ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঠিক ধারণা দেওয়া। বাংলাদেশি পণ্যের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কুইন সিরিকিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০১৬ সে সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। দু’দেশের মধ্যকার গত ৪৪ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ এক্সপোতে বাংলাদেশকে যেন নতুন করে চিনেছে থাইল্যান্ড।
রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ‘জ্বলে উঠেই আবার নিভে যাওয়ার মতো’ যাতে না হয় সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘শুরুটা যেভাবে হয়েছে, প্রতি বছর যেন সেভাবেই এ আয়োজন অব্যাহত থাকে’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাট এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানিকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান টিডিকে বাংলাদেশ লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘থাইল্যান্ডে পাটজাত পণ্য ও চামড়ার পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমরা সবেমাত্র এ দেশের বাজারে এলাম। বলা যায়, পা ফেললাম। এখন রাস্তাঘাট খুঁজে বের করবো’।
তবে এ বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে অধিক শুল্ককে প্রধান প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনাই পারে তা দূর করতে। সে আলোচনা যেমন চালাতে হবে, তেমনি এ প্লাটফর্মটাকেও ধরে রাখতে হবে’।
মেলাটির সার্বিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ আয়োজন অনেকটাই সফল এবং সফল হতেই হবে। একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছি আমরা, যেন থাই বিনিয়োগকারী, বিক্রেতা ও ক্রেতারা এখানে আসতে পারেন’।
বাংলাদেশের পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার বিশেষ সুযোগও সেখানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন সেক্টর, যেমন- তৈরি পোশাক খাত, ফার্মাসিটিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চা, চামড়া, সিরামিকস, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, জ্বালানি ও টেলিকম সেক্টরের বিশেষ প্যানেল আলোচনা ও বিজনেস টু বিজনেস আলোচনার ব্যবস্থা করেছি। এর মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দু’টোই বাড়াতে চাই’।
তিনি বলেন, ‘থাইরা বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে জানতে পারছেন। এর আগে থাই ব্যবসায়ীদের সংগঠন থাই চেম্বার অব কমার্সে গিয়ে রাষ্ট্রদূত হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছি, তথ্য দিয়েছি’।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজ এখানে (বাংলাদেশ এক্সপো-তে) ৫৫টি কোম্পানি আছে। দেশের ১০টি শীর্ষ কোম্পানির সিইও এখানে প্রেজেন্টেশন দিতে এসেছেন। থাই ব্যবসায়ী নেতারাও এখানে এই তিনদিন ধরে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তারা ফিরে গিয়ে একবার ভেবে দেখবেন-বাংলাদেশ কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করা যায়’।
সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘প্রথম দিনের আলোচনায় রাজনৈতিক সদিচ্ছাও তৈরি হয়েছিল। থাই বাণিজ্যমন্ত্রী, টেলিকমমন্ত্রীসহ প্যানেলে অংশ নেওয়া অন্যান্য মন্ত্রীরা বলে গেছেন- বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা উচিত। আমরা বলার আগে তারা বলেছেন। রাজনৈতিক এ অ্যাকনলেজমেন্টটা সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল’।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা দু’দেশের অনেক কিছুর মিলন ঘটায়। বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৬ তেমনই একটি আয়োজন’।
‘এছাড়া ব্যবসায়িক লেভেলে যা যা সুবিধা চাওয়া প্রয়োজন তা আমরা থাই সরকারের কাছে চেয়েছি’।
এটা আরো বিস্তৃত করতে কূটনৈতিক সদিচ্ছা থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করে সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, কূটনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই একটি দেশ অন্য একটি দেশকে প্রাগ্রাধিকার দেয়।
আর এক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের কোনো প্রাগ্রাধিকারের তালিকায় বাংলাদেশ নেই জানিয়ে রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘আমাদের (বাংলা-থাই) মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো, কিন্তু আরো প্রয়োজন। এর জন্য এক্সট্রা অর্ডিনারি সদিচ্ছা প্রয়োজন। সেটা থাকলে একটা দেশ আরো বাড়িয়ে কিছু দিতে চায়। সেই জায়গাটা তৈরির চেষ্টা করছি’।
এ প্লাটফর্মটিতে নিয়মিত ফলো-আপ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বাংলানিউজকে বলেন, ‘কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন দু’দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল’।
জানা যায়, এখন বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পোর্ট অব ব্যাংকক পোর্টে আসতে যেখানে ১৫-২০ দিন লাগে, সেখানে সরাসরি জাহাজ চালু হলে লাগবে ৪-৭ দিন। যেখানে পরিবহন মূল্য অনেক কমে যাবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘থাইল্যান্ড আমাদেরকে প্রায় ৬ হাজার পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। তবুও আমরা যেগুলোতে ভালো, সেগুলোর সব এ তালিকায় নেই। কিছু মিসিং রয়েছে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেগুলোকে এ শুল্কমুক্ত তালিকায় আনতে হবে’।
এর জন্য এ বছর অনুষ্ঠিতব্য দু’দেশের যৌথ কমিশন ও যৌথ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আমাদের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ও চলমান বৈঠকে থাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা বাড়াতে যে ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৬
জেপি/এএসআর