ্লিনেরই কাঙ্ক্ষিত ওয়াইল্ড কার্ড (প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি) হাতে পায়নি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)।
অলিম্পিকের এ আসরে অংশ নিতে বক্সিং, আরচারি, ভারোত্তোলন, শুটিং ও সুইমিং ডিসিপ্লিনে ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য ‘অলিম্পিক ট্রিপার্টাইট কমিটি’র কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ।
আবেদন অনুযায়ী প্রতিটি ডিসিপ্লিনেই কার্ড পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়টিও এখনও নিশ্চিত নয় বিওএ’র কর্তা ব্যক্তিরা।
অলিম্পিকে অংশ নিতে আর্চারি থেকে শ্যামলী রায় ও ইমদাদুল হক মিলনের জন্য আবেদন করেছে বিওএ। এর মধ্যে পাবেন একজন। শুটিংয়ে আব্দুল্লাহেল বাকি ও সুবর্ণার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল আব্দুল্লাহেল বাকি কার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া, ভারোত্তোলনে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, বক্সিংয়ে আলামিনের জন্য, সাঁতারে সাগর ও সোনিয়া আক্তারের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য আবেদন গেছে অলিম্পিক ত্রিপার্টাইট কমিটি।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিওএ’র কোষাধ্যক্ষ ও মিডিয়া কমিটির সদস্য সচিব কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকেবলেন, সবশেষ আপডেট অনুযায়ী শুটিংয়ে আব্দুল্লাহেল বাকি ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছে। বাদ বাকি কারা পাবে, সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি। এ মাসের শেষে আমরা এই বিষয়ে আপনাদের জানাতে পারবো। আমরা পাঁচটি ডিসিপ্লিনের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। কে কে যেতে পারে, সেটা নির্ভর করে ত্রিপার্টাইট কমিটির ওপর।
তবে বিওএ’র একটি সূত্র মতে, এই পাঁচটি ডিসিপ্লিনের বাইরে অ্যাথলেটিকস থেকেও কারও অলিম্পিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
অলিম্পিককে সামনে রেখে পাঁচটি ডিসিপ্লিনের প্রস্তুতি নিয়ে বিওএ’র ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য সচিব গ্রুপ ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বলেন, শুটিংয়ে আমাদের তিন জন বিদেশি কোচ আছে। ইউরোপিয়ান একজন, বাকি দু’জন কোরিয়ান। আর্চারিতে একজন কোরিয়ান কোচ, সুইমিংয়ে একজন কোরিয়ান কোচ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তবে সুইমিংয়ে যে দু’জনের নাম পাঠানো হয়েছে, তারা ব্যাংককে অনুশীলন করছে। দেশেও সুইমিংয়ের জন্য একজন কোরিয়ান কোচ আছেন। ভারোত্তোলনের ছেলে-মেয়েরা কিছুদিন আগে রাশিয়ায় একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ ওরা অনুশীলনের মধ্যেই আছে। তবে আমরা ভারোত্তোলনের জন্য এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করিনি। ওয়াইল্ড কার্ড পেলেই ব্যবস্থা করবো।
অলিম্পিকে কোনো কিছু অর্জন সম্ভব কিনা প্রশ্ন করলে রফিকুল বলেন, অলিম্পিকের জন্য সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থাকতে হয় ন্যূনতম ৮ বছরের। প্রথম চার বছর থাকে যোগ্যতা অর্জনের। আর পরের চার বছর থাকে পদক পাওয়ার। যা আমরা পারিনি। তবে শুটিং ও আর্চারিতে কিছু হলেও হতে পারে।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে রওনা হবে ১২ সদস্যের বাংলাদেশ অলিম্পিক কন্টিনজেন্ট।
এদিকে, এবারই প্রথম অলিম্পিকে গলফে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। তবে এক্ষেত্রে একটি শর্তও আছে। তা হলো, সিদ্দিকুরকে অলিম্পিকে অংশ নিতে হলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে হবে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৬০ এর মধ্যে। গত মাসে ইউরোপিয়ান ওপেন শেষে ৫৪ নম্বরে ছিলেন সিদ্দিকুর। শঙ্কার বিষয় হলো, গত ১৬ জুন থাইল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাবের সামুই পার্কে শুরু হওয়া কুইন্স কাপে ব্যাকপেইনের জন্য ছিটকে গিয়েছেন লাল-সবুজের এই গলফার। তাই অলিম্পিকের বেঁধে দেওয়া সময় পর্যন্ত র্যাংকিং ধরে রাখতে পারেন কিনা সে নিয়ে উদ্বেগ থাকছে।
অন্যদিকে, এবারের অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘জিকা ভাইরাস’। পুরো ব্রাজিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মশাবাহিত এই রোগটি অলিম্পিকের আয়োজনকে অনেকটাই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। তাই আয়োজকেরাও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন অংশগ্রহণকারী ২০৬ দেশের অ্যাথলেটদের ওপর।
এই সতর্কতার বাইরে থাকছে না বাংলাদেশও। জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে অলিম্পিকে যেতে হলে বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের জন্য বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মশারি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আয়োজকরা।
ভাইরাসটির সতর্কতা প্রসঙ্গে চপল বলেন, জিকার ব্যাপারে গেমস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে আমাদের উপদেশ দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের উপদেশ মতো প্রতিকার নেওয়ার। যেমন তারা আমাদের মশারি নিয়ে যেতে বলেছে। যদিও তারা এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
এইচএ/