ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

মিনার রহমানের সঙ্গে কিছুক্ষণ

সাইকোলজি ধরতে না পারলে হবে না

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৭
সাইকোলজি ধরতে না পারলে হবে না মিনার রহমান/ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

৮ বছরের ক্যারিয়ার। উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু আলোচিত ও জনপ্রিয় গান। সবশেষ তার গাওয়া ‘ঝুম’ গানের ভিডিও ইউটিউবে স্পর্শ করলো কোটিবার দেখার গৌরব। মিনার রহমান নিজের গানের ধারা সৃষ্টিতে বিশ্বাসী, লড়ছেন সেই লক্ষ্যে। নিজের লেখা, সুর নিয়ে আত্মমগ্ন থাকতে চান এই তরুণ।

গান গাওয়ার পাশাপাশি ছবি আঁকাও চলছে সমানতালে। সংগীতশিল্পী পরিচয়টির মতোই মিনার গুরুত্ব দিতে চান কার্টুনিস্ট তকমাকেও।

বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে বাংলানিউজের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে উঠে এসেছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মিনার রহমানের জানা-অজানা অনেক বিষয়। পড়ুন তার সাক্ষাৎকার—

বাংলানিউজ: ২০০৮ সালে প্রথম অ্যালবাম বের করেছিলেন। ‘সাদা’সহ কিছু গান জনপ্রিয় হয়েছিলো। এখন কী মনে হয় যে, শুরুটা আরও পরেও করা যেত?
মিনার রহমান:
না। আমার কাছে তেমন মনে হয় না।

বাংলানিউজ: তখন আপনার বয়স কতো ছিলো?
মিনার:
১৭-১৮ বছর হবে।

বাংলানিউজ: এখন তো গান প্রকাশের মাধ্যম বদলে গেছে…
মিনার:
‘ডানপিটে’ অ্যালবামে সিডির জোয়ার আমি মোটামুটি পেয়েছি। ক্যাসেটের যুগ তখন শেষ। সিডি খুব ভালো চলতো। অনেকের কাছে গল্প শুনি সেসব দিনগুলোর। অ্যালবাম মানে হচ্ছে ১০টি গান থাকবে, একটি লঞ্চিং অনুষ্ঠান হবে, দোকানে দোকানে সিডি পাওয়া যাবে। এখন তো ডিজিটাল বেজড। বিশ্বব্যাপী এভাবেই গান প্রকাশ হচ্ছে। এখন অ্যালবাম তো হচ্ছে না, ইপি হচ্ছে। আরও পরিবর্তন হবে।

মিনার রহমান/ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: ভবিষ্যতে আর কোন উপায়ে গান প্রকাশ হবে বলে মনে হয়?
মিনার:
এই যে, মিউজিক অ্যাপগুলো হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি বড় জায়গা দখল করবে। অ্যাপগুলো যদিও গান শোনার জায়গা।

বাংলানিউজ: আজকাল গান মানুষের কানে পৌঁছানো সহজতর হয়েছে?
মিনার:
শোনার বেলায় এটা বেশ সহজতর। একটি সার্চ-ই যথেষ্ট। এখন ইউটিউব আপনাকে রিকমেন্ড করবে। ফেসবুকেও বার্তা পাবেন। আগে তো একটি অ্যালবামের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। এখন এই অপেক্ষাটা হয়তো অন্যরকম, কখন আসবে মিউজিক ভিডিও।

বাংলানিউজ: সহজেই শ্রোতাদের কানে গান পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে, সেই তুলনায় জনপ্রিয় হচ্ছে কী? আগের দিনে একই সময়ে একাধিক গায়কের গান জনপ্রিয় হতো…
মিনার:
গান আসলে মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়। এটা সব যুগের জন্য সত্যি। আমরা যখন ক্যাসেট বা সিডিতে গান শুনতাম, তখনও মুখে মুখে ফিরতো জনপ্রিয় গান। এখন হয়তো অনেক পুরনো দিনের গানের রেকর্ড পাওয়া যাবে না, কিন্তু মানুষের মুখে মুখে সেগুলো রয়ে গেছে, এটা সম্ভব হয়েছে ওই গানটির জনপ্রিয়তার কারণেই।

বাংলানিউজ: আপনার দৃষ্টিতে ‘ঝুম’ কতোটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে?
মিনার:
‘ঝুম’ আরও জনপ্রিয় হবে, সামনে। মাত্র যাত্রাটা শুরু করেছে। গানটি যে জায়গা থেকে তৈরি করেছি, ‘ঝুম’-এর তো কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই, এটা একটা এক্সপ্রেশন। লেখার সময় আমি একটি মাত্র শব্দে সব অনুভূতি প্রকাশ করতে চেয়েছি।

