ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

কেনো দেখবেন অনিল বাগচীর একদিন!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
কেনো দেখবেন অনিল বাগচীর একদিন!

শিরোনামে যে প্রশ্নটা আছে, এর প্রথম উত্তরটা হলো কাহিনীটি হুমায়ূন আহমেদের। প্রয়াত নন্দিত এই কথাশিল্পীর মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক উপন্যাসটিতে পাওয়া যায় মানবিকতা, রসবোধ, হাহাকার, স্বতন্ত্র দর্শন, আরও কতো কি! হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের পর তার কাহিনী থেকে নির্মিত কোনো ছবির মুক্তির ঘটনা এটাই প্রথম।



ছবিটির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম কিছুদিন আগে উদ্বোধনী প্রদর্শনীর শুরুর আগে জানিয়ে রাখলেন, শুরুটা একটু ধীরগতির। কিন্তু ধীরে ধীরে গতি পাওয়া যাবে। তার বেশিরভাগ ছবিই একটু ধীরগতিতে এগোয়। সব নির্মাতারই আলাদা গল্প বলার ঢঙ থাকে। মোরেশদুল ইসলামেরও আছে। তবে ‘অনিল বাগচীর একদিন’-এর প্রথম দৃশ্য থেকে মনে হলো, এবার সম্ভবত নিজেকে ভেঙেছেন তিনি।

শুরুতেই স্বপ্নদৃশ্য। নাগরদোলা, সাপখেলা, মাতামাতি- এসব মুহূর্তের মাধ্যমে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখার বার্তাই যেন পাওয়া গেলো। স্বপ্ন ভাঙতেই ভয় জাগে। আঁধার ঘরে হাতড়ে হাতড়ে পানি খেতে গিয়ে কাচের গ্লাস পড়ে যায় অনিল বাগচীর হাত থেকে। প্রথমে মনে হবে ছেলেটা বোধহয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পরে ভুলটা ভাঙে। কিছুক্ষণ পর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যেতে থাকে। একসময় ধুম করে পাকিস্তানি মিলিটারিদের দরজা খুলে ঢুকে পড়া ভড়কে দেয়। তাহলে কি এখনই মরে যাবে অনিল? তারপর গল্প বলা হবে ফ্ল্যাশব্যাকে? এ ধারণাও ভুল হলো। অনিল এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে।

২৬ বছরের যুবক অনিল বাগচী ছোটবেলা থেকেই ভীতু স্বভাবের। সে কাজ করে ঢাকায় একটি বীমা প্রতিষ্ঠানে, থাকে মেসে। অনিলের স্কুলশিক্ষক বাবা ও একমাত্র বড় বোন অতসী থাকে রুপেশ্বর গ্রামে। মা মারা গেছেন অনিলের জন্মের সময়েই। সৎ ও আদর্শবান বাবা অনিলকে তার মতো করেই গড়ে তুলতে চান। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ অনিলের বাবা মনে করেন, কিছু কিছু সৌন্দর্য আছে যার কখনও ছবি আঁকা যায় না, কেবল হৃদয় দিয়ে উপভোগ করা যায়। অনিলের বড় বোন অতসী ভালোবাসে এক মুসলমান ছেলেকে, কিন্তু সেই ভালোবাসার কথা কাউকে প্রকাশ করতে পারে না। গোপনে ধারণ করে চলে হৃদয়ে।

১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়। অবরুদ্ধ ঢাকার মানুষগুলোর দিন কাটে চরম উৎকন্ঠায়। একদিন খুব ভোরে অনিল একটি চিঠি পায়। রুপেশ্বর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চিঠিতে জানান, অনিলের বাবাকে মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে। বোন অতসী আছে হেডমাস্টারের বাসায়। হেডমাস্টার অনিলকে আসতে বারণ করেন, কারণ গ্রামটি এখন যুবকদের জন্য নিরাপদ নয়। কিন্তু অনিল সিদ্ধান্ত নেয় সে যাবে। যাত্রাপথ খুবই বিপদের, তারপরও অনিল অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসে করে  রওনা দেয় রুপেশ্বর গ্রামের দিকে। চরম অনিশ্চিত যাত্রা। যাত্রা পথে অনিলের পরিচয় হয় মধ্যবয়স্ক আয়ুব আলীর সঙ্গে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী রাকায়েত। তার সংলাপগুলো শুনলেই দর্শকদের হাসি পায়! লোকটা চরম বিরক্তিকর মানুষ। আয়ুব আলীকে খুবই প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ মনে হলেও ধীরে ধীরে তার মানবিক দিকটিও স্পষ্ট হতে থাকে অনিলের কাছে। অনিলকে সে শিখিয়ে দেয়, পথে পাকবাহিনী ধরলে অনিল যেন হিন্দু পরিচয় লুকিয়ে তার শ্যালক মহসিন বলে পরিচয় দেয়।

অনিল কি হিন্দু পরিচয় লুকিয়ে রাখে? না, বাবার মতো সাহস নিয়ে সে তার প্রকৃত পরিচয় দেয়। আয়ুব আলী নিজের জীবন বিপন্ন করে অনিলকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে শিশুর মতো হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, কিন্তু কিছুতেই বাঁচাতে পারে না অনিলকে। ধরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আয়ুব আলীকে অনিল অনুরোধ করে যেন তার বোনের সঙ্গে দেখা করে তার পছন্দের ছেলেটিকেই বিয়ে করতে বলে। জ্যোৎস্না ভরা রাতে অনিলকে মারার জন্য নদীর ঘাটের দিকে নিয়ে যেতে থাকে পাকসেনা ও তাদের দোসররা। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিল জ্যোৎস্নার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে। তারপর গুলির আওয়াজ। এরপর ক্যামেরা পড়ে যায় ধপাস করে! দর্শকরা এখানে প্রত্যেকে অনিল! এই দৃশ্যটা কলিজাতে আঁচড় দেয়।

শিরোনামে যে প্রশ্ন আছে, তার আরেকটা উত্তর সানী জুবায়েরের সংগীত। তার সুরে দেশাত্মবোধক গানটি শুনলে আবেগপ্রবণ না হয়ে পারবেন শ্রোতারা! তার সুর-সংগীত ছবিটির অন্যতম সম্পদ। এ ছাড়া এল. অপু রোজারিও চিত্রগ্রহণ, রতন পালের সম্পাদনা ও শব্দমিশ্রণ, অশোক কুমার ঘোষের শিল্প নির্দেশনা প্রশংসনীয়।

গত অক্টোবরে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় শ্রীলঙ্কার কলম্বো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এরপর এটি দেখানো হয় থাইল্যান্ডের ব্যাংকক উৎসবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাস, মধুমিতা, বলাকা, শ্যামলী, ঢাকাসহ সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স প্রযোজিত ‘অনিল বাগচীর একদিন’। ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ব্যয় করুন, মনে হয় না খারাপ লাগবে!

বাংলাদেশ সময় : ০১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