ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

তারার ফুল

মৌসুমীর কাছে একডজন প্রশ্ন

শুধু অভিনয় করবো আর চলে যাবো ভাবলে হবে না

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫
শুধু অভিনয় করবো আর চলে যাবো ভাবলে হবে না মৌসুমী/ ছবি:নূর /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অভিনয়ে ২২ বছর পূর্ণ করলেন মৌসুমী। তার ঝুলিতে আছে দেড়শ’টিরও বেশি ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা।

পরিচালনায় এসে কাজে লাগিয়েছেন সেটা। ২০০২ সালে নারগিস আক্তারের ‘মেঘলা আকাশ’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এবার চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ ছবিতে চন্দ্রমুখী চরিত্রে মনকাড়া অভিনয়ের সুবাদে ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন মৌসুমী। বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।  

 

বাংলানিউজ : অভিনয়জীবনে দ্বিতীয়বার জাতীয় পুরস্কার পেলেন। এবারের প্রাপ্তিকে কীভাবে দেখছেন?

মৌসুমী : এটাও অবশ্যই অনেক বড় প্রাপ্তি। একটি সুন্দর চরিত্র পর্দায় উপস্থাপনের সময় অন্য অভিনয়শিল্পীদের মতো আমার মধ্যেও স্বপ্ন তৈরি হয়। তখন ভাবনায় থাকে কাজটা ভালো হলে দর্শকসহ সবার প্রশংসাই আসবে।  

 

বাংলানিউজ : ‘দেবদাস’ ছবিতে অভিনয়ের সময় কি আশা করেছিলেন জাতীয় পুরস্কার পাবেন?

মৌসুমী : অভিনয় করার সময় মনে হয়েছে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসটি নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে। তাই মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছি। সিনেমা হলে গিয়েও দর্শক হিসেবে আমার কাছে কাজটা ভালোই মনে হলো। নানাজনের কাছ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পেলাম। এরপর জানতে পারি, ছবিটা জমা দেওয়া হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য। তারপর জেনেছি আমার পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটাই সত্যি হলো। তবে কাঠের বা লোহার পুতুলের জন্য আমি কাজ করি না। আমার কাছে প্রত্যেক দর্শকই এক একটি জাতীয় পুরস্কার। সত্যি বলতে অভিনয়টা ভালোবেসে করি, পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয়।  

বাংলানিউজ : এবার পুরস্কার পাওয়ার খবর কে প্রথম দিলো? পুরস্কারটি কাকে উৎসর্গ করছেন?

মৌসুমী : সানি (ওমর সানি) প্রথম আমাকে খবরটা দেয়। পুরস্কারটি প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করতে চাই। তিনি আমাকে চন্দ্রমুখী বানিয়েছিলেন বলেই আমার এই অর্জন।  

 

বাংলানিউজ : জীবনের সেরা পুরস্কার কোনটি?

মৌসুমী : বাস্তব জীবনের কথা বললে সেরা পুরস্কার আমার দুই সন্তান। আর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে বলবো দর্শকদের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।  

 

বাংলানিউজ : দেশীয় চলচ্চিত্রের ব্যবসায় এখন মন্দা। এভাবে চলতে থাকলে এই শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব? 

মৌসুমী : এভাবে চলতে থাকলে আসলেই সম্ভব নয়। এজন্য সোজা কথা- সবাইকে এক হতে হবে। শিল্পী, প্রযোজক, দর্শকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আবেগ-অনুভূতির সম্মিলন ঘটাতে হবে। শুধু অভিনয় করবো আর চলে আসবো, শিল্পীদের মধ্যে এমন চিন্তা-ভাবনা থাকলে হবে না। চলচ্চিত্রাঙ্গন নিয়ে ভাবতে হবে, পাশাপাশি বসতে হবে, হাতে হাত মিলিয়ে একত্র হয়ে কাজ করতে হবে।  

বাংলানিউজ : শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। সমিতির পক্ষ থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চান? 

