ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

তারার ফুল

‘শঙ্খচিল’ ছবির শুটিং লোকেশন থেকে

একটি মুহূর্তের জন্য পাঁচ ঘণ্টার অপেক্ষা!

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
একটি মুহূর্তের জন্য পাঁচ ঘণ্টার অপেক্ষা! ইছামতীর পাড়ে প্রসেনজিৎ/ ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরা থেকে : এপারে দারিদ্রপীড়িত, বঞ্চিত, অনুন্নত ভাতশালা। বাংলাদেশের গ্রাম।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার। মাঝখানে বয়ে গেছে ইছামতি। সামনে তাকালেই, নদীর ওপারে খানিকটা অস্পষ্টভাবে দেখা যায় উন্নত শহর টাকি। ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার শহর।

ওপারের মন্দির থেকে উলুধ্বনি এপারে ভেসে আসে বাতাসে ভর করে। এপারের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শুনতে পান ওপারের লোক। সন্ধ্যায় টাকি শহর যখন ভেসে যায় বৈদ্যুতিক আলোয়, তার ছায়া পড়ে ইছামতির জলে। তীরে বসে এপারের লোক দেখেন সেসব। দু’পাড়ের মধ্যে এতো মিল, মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক, সংযোগ; তবু এই দু’পাড় মানে দু’টো দেশ।



৩০ জুন। পুরো ভাতশালা জুড়ে সকাল থেকেই উসখুশ, কানাকানি। প্রসেনজিৎ নাকি আসবেন! গৌতম ঘোষও। দুপুরের দিকে যখন ‘চলচ্চিত্রের মালামাল সরবরাহ কাজে নিয়োজিত’ লেখা ট্রাক থামলো ইছামতির পাড়ে, এ অনিশ্চিত উসখুশ-কানাকানি রূপান্তরিত হলো নিশ্চয়তায়। ভাতশালার অধিবাসীরা আসতে শুরু করলেন দু’একজন করে।



গাড়ি থেকে গৌতম ঘোষ নামলেন। তিনি এ ছবির পরিচালক। ছবির নাম ‘শঙ্খচিল’। তাকে ঘিরে ধরলো সহকারীরা। তিনি সোজা চলে গেলেন নদীর পাড়ে। সেখানে উঁচু ক্রেন বসানো হচ্ছে। নদীর ভেতরে বানানো হয়েছে ঘাট। ‘মনের মানুষ’-এর কান্ডারী ক্রেনে চড়ে, ক্যামেরায় চোখ রেখে বারকয়েক ফ্রেম পরখ করে নিলেন। একটু পরেই এলেন ছবিটির প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান।



প্রসেনজিৎ চলে এসেছিলেন বেশ আগেই। ‘শঙ্খচিল’-এর বাদল মাস্টার। পড়ান ভূগোল। কয়েকদিনের টানা বর্ষণ শেষে এদিন সূর্য বেশ চড়াও। কড়া রোদ পড়ছে। প্রসেনজিৎ তাই গাড়িতে বসে ছিলেন। চারপাশে মানুষের ভিড় আরও বেড়েছে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরলেন। মাথায় ছাতা ধরে পাশে পাশে প্রডাকশন বয়। দর্শকদের চোখ স্থির। কয়েক হাত দূরেই শুভ্র পোশাকে স্বয়ং প্রসেনজিৎ! অবহেলিত জনপদে বসে এমন দৃশ্য তারা কোনোদিন দেখতে পাবেন, এমন স্বপ্ন দেখার দুঃসাহসও হয়তো কখনও হয়নি তাদের।



কয়েকবার মহড়া করে নিলেন গৌতম ঘোষ। দৃশ্যটি এমন- ইছামতির পানি কেটে দ্রুত বেগে ছুটে আসবে স্পিডবোট। কিশোরী সাঁঝবাতি, যে অভিনয় করছে প্রসেনজিৎ-কুসুম সিকদার দম্পতির মেয়ের চরিত্রে, ধীরে হেঁটে দাঁড়াবে নদীর পাড়ে। হাত নাড়বে। প্রসেনজিৎ ধীরে গিয়ে পেছন থেকে মেয়েকে জড়িয়ে ধরবেন। নদীর বুকে অস্তমিত সূর্যের ছায়া।

কিন্তু তখনও দুপুর। শটটি নিতে গেলে সন্ধ্যাটা প্রয়োজন। প্রসেনজিৎ, গৌতম ঘোষ ও পুরো টিম ঝাঁঝালো রোদ মেখে, নদীর পাড়েই বসে থাকলেন। গৌতম ঘোষ একবার বললেনও প্রসেনজিৎকে, ‘বুম্বা, তুমি চাইলে গাড়িতে গিয়ে বসতে পারো। ’ প্রসেনজিৎ মাথা নেড়ে জানালেন, গাড়িতে নয়। তিনি ওখানেই থাকতে চান।



এরপর এক, দুই করে পেরিয়ে গেলো ঘণ্টা পাঁচেক। পেছনে সূর্যটা ডুবে যাবে, লাল আভা ছড়িয়ে পড়বে তীর জুড়ে- এমন একটি মুহূর্তকে ধরতে অপেক্ষায় পুরো টিম। ওদিকে তখন ইফতারির সময় ঘনিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ সময় : ২১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