তারার ভুবনে যোগ হলো নতুন চার মুখ। ‘প্যারাসুট অ্যাডভান্সড বেলিফুল স্টাইলিশ হেয়ার অব দ্য ক্যাম্পাস ২০১৪’ প্রতিযোগিতা থেকে বিনোদন অঙ্গনে এলেন চার তরুণী।
প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ময়মনসিংহের তরুণী রোকাইয়া রশিদ রেমির সঙ্গে হলো আড্ডার শুরুটা। তার চোখে-মুখে এখনও ক্লান্তি। কারণ গতকালই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি। নাম নিবন্ধন ও বাছাই পর্ব পেরোনোর দিনগুলোর কথা তার কাছে জানতে চাইলাম। মিষ্টি হেসে রেমি বললেন, ‘কখনও ভাবিনি চ্যাম্পিয়ন হবো। আমি ময়মনসিংহের মমিনুননেসা মহিলা কলেজে এইচএসসি পড়ছি। একদিন ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখি কলেজে এ প্রতিযোগিতার প্রচারণা চলছে। নাচ, অভিনয় ও র্যাম্প তিনভাবে অডিশন নেওয়া হচ্ছিল। এরপর নিজের ইচ্ছায় র্যাম্পমডেল হিসেবে অডিশন দিলাম। একদিন ফোনে শীর্ষ ২০ হিসেবে ঢাকায় আসার জন্য ডাক পেলাম। ’
রাজধানীর উত্তরায় অনুষ্ঠিত বাছাই পর্ব পেরিয়ে সেরা ২০-এ টিকে যাওয়ার পর প্রায় নয়দিন বাবা-মাকে ছাড়া থাকতে হয়েছে রেমিকে। প্রায়ই রাতে ভাবতেন সবকিছু ছেড়ে চলে যাবেন বাসায়। রেমি বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হতো। বাড়ির জন্য মন টানতো। আর অডিশনে প্রথমে ভয় পেতাম। বাবাকে অনেকবার বলেছি, এখান থেকে আমাকে নিয়ে যাও। তবে প্রতিযোগীতার প্রশিক্ষক ও সতীর্থরা সবাই ভালো ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলাম। ’
সারাদেশ থেকে প্রায় তিনলাখের বেশি মেয়েদের সঙ্গে লড়াই করে রেমি জিতে যান এই খেতাব। ‘প্যারাসুট বেলিফুল প্রতিভা’ রেমি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন তিন লাখ টাকার চেক ও পান রেদওয়ান রনির পরিচালনায় টিভিতে অভিনয়ের সুযোগ। পরিবারে বাবা মোঃ আব্দুল রশিদ, মা কাজলরেখা ও একমাত্র ছোট ভাই রায়াতকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।
পুরস্কার হিসেবে জেতা তিন লাখ টাকা কীভাবে খরচ করবেন জানতে চাইলে রেমি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিবারের জন্য কিছু উপহার কিনব এবং আমি নিজে একটি ভালোমানের মুঠোফোন কিনতে চাই। আমি স্কুল-কলেজে অভিনয় করেছি। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ভবিষতে ভালো অভিনেত্রী হতে চাই। ’
প্রতিযোগিতার প্রথম রানার আপ অতসী বেড়ে উঠেছেন যশোরে। তার পুরো নাম অতসী আমিন অনন্যা। পরিবারে চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট হলেও হাজার সুন্দরীকে পেছনে ফেলে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তাই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহটা বেশি তার।
অতসী বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই প্রতিযোগিতার প্রচারণা দেখে অনেকটা শখের বসে নাম নিবন্ধন করেছিলাম। ভাবিনি ডাক পাবো। তবে সেরা ২০-এ স্থান পেয়ে বেশ ভালো লেগেছে। উত্তরার ক্যাম্পের দিনগুলো সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি। সেখানে রেমির ছিল আমার রুম পার্টনার। আর গাজী রাকায়েত স্যারের ক্লাস ও ঈগল ড্যান্স গ্রæপের তানজীল ভাইয়ের নাচের ক্লাস থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ’
