মাদ্রিদ (স্পেন) থেকে: কেনাকাটা করতে গিয়ে যেখানে ক্রেতারা খোঁজাখুঁজি করেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, এমন একটি দেশ স্পেন। বাংলাদেশের রফতানি ও বিনিয়োগ বাণিজ্যের জন্যে সম্ভাবনাময় দেশটির ক্রেতাদের কাছে পোশাক ব্র্যান্ড মানেই বাংলাদেশ।
দেশটির রাজধানী মাদ্রিদে জারা, এইচঅ্যান্ডএম ও সিঅ্যান্ডএসহ বেশ কয়েকটি বিখ্যাত কাপড়ের দোকান ঘুরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারের জন্যে স্পেন যে এই মুহূর্তের একটি সম্ভাবনাময় নাম সেটি বুঝা গেলো।
ফ্যাশন হাউজ ‘জারা’র একজন বিক্রয়কর্মী যখন জানতে পারেন আমি বাংলাদেশি, ঠিক তখনই বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে তার গল্পের ঝাঁপি খুলে ধরেন।
বলতে শুরু করেন, স্পেনের ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জনপ্রিয়তার কথা। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শ্রমিকরা যে খুব একটা ভালো নেই সেটিও বলতে ভুলেননি তিনি।
২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসের কথা এখনও ভুলতে পারেন না এই বিক্রয়কর্মী। বললেন,‘দুর্ঘটনা কবলিত ওইসব শ্রমিকের দক্ষতাই বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব পোশাক বাজারের অন্যতম আইকন হিসেবে তুলে ধরছে। ’
গল্পের এক পর্যায়ে বাংলাদেশের তৈরি একটি সাদা গেঞ্জি হাতে নিয়ে বাংলানিউজের ক্যামেরার সামনে পোজও দিলেন তিনি।
শুধু পোশাকই নয়, স্পেন এখন বাংলাদেশের আরও অনেক পণ্যের রফতানি বাজার।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে স্পেনে বাংলাদেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ১৪৭০.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯শতাংশ বেশি।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই জানালেন মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মো. সাখাওয়াত হোসেইন।
বর্তমানে রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য থাকায় তিনিই চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিউনিটি বান্ধব তরুণ এই কূটনীতিক মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাসে তার অফিসে বসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালের রফতানি বাণিজ্যের ৯৫শতাংশই পোশাক খাত থেকে আয় করেছে বাংলাদেশ। বাকি ৫শতাংশ লেদার, লাইটিং ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্ট থেকে।
‘পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশের লেদার, লাইটিং ও ইঞ্জিনিয়ারি প্রোডাক্টের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে স্পেনে। পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এই মুহূর্তে চতুর্থ,’ জানালেন সাখাওয়াত হোসেইন।
তিনি বলেন, শুধু রফতানি বাণিজ্য নয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগেও স্পেনের বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। স্প্যানিশ কোম্পানি টিএসকে (TSK) ও ইসোলাক্স (ISOLUX) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একহাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এরইমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।
এছাড়া আরেকটি কোম্পানি তামওইন (TAMOIN) পাওয়ার সার্ভিস ইসোলাক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নামে বাংলাদেশে তাদের একটি অফিস স্থাপনে পিডিবি‘র সঙ্গে একটি অস্থায়ী চুক্তি করেছে বলেন জানান এই কূটনীতিক।
সাখাওয়াত হোসেইন জানান, তামওইন খুলনায় ১৫০ মেগাওয়াট ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াটের আরও দু’টো যৌথ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করবে। প্রজেক্টে কাজ করবেন এমন ২৭ বাংলাদেশি প্রকৌশলীকে স্পেনে নিজেদের খরচে এনে ইতোমধ্যে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ নিয়ে স্পেনের আগ্রহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ব্যাপক আগ্রহের কারণেই স্পেন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা দিতে এখান থেকে শিক্ষক পাঠিয়েছে।
গত ২৮ থেকে ৩০ মার্চ স্পেনের ফরেন সেক্রেটারির বাংলাদেশ সফর দুই দেশের পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেরই প্রতিফলন বলেও মনে করেন সাখাওয়াত হোসেইন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
এমএ