ফুলের নামে মেয়েটি ছোটবেলা থেকে গাইতো, তাই আশেপাশের সবাই বলতো ‘তোমার নামটি ফুলের না হয়ে গানের কোকিল হলে মানাতো!’ সেই ফুলের নামে মেয়েটি হলেন কেয়া। পুরো নাম কেয়া রহমান।
সোলস ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান ‘হাজার বর্ষা রাত’-এর আ-কাপেলা সংস্করণে পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়ে আলোচিত হয়েছেন কেয়া। গত বছরের ডিসেম্বরে ইউটিউবে আসে এ ভিডিও। এটা দেখে তাকে নিয়ে অনেকের কৌতূহল জন্মে।
২০১২ সালের কথা ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় কেয়া অংশ নেওয়ার সময় পার্থ ছিলেন মূল তিন বিচারকের একজন। এখান থেকেই মূলত কেয়ার পরিচিতি। তিনি পৌঁছেছিলেন সেরা দশে।
এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই চার বছর আগে ঢাকায় আসেন কেয়া। কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন টাঙ্গাইলে। ২০১১ সালে ওপার বাংলার সংগীত প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ‘সারেগামাপা’য় অংশ নেন তিনি। এতে সেরা ৩৫ জনের মধ্যে ছিলো তার নাম।
ছোটবেলা থেকে মা-বাবার ইচ্ছায় গান শেখা শুরু করেন কেয়া। বেড়ে ওঠার সঙ্গে গান হয়ে উঠলো তার ধ্যান-জ্ঞান। শিখেছেন উচ্চাঙ্গসংগীত। অংশ নিয়েছিলেন বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’তে।
কেয়ার কয়েকটি মিশ্র অ্যালবাম বেরিয়েছে। এগুলো হলো ‘মেঘলা আকাশ’ এবং ‘কে’। এ ছাড়া ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে তার গাওয়া ‘নিশিদিন’ গানের মিউজিক ভিডিও রয়েছে ইউটিউবে। তিনি বললেন, ‘এ পর্যন্ত শুধু আধুনিক গান গাইলেও এবার পরিকল্পনা আছে ক্লাসিক্যাল ও লোকসংগীতের ফিউশন করবো। দেখা যাক, কতোটুকু করতে পারি। ’
গানের মেয়ে হিসেবে পরিচিতি এলেও কেয়ার সঙ্গে এখন অভিনয়শিল্পী পরিচয়টিও যুক্ত হয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে পরিচালক তানিম রহমান অংশু ‘সুপার গার্লস’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তাকে। অনুভূতিটা তখন কেমন ছিলো? তিনি বলেন, ‘আমি তো অবাক! অভিনয় করবো আমি? আমি হলাম গানের মেয়ে। তাই ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। ’
অংশু সাহস দিয়ে বললেন- ‘আরে তুই পারবি। ’ এ নাটকে কেয়ার চরিত্রটি হলো একজন কণ্ঠশিল্পীর। তাই না করতে পারলেন না। অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘তখন তো রীতিমতো হাত-পা কাঁপছিলো! কারণ কিছুই তো পারতাম না। অনেকে ছোটবেলায় স্কুল-কলেজে অভিনয় করে। আমার সেই অভিজ্ঞতাও নেই। একজন অভিনয়শিল্পীকে নিজেকে ভুলে অন্য একটি চরিত্রে কাজ করতে হয়। বিষয়টি অনেক কঠিন। অভিনয়ে এসে অনেক কিছু শিখেছি, এখনও শিখছি। নাটকে আমার সঙ্গে যারা ছিলেন সবাই অভিনয় জানেন, শুধু আমি জানতাম না। তাই আমার এক দৃশ্যের শট কয়েকবার দিতে হতো। তবে সবাই খুব সহযোগিতা করেছেন। ’
এর সূত্র ধরে গেলো রোজার ঈদে কয়েকটি নাটক ও টেলিছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এগুলো হলো তানিম রহমান অংশুর ‘দুই অংশের শেষ এখানেই’, ফরহাদ হোসেন পরিচালিত ‘চেয়েছো যখন’, রুবাইয়াত মাহমুদের ‘দ্য জার্নি’ এবং মাহমুদুর রহমান হিমির টেলিছবি ‘ফ্রেন্ডজ’।
ইদানীং সংগীতশিল্পীদের অনেকে অভিনয়ে এসেছেন। তাদের কারও অভিনয় দেখে কি অনুপ্রাণিত হয়েছেন কেয়া? তার ঝটপট উত্তর- ‘মূলত পার্থদাকে (পার্থ বড়ুয়া) দেখে অভিনয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। গান-অভিনয় সবক্ষেত্রে তিনিই আমার অনুপ্রেরণা। ’
গান থেকে অভিনয়ে, তা-ও আবার প্রতিদিন প্রচার হওয়া ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমে। কিছুটা ভয় কি লাগেনি? প্রশ্নটি শুনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কেয়া বললেন, ‘বরাবরই নিজের ওপর আস্থা রাখি। আমার মনে হয়েছে প্রথমে হিমশিম খেলেও অভিনয়টা ভালোভাবে করতে পারবো। ’
গান আর অভিনয়, কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন? কেয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটাই বা কী? তিনি বললেন, ‘গান করে যেতে চাই। শ্রোতারা যতোদিন আমাকে ভালোবাসবেন, আমার গান শুনতে চাইবেন, ততোদিন গাইতে চাই। আর গানের পাশাপাশি অভিনয় নিয়েও যেহেতু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি, তাই ছোট পর্দায় অভিনয় চালিয়ে যেতে চাই। পাশাপাশি কখনও যদি বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ আসে তাহলে না করবো না। ’
এ বছর শওকত আলী ইমনের সঙ্গে ‘বাজে ছেলে-দ্য লোফার’ ছবিতে ‘এসো মনের ঘরে’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন কেয়া। নিজেকে রূপালি পর্দায় দেখার স্বপ্নটাও যে পুষে রেখেছেন মনে, তা জানিয়ে দিলেন অকপটে। তিনি এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিষয়ে অনার্স পড়ছেন। গান আর অভিনয়ে ফুলের মতোই সুবাস ছড়াচ্ছেন কেয়া।
* ‘হাজার বর্ষা রাত’ গানের আ-কাপেলা সংস্করণের ভিডিও :
* ‘নিশিদিন’ গানের ভিডিও :
বাংলাদেশ সময় : ১৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৬
টিএস/জেএইচ