কোরবানি ঈদের একটি নাটকে অভিনয় করবেন অতসী। দুই লাখ টাকার সঙ্গে প্রথম রানারআপ হিসেবে এই সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তার বাবা রুহুল আমিন সরকারি চাকরি করেন। আর মা দিল আফরোজ গৃহিনী। পুরস্কারের টাকা দিয়ে কেনাকাটার একটা সংক্ষিপ্ত তালিকাও করে ফেলেছেন তিনি। অতসীর ভাষ্য, ‘মা খুব ধার্মিক। তার জন্য এই রমজানে একটি হিজাব, বাবার জন্য সুগন্ধি আর ভাইয়াকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিতে চাই। আর মন দিয়ে অভিনয় করতে চাই। ’
‘প্যারাসুট বেলীফুল প্রতিভা’ রুবাইয়াৎ কবির রাইনা হয়েছেন দ্বিতীয় রানারআপ। তার বাড়িও ময়মনসিংহে। তবে রেমির সঙ্গে আগে পরিচয় ছিল না তার। বাছাই পর্বে এসে পরিচয় হয় তাদের। এরপর তো এখন রীতিমতো ভালো বন্ধু। রাইনা ময়মনসিংহ মহিলা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা এমএন কবিরের যতেœই বেড়ে উঠেছেন। এক ভাই এক বোনের মধ্যে রাইনা বড়।
প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া ও সাফল্য পাওয়া নিয়ে রাইনা বলেন, ‘কলেজে আমার সেদিন হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে দেখলাম এ প্রতিযোগিতার অডিশন হচ্ছে। কি যে মনে হলো, সাহস করে নাম লেখালাম ও অডিশন দিলাম। এর দুই-তিনদিন পর ডাক পেয়ে ঢাকায় এলাম। অডিশনে সামিয়া আফরিন ও ইকবাল আহমেদের সামনে নাচ ও অভিনয় করেছি। এরপর তো ফাইনালে রানারআপ হলাম। মডেলিং করার ইচ্ছেটাই আমার বেশি। ’
সবার মুখ থেকেই শোনা গেল নাম নিবন্ধন আর অডিশনের গল্প। এবার জানা যাক ‘দ্য বেস্ট ইন্টারঅ্যাক্টিভ লেডি’র কথা। তিনি হচ্ছেন রেনেসাঁ খান। খেতাবটি একটু অন্যরকম। এ প্রতিযোগিতার মিডিয়া পার্টনার রেডিও টুডে এ খেতাব দিয়েছে রেনেসাঁকে। তারা চাইছিলেন মডেল-অভিনেত্রীর পাশাপাশি সারাদেশ থেকে বেরিয়ে আসুক একজন আরজে। যার গলা শুনবে সারাদেশ। লাখ লাখ প্রতিযোগী থেকে তারা নির্বাচিত করে রেনেসাঁকে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে মাস্টার্স পড়ছি। আমার অনেক আগে থেকেই ইচ্ছে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করার। সেই ইচ্ছে থেকেই এ প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো। প্রথমে তো ভেবেছিলাম লাভ হবে না। তবে শেষ পর্যন্ত অডিশনে ডাক পেলাম। এজন্য প্রথমত বাবাকে, এরপর বন্ধু তানি, পলি, মিতু, তনয় ও সাইফকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার বিচারক ছিলেন বন্যা মির্জা। আমাকে নেশাগ্রস্ত একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল। এরপর তো ইয়েস কার্ড পেয়ে গেলাম। ’
রেনেসাঁ খান শিগগিরই রেডিও টুডেতে চুক্তি অনুযায়ী একটি অনুষ্ঠানে কথাবন্ধু (আরজে) হিসেবে কাজ শুরু করবেন। তবে রেডিও কি আদৌ তিনি শোনেন? তার উত্তর, ‘সত্যি বলতে আগে প্রচুর শোনা হতো। এখন তেমন একটা শোনা হয় না। আমার প্রিয় আরজে ফাহিম ও রাজু। আর ২০১০ সালে আমি এটিএন রেডিওতে প্রায় এক বছর আরজে হিসেবে কাজ করেছি। তাই এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। পাশাপাশি ক্যামেরার পেছনে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে আছে। ’
আড্ডা শেষ করেই সবাই প্রস্তুত হয়ে গেলেন ফটোসেশনের জন্য। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর পর সবার মধ্যে ভেসে উঠলো উচ্ছ্বাসের প্রতিচ্ছবি। স্বপ্নপুরীর চার সুন্দরীর চোখে বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন!
বাংলাদেশ সময় : ১৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৪