মিঠু কেউ ছিলেন না, কিচ্ছু ছিলেন না। সারাদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে হাঁটতেন, ক্লাসে যেতেন, ঘুরতেন ছোট্ট শহর খুলনায়।
উত্তরটা জানা নেই মিঠুর, তার জানার কথাও নয়। মিঠু তো অভিনয় করতে চাননি। নির্মাতা হতে চেয়েছিলেন। হিরো হওয়ার ফন্দিফিকির, ষোলকলা তার পড়া নেই। তবু ঈঙ্গিত দিলেন- একটা হাত দরকার। ফারুকীর মতো অভিনয়শিল্পী তৈরির একজোড়া চোখের সুনজর দরকার।
মিঠুর মনে ভাসে আজিজ মার্কেট। শুনেছিলেন- এখানেই নাকি মাঝে মধ্যে আসেন তিনি। খুলনা থেকে চলে এসেছিলেন। সম্বল বলতে এইটুকু তথ্য- ‘আজিজ মার্কেটে মাধেমধ্যে আসেন তিনি। ‘ ঘুরেছেন আজিজ মার্কেট, বেইলি রোড, নাটক-সিনেমাপাড়ার এ-গলি ও-গলি! যদি দেখা মেলে তার! মিঠুর ভেতরে কথা জমে আছে অনেক। ভালো লাগার কথা, অসম্ভব ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা। এরপর বহুদিন কেটেছে ঘুরে ঘুরে, বহুরাত কেটেছে পুড়ে পুড়ে। কেউ ফারুকীর বাড়ির ঠিকানা বলে না, ফোন নম্বর বলে না। অবশেষে একদিন। দেখা হলো বলাকা সিনেমা হলে। ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ মুক্তির দিনে।
ততদিনে মিঠু ছবিয়ালের শিক্ষানবীশ সহকারী। রাতদিন খাটছেন ‘টেলিভিশন’-এর পেছনে। ফারুকীর ইচ্ছায় ক্যামেরার পেছন থেকে এসে একফাঁকে সামনেও দাঁড়ালেন। অভিনয়ের অভিজ্ঞতা হলো কিবরিয়া ফারুকীর ‘বিক্রয়ের জন্য নহে’ নাটক দিয়েও। করলেন দু’একটি বিজ্ঞাপনও। আরও একদিনের গল্প বললেন মিঠু। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র প্রস্তুতি চলছে। ফারুকী তাকে বললেন- অভিনয় করতে হবে। তা-ও প্রধান চরিত্রে! রীতিমতো আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা মিঠুর। এটাও কি সম্ভব! সম্ভব হলো ফারুকী তার কাঁধে নির্ভরতার হাত রেখেছিলেন বলেই। ‘ভালো করেছি, কি খারাপ করেছি- আমি জানি না। এ ছবিতে অভিনয়ের কোনো কৃতিত্বই আমার না। প্রশংসা যতটুকু সবই গুরুর (ফারুকী) প্রাপ্য। ’
ক’দিন আগে শুনলেন, কাকরাইলে ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র বিরাট বিলবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। পুরো বিলবোর্ড জুড়ে মিঠুর একচ্ছত্র আধিপত্য। ছুটলেন কাকরাইল। আজব কান্ড-কারখানা! ‘বিলবোর্ডের সামনে কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, মনে নেই। এক দৃষ্টিতে আমি তাকিয়ে ছিলাম ওদিকে, আর আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো লোকজন! কি ভেবেছে, কে জানে!’
এখন গ্রাম থেকে বাবা-মা ফোন করছেন, বহুদিনের পুরনো বন্ধুরা মিঠুর খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাকে নিয়ে গর্বের কথা জানাচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার শিক্ষার্থীরা। মিঠুর চোখ ভিজে আসে আনন্দে। স্রষ্টা তাকে অফুরান প্রাপ্তি দিয়েছেন, এত প্রাপ্তি-প্রশংসা রাখার জায়গা দিয়েছেন কি?
‘পিঁপড়াবিদ্যা’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৪ অক্টোবর। দিন যত ঘনিয়ে আসছে, মিঠুর বুকে দুরু দুরু হাওয়া ততই গতি পাচ্ছে! এ যেন হাতুড়ি পেটানোর শব্দ! তবে বিশাল বটবৃক্ষের মতো ছায়া নিয়ে পাশে আছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মিঠুর মাথার ওপর তার নির্ভরতার হাত। ভরসা দিচ্ছেন। ফারুকীর মায়া জড়ানো একজোড়া চোখ আশ্বস্ত করছে প্রতিনিয়ত- ‘সাহস রাখো। হিরো হইতে সাহসও লাগে!’
* ‘হিরো হইতে আর কি লাগে’ ভিডিও :
বাংলাদেশ সময় : ১৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৪