মৌসুমী : তেমন কিছু হয়তো করতে পারবো না। তবে পাইরেসির বিরুদ্ধে কাজ করার ইচ্ছে আছে। আর আমি মনে করি, আমাদের ছবির গানগুলোর প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ আগেকার ছবির গান এখনও শ্রোতারা শোনেন। দর্শকের কাছে সেইসব গানের ছায়া ফিরিয়ে আনা এবং তা উপহার দেওয়ার দায়িত্ব সবার। সেগুলো নিয়েও ভাবছি।  

 

বাংলানিউজ : ২২ বছর ধরে আপনি একই রকম হয়ে আছেন! এর রহস্য কী?

মৌসুমী : (হেসে) এটার আসলে কোনো রহস্য নেই। আমার কাছে মনে হয়, সুস্থ ও সুন্দর থাকতে মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা অনেক বেশি জরুরি। আর আমার মনটা অনেক সরল। এটা আমি বুঝতে পারি, কিন্তু খুব কম মানুষই এটা বোঝেন। এজন্যই শিশুদের সঙ্গে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যময়।

বাংলানিউজ :  এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনি এখনও অবস্থান ধরে রেখেছেন, কিন্তু এখনকার অভিনেত্রীদের মধ্যে এমন স্থায়িত্বের ছায়া খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মৌসুমী : এটা একটা ব্যক্তিগত বিষয়। কাজটা কে কতো ভালোবাসা ও ধৈর্য দিয়ে করছে সেটা বেশ জরুরি। এটাই বড় বিষয়। যারা ধৈর্য ধরে কাজ করে, তারা এর ফলও পায়। একেকটা অর্জনের জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়। শুধু লাফালাফি করলে তো আর হয় না। ভাগ্যেও থাকতে হবে অনেক সময়। অপেক্ষা করার ধৈর্যটা থাকতে হবে নতুনদের মধ্যে।  

 

বাংলানিউজ : সামনে আপনার যেসব ছবি আসছে সেগুলো নিয়ে কিছু বলুন।

মৌসুমী : আমার ‘শূন্য হৃদয়’, বেলাল আহমেদের ‘ভালোবাসবেই তো’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’ ও হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ‘রাত্রির যাত্রী’ ছবিগুলো আসবে এ বছর। তবে ‘শূন্য হৃদয়’-এর আগে ‘রাত্রির যাত্রী’ মুক্তি পাবে বলে মনে হচ্ছে।  

বাংলানিউজ : ক’দিন আগেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হলো। আপনি অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণেও এসেছেন। নারী নির্মাতার সংখ্যা কম কেনো? নারী নির্মাতাদের প্রতিবন্ধকতাগুলোই বা কী?

মৌসুমী : আমাদের এখানে নারী নির্মাতার সংখ্যা সত্যিই কম। প্রতিবন্ধকতা তো কিছুটা রয়েছেই। এখনও আমরা নিজেরাই মানি এই সমাজ পুরুষশাসিত। আর যে কোনো মেয়ে চাইলেই পরিচালনায় আসতে পারে না। আমি দীর্ঘদিন কাজ করে তারপর সাহস দেখিয়েছি। কেউ নির্মাণে এলে তাকে প্রথম থেকে পরিচালনার জন্য মানসিক ও দৈহিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দর্শকের কাছে কাজ দিয়ে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। সেই আত্মবিশ্বাসও থাকতে হবে। পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।  

 

বাংলানিউজ : আবার জন্মালে কী হতে চান?

মৌসুমী : এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। আল্লাহ আমাকে খুব ভালো রেখেছেন। আবার জন্মালে মৌসুমী হয়েই আসতে চাই। পৃথিবীতে আবার আসার সুযোগ হলে নিরপেক্ষ ও নির্মল মানুষ হতে চাই।  

বাংলানিউজ : অভিনয় আর পরিচালনার বাইরে মৌসুমীর সময় কাটে কীভাবে?

মৌসুমী : সময় পেলে বই পড়ি, গান শুনি, গেমস খেলি। আর একটু সময় গেলে অভিনয় কমিয়ে দেবো। তখন আমার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনে আরও সময় দিতে চাই। আর বসুন্ধরা সিটিতে আমার আর সানীর পোশাকের স্টল ‘লেভিস’-এও সময় দিতে চাই। শিশুদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। কারণ ওরা আমার খুব প্রিয়।  

 

বাংলাদেশ সময় : ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