আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে আয়োজন। বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে বরাবরের মতো দিবস উদযাপনে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান রাখা হচ্ছে।
বাংলানিউজ: আপনাদের এবারের আয়োজন আলাদা কোন দিক দিয়ে?
মিনু হক: প্রতিবারের মতোই হচ্ছে এবারের আয়োজন। তেমন কোনো পরিবর্তন না থাকলেও এই দিনটি নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী। বরাবরের মতো, এবারও শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) নৃত্য দিবসের দিনে আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হবে ভোর ৬টা থেকে। এ দিন পুরো শিল্পকলা একাডেমি জুড়ে আমরা শোভাযাত্রা করবো। এরপর শুরু হবে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে আগত নৃত্যশিল্পীদের নৃত্যানুষ্ঠান। এদিন আমরা সব জেলার নৃত্যশিল্পীর জন্য পুরো মঞ্চ উন্মুক্ত করে দিই। আমাদের এবারের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকছেন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
বাংলানিউজ: নাচে আমরা এগিয়েছি কতোখানি?
মিনু হক: অনেকটা এগিয়েছি। আগে আমরা যখন নাচ শিখেছি, কতো সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছি! কিন্তু নাচ থেকে কখনও পিছপা হইনি। এখন নাচ শেখার অনেক সুযোগ রয়েছে। নাচের অনেক সংগঠন হয়েছে। এ কারণে অবশ্য অনেক নতুন মুখও খুঁজে পাচ্ছি। এ ছাড়া, দেশের বাইরের অনেক কোরিওগ্রাফার এসে শিল্পীদের তালিম দিচ্ছেন। আমি মনে করি নাচের এ অগ্রগতিতে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার অবদান রয়েছে। আগে তো নৃত্যদিবস পালন করারও তেমন কেউ ছিলো না। এখন আমরা এই দিবসটা যেভাবে পালন করছি, তাতেই বোঝা যায় যে, আমরা নাচে কতটা এগিয়েছি।
বাংলানিউজ: নাচ তো পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হয়েছে। নতুনদের মধ্যে নৃত্যচর্চা কেমন দেখেন?
মিনু হক: নাচ পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হওয়ায় আমাদের নতুন নৃত্যশিল্পীরা অনেক সহজেই নাচ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব কিছু শিখতে আমাদের অনেক সময় লেগে গেছে। অনেক কষ্টও করতে হয়েছে। নাচে যাদের আগ্রহ আছে তারা এখন সহজেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাচ বিষয়ে পড়ালেখা করতে পারবে। অনেক ছাত্রছাত্রী এই বিষয়ে পড়ালেখা করছে। এদের মধ্য থেকেও আমরা কিছু উদ্যমী নৃত্যশিল্পী পাচ্ছি। আর তারাও বিষয়টি জেনে-বুঝেই নাচে নতুন রূপ প্রণয়নের চেষ্টা করছে।
বাংলানিউজ: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাচ কি পৌঁছুতে পেরেছে?
মিনু হক: আমরা সবসময় আশাবাদী আমাদের দেশের নৃত্যশিল্প নিয়ে। পাঠ্যপুস্তকে নাচ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পৌঁছুতে তেমন কোনো বাধা নেই। তবে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেক গুণী নৃত্যশিল্পীরা থাকা সত্ত্বেও আমরা অর্থায়নের অভাবে তেমন কিছু করতে পারি না। নাচে আমাদের দেশে পৃষ্ঠপোষকতার বড় অভাব। আমরা যেনো একটা নির্দিষ্ট পারিসীমার মধ্যে আটকে আছি। আমাদের চাওয়ার সীমা নেই, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এ কারণেই আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। এছাড়া আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে অনেক মেধাবী নৃত্যশিল্পী রয়েছে। আমরা তাদের জন্য কতোটুকুইবা করতে পারি!
বাংলানিউজ: ক্ল্যাসিক নৃত্যের পাশাপাশি আধুনিক নাচের গুরুত্ব কতোটুকু বলে মনে করেন?
মিনু হক: একজন নৃত্যশিল্পীর অবশ্যই সব ধরনের নাচ শেখা উচিত। সেক্ষেত্রে আমরা যদি নাচের গোড়া থেকে না শিখে প্রথমেই মাথায় উঠতে চেষ্টা করি তাহলে তা বড় ভুল হবে। আজকাল যারা নাচ শিখছে তাদের মধ্যে ক্ল্যাসিক বাদ রেখে আধুনিক নাচ শেখার প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হলো, ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ততোটা ধৈয্য নেই। আর সে কারণে তারা আধুনিক নাচকে প্রাধান্য দিচ্ছে। মূলত নাচের ভিত্তি হলো ক্ল্যাসিক নাচ। এ কারণে একজন নৃত্যশিল্পীর শুরুটা হওয়া উচিত এ নাচের মাধ্যমেই।
বাংলানিউজ: এ প্রজন্মের নৃত্যশিল্পীদের উদ্দেশ্যে কি কিছু বলার আছে?
মিনু হক: নৃত্যের প্রতি যাদের আগ্রহ আছে শুধুমাত্র তাদেরই উচিত এ শিল্পকে চর্চা করা। অন্যথায় এই শিল্পের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করা ঠিক নয়। এ প্রজন্মের নৃত্যশিল্পীরা যেন নিজেদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে নৃত্য সম্পর্কে জেনে ও বুঝে নৃত্যচর্চা করে। তাহলেই তারা একদিন নৃত্যাঙ্গনে এগিয়ে যেতে পারবে।
বাংলানিউজ: পরের নৃত্য দিবসে কী করতে চান?
মিনু হক: নৃত্যদিবসকে ঘিরে আমাদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আগামীবারও ৭ দিনব্যাপী নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। ঈদের পর আমাদের সংস্থার উদ্যোগে একটি নৃত্যনাট্যের আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, ২৮ এপ্রিল,২০১৬
জেএম/এসও