ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

আলিশার সঙ্গে ‘অন্তরঙ্গ’ আলাপ

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৫
আলিশার সঙ্গে ‘অন্তরঙ্গ’ আলাপ আলিশা প্রধান/ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফোনের ও-প্রান্তে যার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, সে যেন আলিশা প্রধান নন! অপরিচিতর মতো। যেন এক্ষুণি ভেসে আসবে, ‘ম্যাডাম তো নেই।

আপনি কে বলছেন?’ ওই রকমই অবস্থা। গলা ভেঙেছে। ফলে কণ্ঠ আগের মতো ‘আলিশা’ন নেই, তবে চটপটে ভাবটা আছে। কথা বলছেন বেশ জোরে জোরে। ফোন রিসিভ করেই পাশে কারও সঙ্গে আলাপের সমাপ্তি টানছিলেন। আলাপে সিনেমা হল ডিস্ট্রিবিউশন প্রসঙ্গ। ফিরলেন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।

বাংলানিউজ: খুব চাপ যাচ্ছে নিশ্চয়ই। গলাটাও ভেঙেছে।
আলিশা প্রধান: দুই ঘণ্টা করে ঘুমাচ্ছি শেষ দশদিন ধরে। কিন্তু ভালো লাগছে জানেন? মনে হচ্ছে, পরীক্ষা দিয়েছি তিন বছর হলো। এখন ফল বের হবে। এজন্য কষ্টটা ভালোই লাগছে।

বাংলানিউজ: পরিবেশনা নিয়ে আলাপ করছিলেন মনে হলো। এ নিয়েও আপনাকে দৌড়াতে হচ্ছে?
আলিশা: পরিবেশনা  থেকে শুরু করে সিনেপ্লেক্স, পোস্টার, ট্রেলার, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি- সবকিছু দেখভাল করছি। টিমটা একটু নতুন তো। সবসময় খেয়াল-খবর রাখতে হচ্ছে। এটাও আমার জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা।

বাংলানিউজ: ‘অন্তরঙ্গ’ নিশ্চয়ই আপনার প্রথম ছবি না?
আলিশা: এটাই তো আমার অভিষেক ছবি।

বাংলানিউজ: এর আগেও তো রূপালি পর্দায় আপনাকে দেখা গেছে...
আলিশা: এর আগে আমাকে কোথায়...? ওই যে অতিথি চরিত্র করেছিলাম ‘এই তো ভালোবাসা’য়? ওটা তো তেমন কিছু না। ওটা কেবল একটা ঝলক। ৩০ সেকেন্ডের একটা অতিথি চরিত্র।

বাংলানিউজ: ‘অন্তরঙ্গ’র প্রসঙ্গে আসি। এটি এমন একটি সময়ে শুরু করেছেন, যখন সবকিছু ছেড়ে লন্ডন চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাকাপাকি। এর আগে বহুদিন ছবিতে অভিনয়ের চেষ্টা করছিলেন। ওই সময়ই তো চাষী নজরুল ইসলাম ডাকলেন আপনাকে?
আলিশা: আমি যে স্ট্রাগল করেছি। আমার মনে হয়, চাষী নজরুল ইসলামের মতো একজনের হাত ধরে আমার অভিষেক ঘটবে বলেই এতো অপেক্ষা। কারণ, অনেক চেষ্টা করেছি তো। সেই ১৪-১৬ বছর বয়স থেকে। আমি এখানে কাউকে বুঝতে পারছিলাম না। অনেক নির্মাতার সঙ্গে কথাও হচ্ছিলো। কিন্তু প্রত্যেকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকে।

বাংলানিউজ: কেনো?
আলিশা: (ভাবার ভঙিতে) কেন বাতিল করেছে! হয়তো যোগ্যতার অভাব ছিলো। আমি চেষ্টা করেছি বাংলা ভালো করে বলার। অভিনয়-নাচ-মারামারি-ঘোড়া চালানো শেখার পাশাপাশি মানুষকে সম্মান করা এবং হালকা শারীরিক গড়ন, গেটআপ, ফ্যাশন- সবকিছু নিয়েই সজাগ ছিলাম। কিন্তু এগুলো হয়তো যথেষ্ট ছিলো না। হয়তো চাষী নজরুল ইসলামের জন্য এটা যথেষ্ট ছিলো। এতোসব কষ্টের পরে আমার অভিষেকটা তার হাতেই মানিয়েছে।

