সময়ের আলোচিত সংগীতশিল্পী রেহান। ‘বাজে স্বভাব’ শিরোনামের গান দিয়ে দেশব্যাপী সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।
বাংলানিউজ: সাম্প্রতিক ব্যস্ততা, নতুন গানের খবরাখবর সম্পর্কে জানতে চাই।
রেহান: বেশ কিছুদিন কাজ থেকে দূরে ছিলাম। গত ৮ জানুয়ারি আমার মাকে হারিয়েছি। চারদিকে শূন্যতা। ভেতরটা খালি। তাই, একটু নিজের মত সময় কাটাচ্ছি। তারপরও তো আর থেমে থাকলে হবে না, কাজ করতেই হবে। সেই চিন্তা থেকে মহান বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর) এ.এন.এইচ লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৬ লাইনের বিজয়ের গান করলাম।
এছাড়া সদ্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী কণ্ঠশিল্পী ঐশীর সঙ্গে একটি ডুয়েট গান করেছি। পাশাপাশি শ্রদ্ধেয় গীতিকবি কবির বকুল’র কথা-সুরে ‘খুব করে চাই’ শিরোনামে একটি গান চলতি মাসেই মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। দুটি গানেরই সংগীতায়োজন করেছেন প্রিয় সাজিদ সরকার।
বাংলানিউজ: সংগীতশিল্পী হিসেবে এরই মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি গত বছর লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। শুনেছি, এ বছরও আপনার লেখা দুটি বই প্রকাশ পাচ্ছে। লেখালেখিটা কি নিয়মিতই করতে চান?
রেহান: হ্যাঁ, এবার আমার দুটি বই প্রকাশ পাচ্ছে। এর মধ্যে ‘শঙ্কিত স্বর্গে’ নামে আমার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ পাচ্ছে বর্ষাদুপুর প্রকাশনী থেকে। অন্যদিকে, আমার প্রথম কবিতার বই ‘কালো রঙের কবিতা’ প্রকাশ পাচ্ছে আজব প্রকাশনী থেকে। আর গত বছর প্রকাশ পেয়েছিল আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘গল্পের বই’। গল্পের এই বইটিও প্রকাশ করেছিল বর্ষাদুপুর। গানের পাশাপাশি লেখালেখিটাও চালিয়ে যেতে চাই।
বাংলানিউজ: এখন পর্যন্ত আপনার প্রকাশিত গানের সংখ্যা কত? এর মধ্যে অধিক প্রশংসিত ৫টি গান সম্পর্কে পাঠকদের জানাবেন!
রেহান: এখন পর্যন্ত আমার ১৭টা গান প্রকাশ পেয়েছে। অবশ্য সবগুলো ভিডিও আকারে নয়। এর মধ্যে প্রশংসিত গানের শুরুতেই বলতে চাই ‘বাজে স্বভাব’ গানটির কথা। এটিই আমার প্রথম জনপ্রিয় গান। এই গানের জন্য এখনও করতালি পাই। এছাড়া নাভেদের সুরে মাহমুদ মনজুরের কথায় ‘ফেরাতে পারিনি’, বেলাল খানের সুরে ও লিমনের কথায় ‘ক্ষতি’, দেবজিতের কথা ও সুরে গণ্ডি সিনেমার জন্য আমার প্রথম ও একমাত্র প্লেব্যাক ‘ভুলের গান’, আলভি ভাইয়ের সুরে, লিমনের কথায় ‘পরাজয়’, জয় শাহরিয়ারের কথা ও সুরে ‘অনাগত’, আমার নিজের লেখা ও সুরে ‘লকডাউন লাভার’ শিরোনামের গানগুলো শ্রোতারা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন।
বাংলানিউজ: আজকাল তো নাটকে সিনেমার মতো গান প্রায় বাধ্যতামূলকই হয়ে গেছে। তো, এখন পর্যন্ত কয়টি নাটকে গান করেছেন বা সম্প্রতি কোনও নাটকের জন্য গেয়েছেন?
রেহান: নাটকে গানটা বাধ্যতামূলক হওয়াতে ভালোই হয়েছে। গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়ক-গায়িকা সবার জন্য নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। আমি নিজেও ৫টি নাটকে গান করেছি। ‘ফেরাতে পারিনি’ গানটি শ্রোতাদের ভালোবাসায় ১২ মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়ে গেছে। আর ‘খুব করে চাই’ গানটিও শিগগিরই একটি নাটকের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসছে।
বাংলানিউজ: সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ উপলক্ষে নতুন কোনও গান আসছে?
