মাসুমা রহমান নাবিলার পরিচিতি উপস্থাপিকা হিসেবে। অমিতাভ রেজা পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে তার।
উপস্থাপিকা নাবিলা থেকে ছবিটির হৃদি হয়ে ওঠা, আবার উপস্থাপনায় ফেরা, নতুন বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার মতো বেশকিছু বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
বাংলানিউজ: ‘আয়নাবাজি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার আগে ভেবেছিলেন চলচ্চিত্রে কাজ করবেন?
নাবিলা: এর আগেও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু সেগুলোর গল্প আমাকে তেমন টানেনি। আসলে কখনও অভিনয় করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিলো না আমার। কারণ অভিনয় পারি না! ‘ফাইভ ফিমেল ফ্রেন্ডস’ নাটকে অভিনয় করি প্রথম। ‘আয়নাবাজি’তে কাজ করার আগ্রহ জন্মেছে মূলত গল্পটি পড়ে।
বাংলানিউজ: এ ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?
নাবিলা: এখানে আমার নাম হৃদি। আর দশজন সাধারণ মেয়ে যেভাবে জীবনযাপন করে সে-ও তাদের মতোই। থাকে পুরান ঢাকায়। ‘আয়নাবাজি’ এমন একটি শহরের গল্প শোনাবে, যে শহরে এখনও সকালে দুধওয়ালা আসে, ফেরিওয়ালারা হাঁকডাক দেয়, বাচ্চারা দলবেঁধে নাটকে অভিনয় শিখতে যায়। মহল্লার চা-পুরির দোকানে ঠাট্টা-মশকরা করে বেকার-বখাটেরা। আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) সেই শহরের একজন বাসিন্দা। তার সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় হৃদির। সাংবাদিক চরিত্রে আছেন সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়া।
বাংলানিউজ: এ চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছিলো?
নাবিলা: আগেই বলেছি আমি অভিনয় পারি না, তাই একটু প্রস্তুতি তো নিতেই হয়েছে। বড় পর্দায় অভিনয় আমার জন্য সহজ ছিলো না। এজন্য প্রায় তিন মাস মহড়া করেছি যেন আমার ভীতি কাটিয়ে হৃদি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারি। পরিচালক অমিতাভ রেজা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।
বাংলানিউজ: অমিতাভ রেজা ও চঞ্চল চৌধুরীর সহযোগিতা কেমন ছিলো?
নাবিলা: অমিতাভ রেজা না থাকলে এই ছবিতে আমার অভিনয় করা সম্ভব হতো না। তিনি শুটিংয়ের আগেই আমাকে সব শুটিং লোকেশনে নিয়ে গেছেন। এমনকি পুরান ঢাকার যে বাড়িতে হৃদিকে দেখানো হয়েছে, সেখানেও শুটিংয়ের আগে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। চঞ্চল চৌধুরীও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। অভিনয়ের বিভিন্ন দিক তিনি আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, এমন একটি টিমের সঙ্গে কাজ করেছিলাম, তারা প্রত্যেকেই মনন এবং রুচিশীল মানুষ। এ বিষয়টি খুব প্রয়োজন একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য।
বাংলানিউজ : ছবিটিতে আপনার সাজ-পোশাক নিয়ে বলুন।
নাবিলা: হৃদি চরিত্রের জন্য অমিতাভ রেজা এমন একজনকে খুজঁছিলেন যাকে মেকআপ ছাড়াই ভালো দেখাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় হালকা মেকআপ পছন্দ করি। তাই অদ্ভুতভাবে আমার সঙ্গে পরিচালকের ভাবনার ব্যাপারটি মিলে গেলো। এই ছবিতে আমার মেকআপ ছিলো খুবই সামান্য। আর ভারত থেকে এসেছিলেন রূপসজ্জাকর মোহাম্মদ আলী। তিনি অসাধারণ মেকআপ করেছেন। আর আমার ড্রেসআপও ছিলো সাধারণ। কুর্তি আর সালোয়ার-কামিজ পরেছি বেশি।
বাংলানিউজ: শুটিংয়ের কোনো ঘটনা আলাদাভাবে মনে পড়ে?
