রাস্তায় বেরোতেই একঝাঁক কুয়াশা ঘিরে ধরলো নিশাকে। দু’পাশের জানালা দিয়ে হিম হাওয়া জড়ো হচ্ছে সিএনজির ভেতর।
কুয়াশার আড়াল ভেদ করে সিএনজি ছুটছে। খুলছে দু’একটা চায়ের দোকান, আড়মোড়া ভাঙছে রাস্তার কুকুর, জুবুথুবু শহর কর্মব্যস্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এসব দৃশ্যে চোখ বুলিয়ে নিশা ছুটছেন। তার পরীক্ষা। বছরের শেষ পরীক্ষা। নিশা পড়েন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। বিষয়- ইংরেজি। ভর্তি হয়েছিলেন ২০১১ সালে। ক্যাম্পাস, বন্ধু, আড্ডা, সিলেবাসের ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস, ঐতিহাসিক চরিত্র, প্রেমগাঁথা, কবিতার বন্ধন- মনে রাখার মতো প্রচুর উপাদান জড়ো হয়েছে মস্তিষ্কে। এই চার বছরে কত স্মৃতি! জীবনটাও কি বদলে যায়নি আগাগোড়া? ‘সে ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই’- নিশার সংক্ষিপ্ত জবাব।
ক্যাম্পাসে প্রথম দিন যখন পা রাখেন, নিশা একেবারেই সাধারণ মেয়ে ছিলেন। কেউ তাকে চেনে না, তিনিও চেনেন না কাউকে। এরপর ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতা এলো, নিশা উঠে এলেন সেরা তিনে। অভিনয় শুরু করলেন। মডেলিং, টিভি পর্দায় দেখা যায় তাকে, মানুষ চেনে, স্ক্রিপ্ট পাঠায়। তাকে কেন্দ্রে রেখে চারপাশে গেঁড়ে বসে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন বলা হয়। তখন তিনি হয়ে উঠেন ভিন্ন চরিত্রের।
ক্যাম্পাস জীবনে এক নিশার এতো বদল! শেষ পরীক্ষা দিতে বসে তাই বারবার অন্যমনষ্কতা ভর করে মগজে। এমনিতে তিনি অন্যমনষ্ক নন, বরং বেশি মনোযোগী। একগুঁয়ে, খামখেয়ালিও কিছুটা। শেষ দু’টো বিশেষণ নিশা নিজে স্বীকার করবেন না যদিও। কিন্তু কাছের লোকজন তো ব্যক্তি নিশাকে হাড়ে-হাড়ে চেনে! তার ভালোবাসা, স্বেচ্ছাচারিতা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা জানে; তাদের মুখেই শোনা যায় এসব। তারা তাই প্রায়ই সাবধানবাণীর মুখোমুখি করে, ‘নিশা, এতো রাগ ভালো নয় কিন্তু!’
‘স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গ’। নিশা অভিনীত প্রথম নাটক। হুমায়ূন আহমেদের লেখা, মেহের আফরোজ শাওনের পরিচালনা। প্রথম উপস্থিতিতেই যার এতো বড় সাফল্য; সে নিশার দ্বিতীয়, তৃতীয় অথবা আরও বহু ক্রমিক ভালো ফলই বয়ে এসেছে। তিনি বলে গেলেন, ‘এলিট পেইন্ট, লাক্স, জুঁই নারিকেল তেল, প্রাণ ডাল- এগুলো হচ্ছে বিজ্ঞাপন। ‘চুপকথা’, ‘কাগজের বাড়ি’, ‘অন্দরমহল’, ‘মার ছক্কা’, ‘লঙ্গরখানা’, ‘নোয়াশাল’, ‘পরিবার করি কল্পনা’, ‘চোরকাঁটা’, ‘মায়ার খেলা’- এ ধারাবাহিক নাটকগুলোতে কাজ করেছি। একক নাটক হচ্ছে- ‘ফুলপরী রাজপুত্র আমৃত্তির গল্প’, ‘কালো ব্যাগ ও এক রাত্রের গল্প’, ‘অপ্রকৃতিস্থ’, ‘মায়া’, আর...। ’
থাক, কাজের ফিরিস্তি থেকে বেরিয়ে বরং নিশার এখনকার ভাবনাচিন্তা শোনা যাক। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি খানিকটা অগোছালো হয়ে আছেন। মাঝে কাজকর্ম বন্ধ করে ঘরে শুয়ে, বসে ছিলেন। এখন একটু চাঙ্গা হয়েছেন। অস্থিরতা কেটেছে কী? তিনি বলছেন, ‘অস্থিরতা ঠিক নয়। চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে হবে। পরিকল্পনার ব্যাপার ছিলো। ’
নতুন বছর আসছে। চার বছরের ‘পুরনো’ নিশার মাথায় ‘নতুনরূপে’ হাজির হওয়ার চিন্তা এখন।
বাংলাদেশ সময় : ১৭১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