বাংলানিউজ: যেমন? কী কী অনুভূতির সম্মিলন আছে ‘ঝুম’-এ?
মিনার:
আক্ষেপ, অনুশোচনা, প্রতিবাদ— এইসব।

মিনার রহমান/ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: কিন্তু গানটি রোমান্টিক, কথা বা চিত্রায়ণ দেখে তাই মনে হয়…
মিনার:
না, এটা একটি উপলব্ধির গান।

বাংলানিউজ: রোমান্টিক নয়?
মিনার:
এটা উপলব্ধির গান, পাশাপাশি রোমান্টিক গানও। ধরেন যে, লিরিকটা এ রকম, ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে এক মেঘে ঢাকা দিনে/ কেন আমি দেইনি সাড়া’, এখানে ‘কেন আমি দেইনি সাড়া’র আক্ষেপটাই একটি উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায়। আমার মনে হয়, গানটির এক্সপেরিমেন্ট দর্শক-শ্রোতা পছন্দ করেছেন। এটি বেশ ইতিবাচক ব্যাপার। একই চিন্তার জায়গা থেকে ‘তা জানি না’ নামের একটি গান  করেছি।  ‘ঝুম’-এর পর নতুন কিছু হবে হয়তো এটি। আজকালের মধ্যে এর ভিডিও প্রকাশ হবে গানচিল থেকে।

বাংলানিউজ: গানে তো আপনি কিছুদিনের বিরতি নিয়েছিলেন? মানে কাজে সেভাবে পাওয়া যায়নি…
মিনার:
তিন বছরের মতো। ‘আহারে’ অ্যালবামের আগে। তবে কাজ থেকে দুরে ছিলাম না। বেছে বেছে কাজ করেছি। ওই সময় আমি কিছু নাটকের গান করি। ‘ইম্পসিবল ৫’-এর সাউনন্ডট্র্যাক করেছিলাম। শিহাব শাহীনের কিছু নাটকের সাউন্ডট্র্যাক করেছি। আর ‘আহারে’-এর গানগুলো বানিয়েছিলাম তখন।

বাংলানিউজ: নিজের গান নিয়ে আপনার ভাবনা কেমন?
মিনার:
সত্যি বলতে, আমি সবসময় চেয়েছি আমার নিজের গানগুলোকে কমার্শিয়াল করতে। আমার মনে হচ্ছিলো, ‘ডানপিটে’ ও ‘আড়ি’র পর তৃতীয় অ্যালবামে একই রকম গান করলে শ্রোতারা নেবেন না। তাই ‘আহারে’ প্রায় দেড় বছর সময় নিয়ে তৈরি করেছি। ওই সময়টাতে আমি প্রচুর ছবি এঁকেছি। ছোট স্কেচবুকের ছবি নয়। ১৬ বাই ১৬ ক্যানভাসে ছবি এঁকেছি। এর মধ্যে আছে পেন স্কেচ, প্যাস্টেল, অনেক কিছু। সত্যি বলতে, নিজেকে ভাঙার সময়টা নিয়েছিলাম। এ কারণেই লক্ষ করবেন যে, ‘আহারে’র লিরিক সম্পূর্ণ আলাদা, আগেরগুলোর সঙ্গে মিল নেই। আবার এটার পর ‘ঝুম’-এর জন্য এক বছর অপেক্ষা করেছি। আমার মনে হয় বিরতি না নিলে, স্টেড অব মাইন্ড না হলে, নতুন বিগ হিট দেওয়া সম্ভব নয়…  
 
মিনার রহমান/ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: ‘ঝুম’ জনপ্রিয় হবে, বুঝতে পেরেছিলেন?
মিনার:
হুমম। তেমন একটা লক্ষণ ছিলো। কারণ ‘ঝুম’ যে ধরনের সুর, মানে সুরটার মধ্যে একটা বিশেষ কিছু ছিলো বলেই রিলিজ করেছিলাম। তখন অবশ্য আমার কাছে আরও কিছু সুর করা গান ছিলো, ওগুলো তো ছাড়িনি! এখন মনে হয়, এটা জনপ্রিয় হবে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলাম।  
 
বাংলানিউজ: গান হিট হচ্ছে ভালো কথা। শিল্পী বা গানের সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে কতোটুক উপকৃত হচ্ছেন?
মিনার:
ডিজিটাল ‍উপায়ে গান প্রকাশের বিষয়টি এখনও ‘অন গোয়িং প্রসেস’। এটা ঠিক হতে সময় লাগবে। এগুলো এখন আমাদের ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি। একটি গান তৈরিতে বেশ অর্থ খরচ হয়, কোয়ালিটি ধরে রাখার জন্য। একেক সময় একেক ধরনের লেনদেন করতে হচ্ছে। এটা অনেক সময় নির্ভর করে কার সঙ্গে শিল্পী কাজ করছেন।

