২৩ বছর ধরে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন অভিনেত্রী মৌসুমী। এ প্রজন্মের তরুণরাও এড়াতে পারে না তার সৌন্দর্য।
এবারের ঈদ উপলক্ষে নির্মিত দুটি টেলিছবি, একটি নাটক আর আলাপচারিতার অনুষ্ঠানে দেখা যাবে মৌসুমীকে। টেলিছবির মধ্যে ফারদীন এহসান স্বাধীন পরিচালিত ‘ডেস্টিনেশন টু’ চ্যানেল আইতে প্রচার হবে ঈদের পঞ্চম দিন দুপুর আড়াইটায়। একই চ্যানেলে ঈদের দিন সকালে দেখানো হয়েছে জেড এইচ মিন্টুর ‘মেঘের আড়ালে’।
ঈদের দিন রাত ১০টা ২০ মিনিটে এশিয়ান টিভিতে রয়েছে ফাহমিদা প্রেমা পরিচালিত নাটক ‘রেসিপি অব লাভ’। এ ছাড়া বৈশাখী টিভিতে ঈদের তৃতীয় দিন বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে থাকছে ‘নায়ক নায়িকা ভিলেন’ নামে আড্ডা অনুষ্ঠান। কাজ, সংসার, সন্তানসহ ব্যক্তিজীবন নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন মৌসুমী। ঈদ উপলক্ষে পড়ুন তার সাক্ষাৎকার-
বাংলানিউজ: সফল ক্যারিয়ারের সঙ্গে সংসার-সন্তান সামলেছেন দক্ষ হাতে, রেসিপিটা কী?
মৌসুমী: রেসিপিটা আসলে সবকিছুর সঙ্গে যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলা। পরিবার সামলাতে হয় সমঝোতার সঙ্গে। কাজের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় থেকে যায় যা পরিবারের ঊর্ধ্বে নয়, এগুলো খেয়াল রাখতে হয়।
![](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016March/bg/inner-120160912172859.jpg)
বাংলানিউজ: কাজের জায়গায় আপনি এখনও ব্যস্ত। সন্তানরা যখন ছোট ছিলো তখন আপনি আরও ব্যস্ত ছিলেন। সবকিছু সামলেছেন কীভাবে?
মৌসুমী: তখন আমার শাশুড়ি বেঁচে ছিলেন, আমার বাবা ছিলেন। তারা আমার সন্তানদের দেখতেন। এখনকার পরিস্থিতি সেই সময়ের মতো হলে হয়তো সামলানো সম্ভব হতো না।
বাংলানিউজ: আপনি ও আপনার স্বামী ওমর সানি একই অঙ্গনে আছেন। এর সুবিধা বা অসুবিধা কী?
মৌসুমী: যে কোনো নতুন কাজ হাতে এলে সানির কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারি। কাজটি ভালো হবে কি-না তা নিয়ে আলোচনা করি। আবার কোনো জায়গায় শুটিং করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে ফোন দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিজে না আসতে পারলেও সমাধান করে দেয়। আমার স্বামী অন্য পেশার হলে এই সুবিধাগুলো হয়তো পেতাম না। আবার কাজের জন্য কোথাও যাওয়ার দরকার হলে আমাকে নির্দ্বিধায় যেতে দেয়। কারণ সে মনে করে নিজের জায়গাতেই কাজ করতে পাঠাচ্ছে।
![](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/mousumi-inner20161005100222.jpg)
অসুবিধাও কিছু আছে। অনেক সময় সব কাজ করতে ইচ্ছে হয় না অথবা সবার কাজ সবসময় ভালো লাগে না। কিন্তু তারা সানিকে অনুরোধ জানায় আমি যেন কাজটি করি। এমন কিছু ব্যাপার ঘটে মাঝে মধ্যে। আর একটা ব্যাপার হলো, আমরা স্বামী-স্ত্রী হওয়ার কারণে পর্দায় আমাদের অন্য চরিত্র দেওয়া হয় না বা সুযোগ থাকে না। তখন মনে হয় আমার ভালো একজন সহ-অভিনেতাকে পেলাম না!
বাংলানিউজ: আপনি ও ওমর সানি দু’জনই ব্যস্ত। একসঙ্গে সময় কাটানো হয়?
