হ্যালো তিশমা!
'কী খবর?'
এই তো! একটা অনুরোধ ছিল। রাখতে হবে।
'কী অনুরোধ? বলুন তো?'
তার আগে বলো, ফুটবল দেখো তো?
'অবশ্যই। '
অনুরোধটা বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য...
'বলুন। শুনে দেখি!'
'ওয়াকা ওয়াকা'র মতোই শাকিরার বিশ্বকাপ-সংগীত 'লা লা লা' দারুণ সাড়া ফেলেছে। ওটার বাংলা সংস্করণ করলে কেমন হয়?
'ভাবনাটা মন্দ না। করা যায়। '
আমরা (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম) মূল সুরের সঙ্গে খাপ খাবে এমন বাংলা কথা দেবো, নতুন সংগীতায়োজনের পাশাপাশি গাইবেন আপনি। সময় কিন্তু খুব একটা নেই।
'ঠিক আছে। কিন্তু সময় দিলে ভালো হতো। সমস্যা নেই, বাংলা কথাগুলো তৈরি করুন, আমি সংগীতায়োজনের কাজ শুরু করছি। '
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের উদ্যোগে শাকিরার বিখ্যাত গান 'লা লা লা'র বাংলা সংস্করণ তৈরির শুরুর গল্পটা ছিল এমন। গোটা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও চলছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। এই উচ্ছ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকেরে উদ্যোগে ‘লা লা লা’ গানটি বাংলায় তৈরি হলো।
২৮ জুন বিশ্বকাপ ফুটবলের নকআউট পর্ব শুরুর দিন ‘লা লা লা’ (বাংলাদেশ সংস্করণ) গানটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরই মধ্যে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম ও ইউটিউবে তিশমার গাওয়া গান এবং জয়ন্ত রোজারিও নির্মিত গানটির ভিডিও দারুণ সাড়া ফেলেছে।
বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি, কিন্তু তিশমা সমর্থন করেছিলেন ক্রোয়েশিয়াকে। কিন্তু দলটি প্রথম পর্বেই বাদ হয়ে গেছে বলে ভীষণ দুঃখ পেয়েছেন। তার ভাষ্য, 'ভালো করুক আর মন্দ করুক, আমি সবসময় ক্রোয়েশিয়াকেই সমর্থন করি। কারণ শৈশবের অধিকাংশ সময় আমি ওই দেশে কাটিয়েছি। ক্রোয়েশিয়ার ভাষায় কথাও বলতে পারি। এখনও সেখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। ওখান থেকে আসার সময় ওই দেশের জাতীয় পতাকাও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেটাই এবার বাড়ির ছাদে টাঙিয়েছি। '
তিশমা আরও জানান, ক্রোয়েশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপের বেশ কটি দেশেই তার শৈশব কেটেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটে। মাত্র চার বছর বয়সে পিয়ানো বাজানো শিখেছেন তিনি। এরপর ইউরোপিয়ান উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ও সঙ্গীততত্ত্বের ওপর লেখাপড়া করেছেন। ওস্তাদ সঞ্জীব দে, ওস্তাদ আক্তার সাদমানী এবং শম্পা রেজা-সহ আরও অনেকের কাছ থেকে ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন তিশমা। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছেন শ্রীনিকেতনের ড. অনুপম এবং নজরুলসঙ্গীত ও লোকগীতিতে দীক্ষা নিয়েছেন বিভিন্ন ওস্তাদের অধীনে।
