‘বাঁ দিকের টেবিলে একটা আইফোন সিক্স প্লাস পাওয়া গেছে’- ঘোষণা আসছে বারবার। ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর সংবাদ সম্মেলন।
কাট টু। রেস্তোরাঁর নির্জন সিঁড়ি। শুধু মাঝে মধ্যে ওয়েটার ‘এক্সিউজ মি স্যার’ বলে সাবধানে পাশ কাটিয়ে নেমে যায়। ব্যাকস্টেজের মতো আবহ। দু’মিনিটের ‘ছুটি’ নিয়ে ধূমপায়ীরা ঢুঁ দিয়ে যায় এখানে। কিছু রসিকতা ঢেলে যায়। কিছু পেছনের গল্পও। যেগুলো মাইক্রোফোনের সামনে ‘আনুষ্ঠানিকতা’র অলিখিত নিয়ম ভাঙে বলে মনে হয়। অপূর্ব ওখানে দাঁড়িয়ে উদ্বেগে ভেঙে পড়েন, ‘দেখলি তো ট্রেলার-গান। কেমন হলো বল তো? যেটা মনে হয়েছে সত্যি করে বল। কিচ্ছু মনে করবো না। ’ ক’দিনের মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। আঁচড়ানো চুলের ভাঁজেও, ক্লিন সেভড্-ফ্রেশ চেহারার আড়ালেও, চিন্তার বলিরেখা।
‘আমি তো জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু বুঝতেই পারছিস, আমাকে তো আর কেউ নতুন হিরো হিসেবে দেখবে না। একটুখানি এদিক সেদিক হয়ে গেলে, মান-সম্মান কিছু থাকবে না!’- অপূর্ব বলে চলেন বেশ দ্রুতলয়ে। তাই এই বলা কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনিশ্চয়তায় ক্ষয়ে যাওয়ার ফল নয়। ‘ল্যাক অব কনফিডেন্স’ও নয়। এতোদিনের অভিনয় জীবন। এতোদিন বাদে এসে প্রথম বড়পর্দায় ভেসে ওঠা। চিন্তা তো হয়-ই। ক্লাসের সেরা ছাত্রেরও ফল বের হওয়ার আগের দিনগুলোয় ‘নাভার্স নাইনটিজ’ দশায় পায়। পুরনো প্রশ্নপত্র উল্টেপাল্টে দেখে। এলোমেলো হাঁটে। বই ঘাঁটে। অপূর্ব কি ঘাঁটছেন? স্মৃতি।
ফ্ল্যাশব্যাক। বছর দু’য়েক আগে। ফোনে ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর কিছু ক্লিপস নিয়ে ঘুরছেন অপূর্ব। শুটিংস্পটে একে ওকে দেখাচ্ছেন। অপূর্বকে নিয়ে তখন টেলিভিশন অঙ্গন বেশ সরগরম। সিনেমার নতুন হিরো। কিছুদিন শুটিং করে এসেছেন। ক’টা স্টিল ছবিও বেরিয়েছে। অপূর্বর তাতে অন্য লুক। অ্যাকশনে। পিস্তলে। এ-জন সে-জন ডেকে ডেকে বড় পর্দার অভিজ্ঞতা শোনে। অপূর্বও ক্লিপস দেখান। ওইদিন গল্পে গল্পে ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ নিয়ে খানিকটা আশংকা বেরিয়ে এসেছিলো তার মুখ থেকে। সব ঠিকঠাক- মারধর, সহিংসতা, প্রতিশোধ, প্রেম; কিন্তু গল্প নিয়ে যতো আশংকা! বিরতির পর গল্প ‘ঝুলে’ যায় কি-না; এমন একটা উশখুশ ছিলো ভেতরে।
ছবি মুক্তির একদিন আগে ওই প্রসঙ্গ তোলা হয়, ‘এখন গল্প মোটামুটি ঠিকঠাক করা হয়েছে তো, না?’ অপূর্ব বলেন, ‘সেন্সরে জমা দেওয়ার আগেই ঠিক করা হয়েছে। আমি তো দেখেছি সেন্সরের অনেক আগে। তখন ছবিটা আড়াই ঘণ্টা ছিলো। এখন দুই ঘণ্টার একটু বেশি। ’ ফলে উত্তেজনা টানটান এখন। গল্প ছুটেছে গতিতে।
আইফোন সিক্স প্লাসের মালিকের খবর মিলেছে। অপূর্বই স্বয়ং। ঘোষণাটা কিন্তু তিনি শুনেছিলেনও। কিন্তু ফোনটা যে ভুলে ফেলে এসেছেন ওখানে, ওটা নিয়ে এতোকিছু চলছে- তার ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত-চিন্তাগ্রস্ত মন বুঝতেই দেয়নি। ‘কোন পর্যায়ের টেনশনে আছি, দেখেছিস?’ চেহারায় আরও উদ্বেগ ফুটিয়ে, শুকনো হাসি ছড়িয়ে বলেন অপূর্ব।
জাম্পকাট। ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ মুক্তি পেয়ে গেছে। একদিন এখনও পেরোয়নি। শেষ প্রদর্শনী চলছে। ‘কী হবে!’ এই আশংকা দিনের আলোর তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে এসেছে আস্তে ধীরে। এখন অনেকখানি উচ্ছ্বাস, আনন্দ, তৃপ্তি আর প্রাপ্তির মিশেল অপূর্বর চেহারায়। সারাদিন ঘুরেছেন সিনেমা হলে-হলে। এতো দর্শক, এতো ভালোবাসা, এতো আগ্রহ। অবচেতন মন সারাদিন ধরে একটা কথাই বিশ্বাস করছে, ‘অপূর্ব পারবেন!’
[‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ অপূর্ব অভিনীত প্রথম ছবি। মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর)। একটি সাধারণ ছেলের ধীরে ধীরে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার গল্প এটি। আশিকুর রহমানের পরিচালনা। আরও অভিনয় করেছেন জান্নাতুল পিয়া, শম্পা হাসনাইন, টাইগার রবি প্রমুখ। ]
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