বাংলানিউজ: এখনকার গান কেমন হচ্ছে?
মিনার:
খুব ভালো হচ্ছে। মানুষ বাংলাদেশের গান শুনছে। এটার প্রমাণ ইমরানের গানের ভিউ। যদিও আমি কোনো শিল্পী বা তার কাজকে ফেসবুক-ইউটিউব দিয়ে বিচার করিনা। তবে এটা ঠিক যে, এগুলো সাহায্য করে জরিপ করতে। ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ কিংবা ‘ঝুম’ কোটি পেরিয়েছে, আরও কিছু গান আসছে। এগুলো কী প্রমাণ করে না মানুষ বাংলা গান শুনছে?

মিনার রহমান/ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: এখন তো নানা রকম মিউজিক ভিডিও হচ্ছে। সেখানেও চলছে নিরীক্ষা। কোনো কোনো শিল্পী অভিনয় বা পারফরমেন্স নিয়ে আসছেন। এটাকে কীভাবে দেখেন? এখন বিষয় এমন দাঁড়িয়েছে যে, মিউজিক ভিডিও ছাড়া ভালো গান করে লাভ নেই।  
মিনার:
আমার তো উল্টো মনে হয় যে, ভালো গান না হলে মিউজিক ভিডিও করে লাভ নেই (হা হা হা)। হ্যা, এটা ঠিক যে, মিউজিক ভিডিও একটি বড় মাধ্যম গানকে শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

বাংলানিউজ: যুগে যুগে শ্রোতাদের রুচির পরিবর্তন হয়। এই দেশের শ্রোতাদের কী অবস্থা?
মিনার:
রুচি আরও বদলাবে। কারণ এখন বিশ্বায়নের যুগ। যে কেউ যখন তখন যেটা ইচ্ছে শুনতে পারছে। এটা চ্যালেঞ্জিং একটা সময়। শিল্পীদের গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে গান তৈরি করতে হচ্ছে। কমপক্ষে ভারতের স্ট্যান্ডার্ডটা মানতে হচ্ছে…

বাংলানিউজ: ভারতের স্ট্যান্ডার্ড মানে বলিউডের গান?
মিনার:
বলিউডের গান মানে, ওদের সাউন্ড কোয়ালিটির কথা বলছি।

বাংলানিউজ: অন্য প্রসঙ্গে আসি, ভক্তদের নিয়ে মজার কোনো অভিজ্ঞতা?  
মিনার:
মজার অভিজ্ঞতা একটাই, সব সময়ের জন্য, সেটা হলো লাইভে বা কনসার্টে আমার গানগুলো আমাকে গাইতে হয় না, ভক্তরাই গায়।    

মিনার রহমান/ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: এটা কী সারাদেশের চিত্র?
মিনার:
আমি যেসব জায়গায় গান করি…  

বাংলানিউজ: সেটা তো শহরকেন্দ্রিক বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক?
মিনার:
গ্রাম অঞ্চলের কনসার্টে আমার যাওয়া হয়নি। ইদানীং প্রস্তাব পাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে, আমার গানগুলো আস্তে আস্তে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। কিছুদিন আগে আমি লক্ষ করলাম, ইট ভাঙার কাজ করছেন একজন শ্রমিক, তার লুঙ্গির গিঁটে মোবাইলে ‘আহারে’ বাজছে। আবার সেদিন খেয়ল করলাম, সিএনজিওয়ালার মোবাইল রিংটোনে বেজে উঠেছে ‘আহারে আহারে কোথায় পাবো তাহারে…’।

বাংলানিউজ: এতে কী বোঝা যায়?
মিনার:
এই লাইনগুলো কিন্তু এক্সপ্রেশন। পুরো গানটি ভুলে গেলেও এটুকু আপনার মনে থাকবে। এটাকে বলা হয়,  একটি গানের ইউএসপি বা ইউনিক সেলিং পয়েন্ট। বিরতির সময়টাতে আমি এসব নিয়ে ভেবেছি। এগুলো আমি বেশ চিন্তা করে তৈরি করেছি। আমার প্রায়ই মনে হয়, আমি যদি সমসাময়িক মানুষের সাইকোলজি ধরতে না পারি তাহলে কাজ হবে না।

বাংলাদেশ নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মিনার:
আপনাকে ও বাংলানিউজকে ধন্যবাদ।

* বাংলানিউজের পাঠকের জন্য গাইলেন মিনার: 

* মিনার-এর গাওয়া ‘ঝুম’: 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭
এসও

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