ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পৌলমী গাঙ্গুলী। অনেকবারই এসেছেন এ দেশে।
বাংলানিউজ: পহেলা বৈশাখ কেমন কাটালেন?
পৌলমী গাঙ্গুলী: এই নিয়ে দশবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। আমার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল আর মায়ের বাড়ি যশোর। আগে প্রতিবার পৈতৃক বাড়িতে গিয়েছি। এবার না গেলেও ঢাকায় পহেলা বৈশাখ পালন করেছি।
খুবই মজা করেছি। আসলে কলকাতায় পহেলা বৈশাখ এ দেশের মতো করে পালন করা হয় না, ওখানে এতো অনুষ্ঠান হয়না। এখানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান দেখেছি। খুব ইচ্ছে ছিলো কেনাকাটাও করবো। ব্যস্ততার কারণে কিছুই করা হলো না। তবে আর যাই হোক, ওখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেয়া সাবান আমি কিনবোই।
বাংলানিউজ: আপনি তো গান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?
পৌলমী: ছেলেবেলা থেকে গান পাগল ছিলাম। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে পড়েছি । আমার ইচ্ছে ছিলো গান নিয়ে কিছু করার। মা চাইতেন বিজ্ঞান নিয়েই পড়ি। শেষে বাবা আমাকে সায় দিলেন। এরপর থেকে গান নিয়েই আছি।
বাংলানিউজ: অ্যালবাম বের করেছেন তো?
পৌলমী: অ্যালবাম ব্যাপারটা খুব বেশি পুরনো মনে হয়। এখন শ্রোতারা গান শোনার পাশাপাশি দেখতেও পছন্দ করেন। গান ভিডিও করে ইউটিউবে দিতেই আমার বেশি ভালো লাগে। তবে কিছুদিন আগে আমার প্রথম অ্যালবাম এলো। নাম ‘প্রাণ চায়’। বাংলাদেশে এসে কয়েকটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ও রেডিওতে বৈশাখের কিছু অনুষ্ঠান করেছি। এ দেশে এসে নতুন একটি গানের ভিডিওর শুটিংও করেছি।
বাংলানিউজ: এবারের রবীন্দ্র জয়ন্তী নিয়ে নিশ্চয়ই পরিকল্পনা আছে?
পৌলমী: রবীন্দ্র জয়ন্তীতে এবারও একাধিক মঞ্চে গান গাইবো। একে ঘিরে একটি অ্যালবামের কাজও করলাম। অ্যালবামটিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন বর্ণ চক্রবর্তী। মোট গানের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে আমার গাওয়া গানই আছে পাঁচটি।
বাংলানিউজ: আপনার গানের শ্রোতা এখানেও আছেন। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই উপভোগ্য?
পৌলমী: ‘প্রাণ চায়’ অ্যালবাম হওয়ার আগে পর্যন্ত আমার সবগুলো গান ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে । আর বাংলাদেশি দর্শক প্রায় ৯২ ভাগ। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, আমার গানের শ্রোতা ১৮-২৮ বছরের তরুণরা।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের মধ্যে কার গান বেশি ভালো লাগে?
পৌলমী: বন্যাদির ( রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) গান বেশি ভালো লাগে। দুঃখের ব্যাপার হলো, এতোবার বাংলাদেশে এসেছি, দিদিও কলকাতায়ও গিয়েছেন। কিন্তু এখনও বন্যাদির সঙ্গে দেখা হয় নি। অনেক ইচ্ছে আছে একবার দেখা করবো।
বাংলানিউজ: আপনি তো এপার ওপার দুই বাংলার রবীন্দ্রসংগীত শুনেছেন? কোনটা বেশি ভালো লাগে?
পৌলমী: এ দেশের রবীন্দ্র সংগীতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনেন না শিল্পীরা। রবিঠাকুর যা করে গেছেন তারই ধারাবাহিকতায় এদেশে এখনও গান গাওয়া হয়। আর ওখানে কিছু কিছু শিল্পী তো গানের লিরিকও পরিবর্তন করে ফেলছেন!
বাংলানিউজ: আপনার গানেও তো কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
পৌলমী: গানের কথা ও সুর ঠিক রেখে পারিপার্শ্বিক ব্যাপারগুলো পরিবর্তন করা যেতেই পারে। আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়াশুনা করেছি। আমার মতো করে আমাদের দেশেও অনেকে রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন।
বাংলানিউজ: গান ছাড়া আর কি করতে ভালো লাগে?
পৌলমী: বই পড়তে ও কবিতা শুনতে ভালো লাগে। এ দুটি কাজের বাইরে রান্না করতে পারি। এটাও বেশ লাগে।
বাংলানিউজ: কি কি রান্না করেন? রান্নার প্রশংসা সবচেয়ে বেশি কে করে?
পৌলমী: সব ধরনের রান্নাই করতে পারি। বাংলাদেশের রান্নাও করতে পারি। এখানকার রান্না আমার মায়ের কাছ থেকে ও শিমুলদার (শিমুল মুস্তফা) কাছ থেকে শিখেছি। বন্ধু-বান্ধব ও আত্বীয়রা রান্নার প্রশংসা করেন। সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করে আমার ছেলে।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের কোন বিষয়টা বেশি ভালো লাগে?
পৌলমী: (হেসে) এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে আবহাওয়া। আমার তো মনে হচ্ছে আমি শীতের মধ্যে রয়েছি। এই সময়ে আমাদের দেশে যা গরম তার থেকে অনেক ভালো লাগছে এখানে। তাছাড়া এতো উৎসব মুখর নবর্বষ বাংলাদেশে এসে এই প্রথম বার পহেলা বৈশাখ পালন করলাম। আমার কাছে এই বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে । সবাই জানে, বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি আন্তরিক। কলকাতার মানুষের মধ্যে তেমন আন্তরিকতা নেই। কলকাতায় গেলে এই বিষয়টা খুব মিস করবো।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৭৫৪ ঘন্টা, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬
টিএস/জেএম/এসও