ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

হাফ সেঞ্চুরির পর বন্ডকন্যা!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৫
হাফ সেঞ্চুরির পর বন্ডকন্যা! মনিকা বেলুচ্চি

বিশ্বের সবচেয়ে রূপবতীদের একজন মনিকা বেলুচ্চি। ‘ম্যালেনা’ যারা দেখেছেন, কেইবা প্রেমে পড়েননি তার।

এমন আকর্ষণীয় ও আবেদনময়ী নারীই কি-না বন্ড সিরিজের ছবিতে ছিলেন না এতোদিন। অবশ্য ১৯৯৭ সালে ‘টুমরো নেভার ডাইস’-এ তাকে বন্ডকন্যা হিসেবে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। তিনি অডিশনও দিয়েছিলেন। প্যারিস ক্যারভার চরিত্রের জন্য নেওয়া হয়েছিলো তার স্ক্রিন টেস্টও।

ওই ছবির বন্ড তারকা পিয়ার্স ব্রসনান সেই সময় প্লেবয় ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘মনিকা বেলুচ্চির সৌন্দর্য সব বয়সী মানুষকেই আনন্দ দেয়। তিনি সত্যিকার অর্থেই চকচকে একজন নারী। ’ কিন্তু ওই ছবিতে শেষমেষ টিকে যান মার্কিন অভিনেত্রী টেরি হ্যাচার। তখন মনিকার বয়স ছিলো ৩৩ বছর। এর ১৮ বছর পরে দেখা গেলো বিপরীত চিত্র।

বন্ডের ২৪তম ছবিতে কাজের প্রস্তাব নিয়ে পরিচালক স্যাম মেন্ডেসের ফোন এলো। মনিকা বেলুচ্চি ভেবেছিলেন প্রবীণ অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন তিনি! কারণ ‘স্কাইফল’-এর শেষ দৃশ্যে জুডির মৃত্যু দেখানো হয়। তাই মেন্ডেসকে ৫১ বছর বয়সী এই তারকা বলেছিলেন, ‘আমাকে ডেকেছেন কেনো? আমি কি জুডি ডেঞ্চের বিকল্প হতে যাচ্ছি? আমার বয়স ৫০ বছর পেরিয়েছে। আমি এখন পরিণত এক নারী। জেমস বন্ডের ছবিতে আমি কী করবো?’ মেন্ডেস তাকে চমকে দিয়ে জানান, বন্ডকন্যা হিসেবেই উপস্থাপন করা হবে তাকে!

বন্ড সিরিজের নতুন ছবি ‘স্পেকট্রা’র মাধ্যমে বন্ডকন্যা হতে গিয়েও না হওয়ার আক্ষেপ ঘুচলো মনিকা বেলুচ্চির। লুসিয়া সিয়ারা নামের চরিত্রে তাকে দেখা গেছে। তার স্বামী মার্কো সিয়ারাকে ছবিটির প্রথম দৃশ্যে মেরে ফেলে জেমস বন্ড। মার্কো স্পেকট্রা সংগঠনেরই সদস্য। এরপর লুসিয়ার ঘরে তাকে সান্ত্বনা দিতে আসে বন্ড। কিন্তু লুসিয়ার রাগ আর জেদের সামনে পড়তে হয় ব্রিটিশ গোয়েন্দাকে। অতঃপর লুসিয়াকে কাবু করে ফেলে বন্ড। দু’জনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তটি ‘স্পেকট্রা’র সবচেয়ে আবেদনময়ী দৃশ্য।

পঞ্চাশ পেরিয়েও পর্দায় যে আবেদন সৃষ্টি করেছেন মনিকা বেলুচ্চি, তা না দেখলে মিসই হবে! তার বাদামি চোখ জোড়ার গভীরতা আজও টলিয়ে দেয় পুরুষের হৃদয়। ঘনকালো চুল, নজরকাড়া শরীর আর গাঢ় গুমোট কণ্ঠ পাগল করে দিতে ‘ম্যালেনা’র বালক থেকে শুরু করে জেমস বন্ডকে!

এক বছর আগেই বয়সের দিক দিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মনিকা। দেরিতে বন্ডকন্যা হওয়ায় ভালোই হয়েছে, এর মাধ্যমে ইতিহাস গড়তে পেরেছেন তিনি। ইতালীয় এই রূপবতীই সবচেয়ে বেশি বয়সী বন্ডকন্যা। এর আগে ‘গোল্ডফিঙ্গার’ (১৯৬৪) ছবিতে অনার ব্ল্যাকম্যান ৩৯ বছর বয়সে বন্ডকন্যা হয়েছিলেন। কাকতালীয় ব্যাপার হলো, ছবিটি মুক্তির ১৩ দিন আগে মনিকার জন্ম হয়েছিলো!