নাবিলা: একটা ঘটনার কথা বলতে পারি। একটি দৃশ্যে হৃদিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় দ্রুত যেতে হবে। কিন্তু ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম আমাদেরকে যেভাবে ভোগান্তিতে ফেলে হৃদিও সেই পরিস্থিতিতে পড়েছে। একটা সময় সে জ্যামের মধ্যেই দৌড়ানো শুরু করে দেয়। সত্যি সত্যি জ্যামের মধ্যে এই দৃশ্যের শুটিং হয়েছে। জনসাধারণ বুঝতে পারেনি এটা। এই ব্যাপারটি অনেক উপভোগ করেছিলাম। ‘আয়নাবাজি’র শুটিং হয়েছে পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়। এ ছাড়া মানিকগঞ্জেও কিছু দৃশ্যের কাজ করেছি। গরমে শুটিং করতে অবশ্য কিছুটা কষ্ট হয়েছে।
বাংলানিউজ: ‘আয়নাবাজি’ কারা বেশি উপভোগ করবে বলে মনে হয়?
নাবিলা: ছবিটির গল্প যেমন কমেডি, তেমনি থ্রিলিং। আমার মনে হয় ছবিটির কোনো দৃশ্যেই দর্শকের বিরক্তি আসার আশঙ্কা নেই। সব বয়সী দর্শক আনন্দ নিয়েই পুরো ছবিটি উপভোগ করবে বলে আশা আমার।
বাংলানিউজ: আপনি উপস্থাপনা করেছেন, টেলিভিশনেও অভিনয় করেছেন, এবার বড় পর্দায় কাজ করতে গিয়ে নতুন কী অভিজ্ঞতা হলো?
নাবিলা: নতুন কিছু মানেই নতুন অভিজ্ঞতা। দশ বছর ধরে উপস্থাপনা করছি, এখানে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর আমার কাছে অভিনয়টা নতুন। তার ওপর বড় পর্দায় কাজ করেছি। সব মিলিয়ে হৃদি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে নতুন অনেক কিছু শিখেছি।
বাংলানিউজ: কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখায় অংশ নিয়েছে ‘আয়নাবাজি’।
নাবিলা: এই ব্যাপারটি ভাবলে অনেক ভালো লাগছে। এতো বড় একটি আয়োজনে আমার ছবিটি গেছে, এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ব্যাপার। তবে আমাদের দেশের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া নিয়েই বেশি ভাবছি। তারা কীভাবে ছবিটিতে গ্রহণ করবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি। বড় পর্দায় কতোটা সফল হতে পারবো তা নির্ভর করছে দর্শকের ওপর।
বাংলানিউজ: বড় পর্দায় নিয়মিত অভিনয় করবেন?
নাবিলা: তা জানি না! আগে যেমন একেবারেই অভিনয়ের কথা আমার ভাবনায় আসতো না। এখন কিন্তু আমার মধ্যে অভিনয়ের প্রতি একটু একটু করে ভালোবাসা জন্মাচ্ছে। আবার মনের মতো গল্প পেলে অভিনয় করবো। হোক সেটা নাটক বা চলচ্চিত্র।
বাংলানিউজ: উপস্থাপিকা নাবিলাকে দর্শকরা বেশ কিছুদিন মিস করেছে...
নাবিলা: ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নতুন কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে পারিনি। তবে আবার আগের মতো করেই দর্শকদের সঙ্গে আছি। চ্যানেল আইয়ের ‘সেভেনআপ মিউজিক্যাল প্রিমিয়ার লীগ’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি। দর্শকরা আমাকে সবসময় উপস্থাপনায় পাবে। এটাই আমার ভালোলাগার জায়গা। এটা কখনও ছাড়তে চাই না।
বাংলানিউজ: সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করলেন..
নাবিলা: প্রায় দেড় বছর পর আবার বিজ্ঞাপনে কাজ করলাম। গত ২৯ জুলাই ঢাকার কোক স্টুডিওতে রবির নতুন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ হলো। এতে আছে একটি ভালোবাসার গল্প। আমার সঙ্গে মডেল হয়েছে ‘হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান’ এ.কে আজাদ আদর। এ ছাড়া আদনান আল রাজীবের নির্দেশনায় কাজ করলাম তিন বছর পর। শিগগিরই এটি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে। সবশেষ ধ্রুব হাসানের নির্দেশনায় ‘মেরিল লিপ কেয়ার’-এর একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলাম।
* ‘আয়নাবাজি’ ছবির আলু-পেয়াজের কাব্য গানের ভিডিও :
* ‘আয়নাবাজি’ ছবির ট্রেলার :
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