দিন গড়াতেই নতুন নতুন খবর সৃষ্টি করে চলেছেন মৌসুমী হামিদ। আজ বিচারক হওয়ার খবর তো কাল নতুন ছবির।
টানা দু’সপ্তাহ দম ফেলারই সময় ছিলো না মৌসুমী হামিদের। প্রতিদিনই শুটিং, মেকাপ, ক্যামেরা, চারপাশে চোখ ধাঁধানো লাইট, সংলাপ- রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্য ভালো, আষাঢ়ে বৃষ্টিতে একদিনের জন্য শুটিং প্যাকআপ। এই ব্যস্ত সময়ে মৌসুমীর কাছে একদিনের ছুটি মানে সোনার হরিণ! এদিন কোনো রুটিন নেই, ব্যস্ততা নেই; ইচ্ছেমতো ঘুম আর আড্ডা।
এমনই এক অলস সময়ে মৌসুমী হামিদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হাজির হই আমরা। দুপুর হয়ে এসেছে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। অভ্যাসমতো সেদিনও তার ঘুম ভেঙেছে অনেক সকালে। তবু বিছানা ছাড়ার নাম নেই। অলস শরীর নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছেন তিনি। ঘরে অতিথির আগমন টের পেয়ে বেরিয়ে আসলেন।
এসেই বললেন, ‘এই বৃষ্টির দিনে কি কাজ করতে ইচ্ছে হয় বলেন? কিন্তু উপায় নেই। গত সপ্তাহে খুলনা গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ঢাকা, একদিন পরেই বরিশাল। আবার খুলনা। আমি রীতিমতো ক্লান্ত। ’ মৌসুমীর কণ্ঠে ক্লান্তি ঝরে পড়লেও মনে ঠিকই প্রশান্তি উঁকি দিচ্ছে। সেটা কি জন্য? কারন দু’টো। প্রথমত, হ্যান্ডসাম খুঁজে পাওয়ার আনন্দে। আর দ্বিতীয় কারণটা বলা যাক একটু পরে।
দেশজুড়ে চলছে ‘ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান’ প্রতিযোগিতা। এখানে হ্যান্ডসাম খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়েছিলো মৌসুমী হামিদের কাঁধে। খুলনা জেলার বাছাই পর্বে তিন বিচারকের একজন ছিলেন তিনি। লম্বা লাইন, হ্যান্ডসাম তরুণরা বুক ধুকধুকানি উত্তেজনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর মৌসুমী দেখে দেখে হ্যান্ডসাম বাছাই করছেন।
ব্যাপারটা এমন? মৌসুমী শব্দ করে হাসলেন। বললেন, ‘পুরোপুরি এরকম না। ফিটনেস তো অবশ্যই, এর বাইরে হ্যান্ডসাম নির্বাচনের আরও কিছু উপাদান আছে। কথা বলা, হাঁটাচলা, আচরণ- এসবও দেখতে হয়। ’
এ আলাপচারিতার সপ্তাহখানেক পরে আবার কথা হয় মৌসুমী হামিদের সঙ্গে। ততদিনে তিনি নতুন চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেছেন। অনন্য মামুনের 'ফ্রেন্ডশিপ' দিয়ে শুরু হয়েছে তার বাণিজ্যিক ছবির যাত্রা। এতে আরও আছেন আনিসুর রহমান মিলন ও ববি।
এ ছবিতে তিনি মারমার কাটকাট অ্যাকশন লেডি। প্রথমদিন শুটিং স্পট থেকে মৌসুমী ফেসবুকে নিজের ছবিও আপলোড করেছেন। তাকে ঘিরে চারিদিকে এখন প্রশংসার ছড়াছড়ি।
অবশ্য এটাই মৌসুমীর প্রথম চলচ্চিত্র নয়। অনিমেষ আইচের ‘না মানুষ’ এবং প্রশান্ত অধিকারীর ‘হাডসনের বন্দুক’ নামে দু’টি ছবি এরই মধ্যে যোগ হয়েছে তার ক্যারিয়ারে। কিন্তু ‘না মানুষ’-এর কাজ কিছুদিন হয়ে আপাতত বন্ধ। এ নিয়ে শেষ আশাকুও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। আর ‘হাডসনের বন্দুক’ সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। মৌসুমীর ভাষায়, ‘ফ্রেন্ডশিপ দিয়েই বাণিজ্যিকভাবে বড়পর্দায় পা রাখছি আমি। ’
তবে 'ফ্রেন্ডশিপ'-এর আবির্ভাব অনেকটা হুট করেই। অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছিলো ‘ব্ল্যাকমেইল’ নিয়ে। কলকাতার বাংলা ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা হিরণের অভিনয় করার কথা ছিলো এতে। থাকার কথা ছিলো বিদ্যা সিনহা মিমেরও। ২৯ জুন থেকে ‘ব্ল্যাকমেইল’র কাজ শুরু হবে- এমন কথা বলে আসছিলেন পরিচালক। ২৭ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো। চিত্রনাট্যে বদল ঘটলো তারপরই।
এর কয়েকদিন আগে ‘পদ্ম পাতার জল’ ছবির সেটে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মিম। তার পরিবার থেকে অনন্য মামুনকে জানানো হয়, এখনই শুটিংয়ে ফিরতে পারবেন না তিনি। ফলে সবকিছু উলট-পালট। ‘ব্ল্যাকমেইল’-এর বদলে ‘ফ্রেন্ডশিপ’। আর হিরণ-মিমের বদলে আনিসুর রহমান মিলন ও ববি। এখন সাভারে ছবিটির কাজ চলছে পুরোদমে।
দুই নায়িকার মধ্যে মৌসুমী হামিদের গুরুত্ব কতখানি টিকে থাকবে- এমন একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। এ নিয়ে অবশ্য তার কোনো মাথাব্যথা নেই। অবলীলায় বলে গেলেন, ‘এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। আমি নিজের চরিত্রকে যতটা সম্ভব সফল করে তোলার জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করবো। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে ভালো কাজ হয় না। ’
লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতা থেকে আসার পর ক্রমেই নিজের অবস্থানে এগিয়েছেন মৌসুমী হামিদ। অন্যদের সাফল্যে ঈর্ষা হয় না তার, উল্টো সুস্থ প্রতিযোগিতার হাওয়া দেখতে পান তাতে। সাবাস মৌসুমী!
বাংলাদেশ সময় : ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৪