মৌসুমী: আগে শিডিউল থেকে বের হয়ে দু’জন একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া কষ্ট হয়ে যেতো। এখন আর তেমন একটা হয় না। আমাদের অবসর সময় কাটে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে। দেশের বাইরেও যাই আমরা একসঙ্গে। আর অন্যান্য দিন আমাদের পোশাকের ব্যবসায় সময় দেই। রান্না করি। আড্ডা দেই। এভাবেই সময় চলে যায়।
বাংলানিউজ: ঈদের দিন কীভাবে কাটে?
মৌসুমী: ঈদ মানে তো খুশি আর আনন্দে ভরপুর একটি দিন। আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় যাই আমরা। আমাদের বাসায় আসেন তারা। রান্না করে খাওয়ানো, তাদেরকে সময় দেওয়া, এভাবেই কাটে ঈদ। তবে ছোটবেলার ঈদকে খুব মিস করি। নতুন জামাকাপড় নিয়ে যে হইচই শুরু করতাম, সেই আনন্দের কোনো তুলনা হয় না।
বাংলানিউজ: আপনার পুত্র স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নাম লিখিয়েছে। তাকে নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
মৌসুমী: ও পড়াশোনার পাশাপাশি পরিচালনা করেছে। এটা মা হিসেবে আমার গর্ব। কিন্তু আমি চাই, ও আগে পড়াশোনা ঠিকমতো করুক। সে সত্যিই যদি পরিচালক হতে চায় তাহলে বাবা-মা হিসেবে আমাদের যা করণীয় তা আমরা করবো। তবে যে কাজ-ই করুক না কেনো মনোযোগ দিয়ে করা উচিত।
![](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016March/bg/mousumi-220160912173046.jpg)
বাংলানিউজ: কন্যাকে নিয়ে আপনার কী ভাবনা?
মৌসুমী: আমার মেয়ে ফাইজা তো এখনও তেমন বড় হয়নি। তবে চেষ্টা করি ভালো একজন মানুষ তৈরি করার জন্য। ভালো কাজ করা বা সবার কাছে ভালো হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ভালো মানুষ হওয়া।
বাংলানিউজ: দেশীয় চলচ্চিত্রে মৌসুমী এক অন্যন্য নাম। ১৯৯৩ সাল থেকে আপনি এখন পর্যন্ত নায়িকাদের বেলায় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। এখন তো অনেক নতুন মুখ আসছে। নতুনদের নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বা মূল্যায়ন কী?
মৌসুমী: নতুন মুখ আসবেই। নতুনরা আসবে, পুরনোরা বিদায় নেবে। নতুনদের আমি সবসময় উৎসাহ দেই। যারা আসছে তারা ভালো কাজ করে। আরও ভালো করুক এই প্রত্যাশা করি।
![](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/mousumi-inner-120161005100410.jpg)
বাংলানিউজ: চিত্রনায়ক ও চিত্রনায়িকাদের কেউ কেউ এখন টিভি নাটকে কাজ করছেন। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মৌসুমী: আসলে ছোটপর্দার পরিচালকরা আমাদের নিয়ে কাজ করতে চায়। ছোটপর্দার যেসব পরিচালকদের বাজেট ভালো থাকে তারাই মূলত বড়পর্দার শিল্পীদের নিয়ে বেশি কাজ করেন। এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখি।
বাংলানিউজ: ২৩ বছর ধরে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করছেন। আর কতোদিন এই ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারবেন?
মৌসুমী: প্রথমত নায়িকা হিসেবে অভিনয় করার ইচ্ছে আছে আরও অনেকদিন। মানুষ জেনেশুনে বয়স বাড়াতে চায় না। আমিও চাই না। বড়পর্দার নায়িকারা কিছুটা দর্শকের ওপর নির্ভর করে। কারণ সিনেমা হলে গিয়ে দর্শক টাকা দিয়ে টিকেট কেটে তারপর দেখে। সিনেমার বাজেটের ব্যাপার থাকে। পরিচালক কাকে নিয়ে কাজ করবে সেটাও দেখার বিষয় থাকে। সব মিলিয়ে দর্শক চাহিদার পাশাপাশি অন্যদিকগুলোও খেয়াল রাখতে হয়।
বাংলানিউজ: এবার নিজেকে নিয়ে মূল্যায়ন করুন।
মৌসুমী: আমি আমার কাজ করে যাই। ভালো কাজ করতে পারলে ভালো লাগে। আমি মনে করি, ভালো কাজের মধ্যে মানুষের মনে থাকা যায়। আমার সমালোচনা করবেন দর্শকরা, যারা আমাকে ভালোবাসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৬
টিএস/জেএইচ