মজার বিষয় হলো, ৩০ বছর আগে ‘অ্যা ভিউ টু অ্যা কিল’ (১৯৮৫) ছবিতে বন্ডকন্যা হওয়া অ্যালিসন ডুডির চেয়ে দুই বছরের বড় মনিকা। তবে ক্রেগের চেয়ে তিন বছর পাঁচ মাসের বড় তিনি। বন্ড সিরিজের ইতিহাসে তিনি তৃতীয় অভিনেত্রী যার চেয়ে জেমস বন্ড চরিত্রের অভিনেতার বয়স কম। ‘গোল্ডফিঙ্গার’ ছবির নায়িকা অনার ব্ল্যাকম্যানের চেয়ে বন্ড তারকা শন কনারির বয়স ছিলো পাঁচ বছর তিন দিন কম। এ ছাড়া ‘অন হার ম্যাজেস্টিস সিক্রেট সার্ভিস’ ছবিতে জর্জ ল্যাজেনবির চেয়ে ডায়ানা রিগ ছিলেন এক বছরের বড়।

মনিকার আগে ইতালির আরও তিনজন বন্ডকন্যা হয়েছেন। তারা হলেন ক্যারিনা মুরিনো (ক্যাসিনো রয়েল), লুসিয়ানা পালুজ্জি (থান্ডারবল) এবং ড্যানিয়েলা বিয়ানশি (ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ)। অবশ্য নিজেকে বন্ডকন্যা নয়, বন্ডনারী হিসেবেই ভাবছেন মনিকা। ১৮ বছর আগে বাদ পড়ার পরও পরিণত অভিনেত্রীদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতেই এই বয়সে এসে বন্ডের নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তিনি। জেমস বন্ড চরিত্রটি নিয়ে মনিকার কথা, ‘জেমস বন্ড আমাদের ফ্যান্টাসি। আদর্শ মানুষ। সে একই সঙ্গে রক্ষাকর্তা, বিপজ্জনক, রহস্যময় ও আবেদনময়। সব মিলিয়ে যুতসই ইংরেজ ভদ্রলোক। ’

মনিকা বেলুচ্চির ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য ২৫ বছর। নব্বই দশকে তিনি যেমন রূপসী ছিলেন, এখনও যেন ঠিক তেমনই আছেন। সৌন্দর্য ধরে রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বেছে নেন মনিকা। তার প্রিয় খাবার পাসতা ও চকোলেট। এ ছাড়া নিয়মিত যোগব্যায়ামও করেন। নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে কখনও চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে না তার। ইতালিয়ান এই তারকা নাকি জিমে যান না। অন্তত এ ব্যাপারে বরাবরই আলসেমি কাজ করে তার মধ্যে! শারীরিক গড়নটা ঠিকঠাক রাখার জন্য ব্যায়াম যন্ত্রের ওপর দৌড়ে ঘাম ঝরাতে মোটেই আগ্রহী নন দুই সন্তানের এই মা। তার কথায়, ‘কখনও জিমে যাইনি। আমি অনেকটা কুড়ে! নিজেকে শুকিয়ে ফেলার বাতিক নেই আমার। ’

মনিকা এখন কাজ করছেন ‘অন দ্য মিল্কি রোড’ ছবিতে। এটি পরিচালনা করছেন বিখ্যাত নির্মাতা এমির কুস্টুরিকা। তিনিই ছবিটির নায়ক। মনিকার সঙ্গে তার রসায়ন দেখা যাবে আগামী বছর।

মনিকা বেলুচ্চির ১০ টুকিটাকি
* মনিকা বেলুচ্চি এক সাক্ষাৎকারে জানান, তার অভিনয়ের অনুপ্রেরণা ইতালিয়ান কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন ও ক্লদিয়া কারদিনালে।
* স্বল্প সময় আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন মনিকা।
* ২০০৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারক ছিলেন।
* ইংল্যান্ডের লন্ডন, ফ্রান্স ও ব্রাজিলে তার একটি করে অ্যাপার্টমেন্ট আছে।
* ২০০৪ সালে ফরাসি টিভি দর্শকদের ভোটে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী নির্বাচিত হন মনিকা বেলুচ্চি।
* প্যারিসের গ্রেভিন জাদুঘরে মনিকার মোমের মূর্তি আছে।
* মনিকা বেলুচ্চির প্রথম স্বামী ছিলেন ক্লদিও কার্লোস ব্যাসো। তাদের বিয়ে হয় ১৯৯০ সালের ৩ জানুয়ারি। বিচ্ছেদ ঘটে ১৯৯৪ সালের ২৫ জুন।
* ১৪ বছর সংসারের পর ফরাসি অভিনেতা ভিনসেন্ট ক্যাসেলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে দুই বছর আগে। তাদের বিয়ে হয়েছিলো ১৯৯৯ সালের ৩ আগস্ট। এরপর দু’জনে দুই সন্তানের মুখ দেখেছেন।
* ৩৯ বছরে প্রথম মা হন মনিকা। পরেরবার মা হয়েছেন ৪৫ বছরে।
* ইতালিয়ান ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি, ফরাসি, পারস্য ও স্প্যানিশ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। দুই কন্যা ডেবা ক্যাসেল (১১) ও লিওনি ক্যাসেলের (৫) সঙ্গে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলেন মনিকা।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