দেশীয় সংগীতাঙ্গনে এ বছর এক যুগ পূর্ণ করলেন তিশমা। শুরু থেকেই তিনি আলাদাভাবে নজর কাড়েন। পপগানে মেয়েদের উৎসাহী করে তুলতে তার অন্যরকম ভূমিকা রয়েছে। এই পর্যন্ত তিশমার মোট ১১টি একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। প্রথমটি বাজারে আসে ২০০২ সালে। 'তারা' নামের ওই অ্যালবামে রিদম অ্যান্ড ব্লুজ, ব্যালাডাস ও ফাঙ্ক ধাঁচের গান করেন তিনি। সংগীত, গান বাছাই, নৃত্যপরিকল্পনা, মিউজিক ভিডিও, ফ্যাশন, মঞ্চ ও শিল্পকলায় তিশমার প্রতিনিয়ত অবদান নারী শিল্পীদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে। তিনি একাধারে কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সঙ্গীত প্রযোজক, ডিজে এবং পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও বাজান যেমন- পিয়ানো, কি-বোর্ড, ড্রামস এবং গিটার। গত বছরের ডিসেম্বরে বের হয় এই রক-রাজকন্যার নতুন একক অ্যালবাম “হিপনোটাইজড”। এর সব গানের সুরকার, গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী তিনি নিজেই।
গানের পাশাপাশি পড়ালেখায়ও রেকর্ডতুল্য ফল আছে তিশমার অর্জনের খাতায়। ও-লেভেলে ১০টি A এবং এ লেভেলে ৫টি A অর্জন করেন তিনি। এখন নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছেন। তিশমা বলেন, 'আমি মূলত পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চাটা চালিয়ে যাচ্ছি। পরিবার থেকে পড়াশোনা নিয়েই সবচেয়ে বেশি চাপে থাকি। তাই এর ফাঁকে ফাঁকে আমাকে সঙ্গীতচর্চার জন্য সময় বের করতে হয়। '
এ বছর বের হবে তিশমার একাদশ একক অ্যালবাম 'রকস্টার'। তার কণ্ঠে রকগানের পাশাপাশি 'দে রে না না মেঘ ঝরণা', 'প্রজাপতি'র মতো সফ্ট ক্লাসিক্যাল মেলো গানও শুনেছেন শ্রোতারা। নতুন অ্যালবামেও ব্যালাড, ফাঙ্ক, উচ্চাঙ্গ, স্লো, সফট ও মেলোডি গান করেছেন তিনি। বাংলা লোকগীতি, গীতিনাট্য, উচ্চাঙ্গসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীতও গেয়েছেন তিশমা।
বর্তমান অডিও বাজার প্রসঙ্গে তিশমা বলেন, 'এ নিয়ে আমিও বেশ চিন্তিত। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পাইরেসির কবলে পড়ে অডিও বাজার রীতিমতো হুমকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শ্রোতারাও ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাউনলোড করে গান শোনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে অডিও বাজার ক্রমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাকে ভেবেচিন্তে অ্যালবাম প্রকাশ করতে হচ্ছে। '
গানের মানুষরা এখন অনেকেই অভিনয় কিংবা মডেলিং করেন। কিন্তু এমন কোনো ইচ্ছা নেই জানিয়ে তিশমা বলেন, 'শুরু থেকেই মডেলিং ও অভিনয় করার জন্য প্রচুর প্রস্তাব পেয়েছি। অনেক নির্মাতা মডেলিংয়ের জন্য আমাকে মোটা অঙ্কের সম্মানীও দিতে চেয়েছেন। তবে এ নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। '
তিশমার ঝুলিতে আছে অনেক পুরস্কার। ভারতের এমটিভি চ্যানেল তার গানের ভিডিও প্রযোজনা করেছে। 'লা লা লা' (বাংলাদেশ সংস্করণ) গানটি তার ক্যারিয়ারে নতুন সংযোজন। গানটির সংগীতায়োজন ও এতে কণ্ঠ দেওয়া প্রসঙ্গে তিশমা বলেছেন, ‘বাংলানিউজের কাছ থেকে প্রস্তাবটি পেয়ে খুবই ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রিয় মানুষের কথা ভেবে কাজটি করেছি। তাই এর মিউজিক ভিডিওতেও বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনা রাখা হয়েছে। কাজটি সবার ভালো লাগছে জেনে আমি খুশি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। ’
তিশমার অ্যালবাম
* রকস্টার (২০১৪, অপ্রকাশিত)
* হিপনোটাইজড (২০১৩)
* জোজো-রিলোডেড (২০১২)
* এক্সপেরিমেন্ট (২০১১)
* এক্স-ফ্যাক্টর (২০০৮)
* ছলনার দাবা (২০০৭)
* মাটির পুতুল (২০০৬)
* শাম রাখি না কুল রাখি (২০০৬)
* বাউলা প্রেম (২০০৫)
* সূর্য (২০০৪)
* চাঁদ (২০০৩)
* তারা (২০০২)
বাংলাদেশ সময় : ১৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৪