মাদ্রিদ (স্পেন) থেকে: ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮শ’ ৪৫ বর্গমাইল আয়তনের দেশ স্পেনের মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার ৭শ’ ৬০ জন।
২০১০ সালের হিসেবে অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশই অভিবাসী জনগোষ্ঠি।
স্পেনের মূলধারার রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে এই অভিবাসী জনগোষ্ঠি খুব একটা সক্রিয় না থাকলেও বিরোধী দল বামপন্থি স্পেনিশ স্যোশালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিএসওই’র (Partido Socialista Obrero Español, PSOE) প্রতিই তাদের সমর্থন বেশি। এ সমর্থনের দিক থেকে দেশটির ছোট্ট অভিবাসী কমিউনিটি বাংলাদেশিদের সমর্থন প্রায় শতভাগই পিএসওই’র দিকে। আনুমানিক হিসেব মতে স্পেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বর্তমান সংখ্যা ২০/২৫ হাজারের মতো হলেও ২০০৭ সালে স্পেন সরকারের হিসেব মতে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪শ’ ৮০ জন।
৮ বছরের ব্যবধানে ২০/২৫ হাজারে উন্নীত হওয়া এই জনগোষ্ঠি আগামী ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থক নির্বিশেষে সবাই এখন পিএসওই’র পক্ষে একাট্টা।
অভিবাসীদের মতে বর্তমান ক্ষমতাসীন ডানপন্থি দল পিপলস পার্টি বা পিপি (Partido Popular, PP) অভিবাসী কমিউনিটির প্রতি বর্ণ বৈষম্যহীন নয়। এক্ষেত্রে বিদেশিদের প্রতি আন্তরিক বর্তমান বিরোধী দল স্যোশালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি (পিএসওই)। আর তাই পুরো অভিবাসী কমিউনিটিই আগামী নির্বাচনে স্পেনিশ পিএসওই’র পক্ষে এখন থেকেই ক্যাম্পেইন শুরু করে দিয়েছেন।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল পিপি ২০১১ সালে ৩৫০ আসনের পার্লামেন্টে ১৮৫ আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে এবং তৎকালীন সরকারি দল পিএসওই মোট ১১০ আসন পেয়ে ওই সময় ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে।
স্পেনের মূলধারার রাজনীতির খোঁজ-খবর রাখেন এমন একজন ব্যক্তি এস এম রবিন। যিনি স্পেন আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। তিনি বললেন, অভিবাসীদের নিয়েই পিএসওই স্পেনকে এগিয়ে নিতে চায়। অভিবাসীদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায়ও অংশিদারিত্ব নেয় এই পার্টি। আর তাই স্বাভাবিক কারনেই পিএসওই’র প্রতি অভিবাসীদের সমর্থন।
একই অভিমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রিজভী আলম, আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. জসিম উদ্দিন, এস এম আখতারুজ্জামান, সাখাওয়াত হোসেইন বাবলু, প্রবীণ সাংবাদিক একেএম জহিরুল আলম ও সাংবাদিক বকুল খানের। তারা জানান, শুধু বাংলাদেশিই নয়, স্পেনের সব অভিবাসী কমিউনিটিই আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনের অপেক্ষায়, যে নির্বাচনে তারা প্রচারাভিযানে নামবেন পিএসওই’র পক্ষে।
স্পেনে বাংলাদেশির সংখ্যা আনুমানিক ২০/২৫ হাজার হলেও সবাই এখনও বৈধ কাগজপত্র পাননি- এমনটি জানিয়ে স্পেন আওয়ামী লীগ নেতা রিজভী আলম বাংলানিউজকে বলেন, বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও খুব একটা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয় না অবৈধ অভিবাসীদের। আর তাইতো ব্রিটেনের কঠোর ইমিগ্রেশন রেইডের কারণে অনেক স্টুডেন্টই চলে আসেন স্পেনে। এখানে এসে তারা বিলাসী লাইফ স্টাইল না পেলেও ব্রিটেনের মতো টেনশন ও ভয়ে বেড়ান না।
রিজভী বলেন, বৈধ-অবৈধ অভিবাসী নিয়েই স্পেনে আমাদের পথচলা। আর এ পথচলায় ভরসা হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়ায় পিএসওই। আমরা তাদের ভুলি কিভাবে?
রাজধানী মাদ্রিদেই শুধু নয়, মাদ্রিদের বাইরে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যেও জনপ্রিয় পিএসওই। তরুণ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ফারুক এমনই একজন। একের অধিক টার্কিস রেস্টুরেন্টের মালিক হিসেবে ভালো অবস্থানেই আছেন ফারুক। মাদ্রিদ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের একটি শহরে তার রেস্টুরেন্টে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যান বাংলানিউজের এ প্রতিবেদককে।
রেস্টুরেন্টটিতে ৮ জন কর্মচারী কাজ করছেন যাদের অধিকাংশই তুরস্কের নাগরিক। মাত্র ৭/৮ বছরের বসবাসের সময়েই ফারুক এখন মাদ্রিদের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িত আছেন তিনি, পাশাপাশি মূল ধারার রাজনীতিতে সমর্থন করেন স্পেনিশ স্যোশালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিএসওই)। তারও একই কথা, পিএসওই ইমিগ্রেন্টবান্ধব রাজনৈতিক দল। এ দল ক্ষমতায় এলে ইমিগ্রেন্টদেরই লাভ।
১৯৭৫ সালে রাজা ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর ১৯৭৭ সাল থেকে স্পেনে চালু হয় গণতান্ত্রিক শাসন। ১৯৭৭ সালে স্পেনের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ১৯৭৮ সালে রচিত হয় সংবিধান। সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার বিধান রেখে দেশটিকে সামাজিক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয় সংবিধানে। রাজা দেশটির প্রতীকী প্রধান হলেও সংবিধান অনুযায়ী তার কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, যা অনেকটা ব্রিটেনের রানীর মতো। পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন রাজা, যাকে সংবিধান অনুযায়ী বলা হয় ‘প্রেসিডেন্ট অব দ্য গভর্নমেন্ট’।
প্রতি ৪ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালা বদল হয় স্পেনে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ হলেও ১৯৯০ সাল থেকে মূলত প্রধান দুটো দল স্পেনিশ স্যোশাল ওয়ার্কার্স পার্টি (পিএসওই) এবং পিপলস পার্টি (পিপি) শাসন করে আসছে দেশটি। ১৯৭৭ সালে গণতান্ত্রিক শাসনে প্রবেশের পর থেকে এখন পর্যন্ত স্পেনে কোনো কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়নি। নির্বাচনে কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকার দিয়েই ১৯৭৭ সাল থেকে শাসিত হয়ে আসছে দেশটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
এএসআর