বাংলানিউজ: এর আগে আপনি দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ঘোরাফেরার মধ্যে ছিলেন। মানে, অতোটা থিতু হওয়ার ব্যাপারটা পরবর্তীতে যখন চাষী নজরুল ইসলামের সঙ্গে কাজ শুরু করলেন তারপর এলো, নাকি?
আলিশা: ঠিক ধরেছেন। কারণ কী... আমি তো ১৪-১৫ বছর থেকে আমার পরিবারের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। প্রত্যেক মাসে দু’তিনবার পরিবারের সঙ্গে বেড়ানো হয়। যখন চাষী ভাইয়ের সিনেমা এলো... ওটা ছিলো আমার স্বপ্ন, আমি অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম, তাই না? এ কারণে লন্ডনে গ্র্যাজুয়েশন করা বাদ দিলাম, চাকরিও করি না। তবু মনে হলো কীসের পকেট মানি! কিচ্ছু লাগবে না। আমার যে জীবনযাপন, যে সোসাইটি, বৃত্ত- সবকিছু ত্যাগ করেছি। চাষী ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখায় বলেছিলাম- আমার জন্মদিন পালন করবো না স্যার। যেদিন ছবি মুক্তি পাবে, তোমার সঙ্গে পালন করবো। এ পর্যন্ত আমার কোনো জন্মদিনে সেলিব্রেশন কিংবা অনুষ্ঠান কিছুই করিনি।

বাংলানিউজ: চাষী নজরুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর থেকে?
আলিশা: না। চাষী ভাইয়ের সঙ্গে যখন ছবিতে চুক্তি করি, তারপর থেকে। তাকে বলেছি- আমার পুরো জীবনটাকে উজাড় করে দিলাম সিনেমার জন্য। ছবি মুক্তি পেয়ে যাবে তিন-চার মাসে। তার আগে কোনো জন্মদিন-অনুষ্ঠান কিছুই করবো না। কিন্তু দু’বছর পেরিয়ে গেলো, আর আমিও কিছু করিনি। হয়তো আগামী জন্মদিনটাও করবো না। কারণ, চাষী ভাইকে খুব মিস করবো।

বাংলানিউজ: ‘অন্তরঙ্গ’ চাষী নজরুল ইসলামের শেষ ছবি। সেই জায়গা থেকে পরিবেশনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন?
আলিশা: আমাদের প্রচারণার যে পরিকল্পনা ছিলো, আমাকে একটা নতুন মুখ হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন ছবিটির পরিচয় দাঁড়িয়ে গেছে যে, এটি চাষী নজরুল ইসলামের শেষ ছবি। আমরা কখনও এটা চাইনি। পরিবেশনায় কে কতোটুকু সহযোগিতা করছে, আমি এভাবে বলবো না, সবার সহানুভ‚তিটা অনেক বেশি কাজ করছে যে, এটা তার শেষ ছবি। এভাবে কখনও ভাবতে চাই না...

বাংলানিউজ: এখানে একটা প্রশ্ন আছে...
আলিশা: না, না আমি আগে শেষ করি। আপনাকে আরও কিছু বলতে চাই...

বাংলানিউজ: বলুন।
আলিশা: চাষী স্যার তো এতো দুর্বল একজন মানুষ না যে, এই নামটিকে আমাদেরকে এভাবে ব্যবহার করতে হবে। আপনি যে প্রশ্নটি করতে চেয়েছেন, সেটা আমি বুঝেছি। এটা হয়েছে পরিবেশনা ও  বিপণনের জন্য। চিরন্তন ব্যাপার এটা। কয়জন মানুষ জানে? কতোজন শিল্পী তাকে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন? উনি তো বাংলাদেশের সব বড় বড় তারকাকে নিয়ে কাজ করেছেন। ক’জন আলোচনা করেছে তার ছবির ব্যাপারে? আজকে আমি আলিশা প্রধান, আমাদের কার্নিভাল মোশন পিকচার্স, তাকে কিন্তু যথেষ্টভাবে মনে রাখার চেষ্টা করছি। এসব কারণে এটা আমাকে বলতে হচ্ছে। তা না হলে উপযুক্ত জায়গায় সম্মানটা যাবে না। পোস্টারে এটা লেখা হয়েছে ওই কারণে। আমি খুবই গৌন এখানে। আমার প্রথম ছবির মূল্যটা হারিয়ে গেছে। চাষী স্যারের শেষ ছবি। মানুষের আবেগটা সেখানে।

বাংলানিউজ: একদিন পরেই ‘অন্তরঙ্গ’র মুক্তি। আপনার জন্য এই সবময়টা ভীষণ স্নায়ুচাপের। উদ্বেগ, উত্তেজনা চলছে, যেটা শুক্রবার এবং তার কিছুদিন পর পর্যন্তও চলবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে ছবিটি নিয়ে কেমন আশা করছেন?
আলিশা: অনেক সুন্দর একটি ছবি হয়েছে। চাষী স্যার তার মুক্তিযুদ্ধের ছবি, সাহিত্যের ছবি নিয়ে যে চিন্তাভাবনা করতেন, বাণিজ্যিক ছবিতে সেটা মিলিয়ে দর্শকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। এটাই আশা করছি, মানুষ যেন ছবিটি দেখে। মানুষের কাছে পৌঁছানোটাই আসল কথা, ব্যবসাটা না। ওটা পরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