রেহান: ভালোবাসা দিবসে ‘অন্যরকম খুন’ নামে আমার নিজের কথা-সুরে একটি গান প্রকাশের ইচ্ছে আছে। আজব রেকর্ডস থেকে জয় শাহরিয়ারের সংগীতায়োজনে গানটির অডিও হয়ে গেছে। শুধু বাকি ভিডিও। আর একটা গান আছে ‘এই রাত’ শিরোনামে। এটি আমি ও আমার বন্ধু মাহমুদ মিলে ডুয়েট করছি। কথা-সুর মাহমুদ ও হাবিবের। কম্পোজ করছেন সামি।
বাংলানিউজ: সংগীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছে জাগে কখন?
রেহান: খুব ছোট বেলায় বড় বোনের গান গাওয়া ও শেখা দেখে অনুপ্রাণিত হই। তারপর মায়ের আঁচলের নিচে থেকে চলে শেখার চেষ্টা। প্রতিদিন অন্তত ৩ ঘণ্টা রেওয়াজ করার চেষ্টা করি। দেশ ও বিদেশের বড় বড় শিল্পীদের গান থেকে শিখি। একটা বাজে স্বভাব জনপ্রিয়তা পাওয়ার ২০ বছর আগে থেকে আমার গান শেখা চলছে, চলবে আমৃত্যু।
বাংলানিউজ: আপনার ব্যাপক আলোচিত গান ‘বাজে স্বভাব’ তৈরি গল্পটা শুনতে চাই!
রেহান: গল্পে পৃথ্বীরাজ নামের এক রাজকুমার ছিল। সেই রাজকুমার এক দিন সামান্য একটা রেহান কে বলেছিল, ভাই চলেন একটা গান করি! আমিও রাজি হলাম! ক্লাসিক্যাল গানের রাজকুমার বলে কথা! তখন আমার নিজের কথা-সুরে ‘বাজে স্বভাব’ গানের ডেমো রেকর্ড দিলাম তাকে। পৃথ্বীরাজ তার অসাধারণ জ্ঞান আর আবেগ দিয়ে গানটির সংগীতায়োজন করলেন। এখন গানটির ভিউ প্রায় ২৯ মিলিয়ন। কিন্তু রাজকুমার রাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯- এ মৃত্যুবরণ করেন পৃথ্বীরাজ।
বাংলানিউজ: সংগীত নিয়ে আপনার পরিকল্পনা?
রেহান: আমার সকল পরিকল্পনা সংগীত নিয়েই। মা চলে যাওয়ার পর আমার সংগীতসংক্রান্ত অনেক স্বপ্নই এখন অহেতুক মনে হয়। তবুও গান আমি করে যাবো। কারণ, আমার মা নিজেও ছিলেন তার এই পচা ছেলের গানের অনুরাগী।
বাংলানিউজ: আপনার জন্ম, গানের হাতেখড়ি, পড়াশোনা এবং পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন।
রেহান: জন্ম ঢাকাতেই। গানের হাতেখড়ি বুলবুল ললিত কলা একাডেমিতে। শাস্ত্রীয় সংগীতে বাফা আন্তঃশাখা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলাম আমার তৎকালীন গানগুরু প্রদীপ সরকার স্যারের দীক্ষায়। পড়াশোনায় আমি বড়ই ‘ফেলটু টাইপ’ ছিলাম। তাই কাউকে বলি না- আমি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাবজেক্টে স্নাতক করেছি। আর পরিবার বলতে মা-বাবা, চার বোন, তিন ভাগ্নি ও দুই ভাগ্নে এবং দুলা ভাইয়েরা তো আছেনই। আমি সবার ছোট। দুই বোন দেশের বাইরে থাকেন, দুই বোন দেশে। বাবা মারা গেছেন ২০১৭ সালে আর মা চলে গেলেন ২০২১ সালে। এই তো জীবন..।
বাংলানিউজ: এবার প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে সম্পর্কে ভক্ত-অনুরাগীদের অবগত করবেন না?
রেহান: হাহাহা..! অবগত করার মত কিছু নেই। আজও কারও সঙ্গে একটা প্রেম ঠিকঠাক মত করতে পারলাম না ভাই। বেশ কয়েকজনের সঙ্গেই প্রেম হয়েছে এবং তাদেরই ইচ্ছায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে! কি আর বলবো ভাই, আমার বাজে স্বভাব আমি বার বার ছ্যাঁকা খাই। তবে, প্রতিটি ছ্যাঁকা আমাকে প্রচুর কবিতা ও গান দিয়ে যায়! এটাই শেষ সান্ত্বনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
ওএফবি